রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

জিম্বাবুয়েকে টপকালো বাংলাদেশ

49257_lead

 

অনেক সাধনায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। টেস্ট মর্যাদায় এক ধাপ উন্নতি। ১০ থেকে ৯-এ উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল খুলনায় টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে মুশফিক বাহিনী। তিন টেস্টের সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়া আর সেই সঙ্গে আইসিসি’র তালিকায় জিম্বাবুয়েকে টপকানো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি’র টেস্ট খেলুড়ে ১০ দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০-এ। টেস্ট খেলার স্বীকৃতিও বাংলাদেশ পেয়েছে ১০ নম্বরেই। এর আগের দল জিম্বাবুয়ে। বড়দের আসরে বাংলাদেশের লড়াইটা জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই। টেস্ট সট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম জয়টাও আসে আফ্রিকার এই দেশটির বিরুদ্ধে ২০০৫-এ। অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে সে বছরই টেস্ট ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যায়। আর এতে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছিল ৯ নম্বরে। এরপর ২০১১তে জিম্বাবুয়ে টেস্ট অঙ্গনে ফিরে এলে হুমকি হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য এবং ঠিকই তারা বাংলাদেশকে হারিয়ে ফিরে আসে আগের জায়গায়। সম্প্রতি আইসিসি’র ‘বিগ থ্রি‘ ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড মিলে বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ের টেস্ট খেলার গণ্ডি সীমিত করে দেয়। কমিয়ে দেয় টেস্ট সংখ্যা ও বিদেশ সফর। তারা অনেকটা অপাঙ্‌ক্তেয় রাখার চেষ্টা করে এই দুই দলকে। নিজেদের মধ্যে খেলে মান বাড়ানোর পথ বাতলে দেয় তারা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স নিয়ে ঠাট্টা মশকরাও
শুরু হয় চারদিকে। বিশেষ করে চলতি বছর কেবল টেস্ট নয় সীমিত ওভারের খেলাতেও বাংলাদেশের জয় অধরা হয়ে পড়েছিল। ফিসফাস থেকে প্রকাশ্যে উচ্চারিত হচ্ছিল টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়ার কথা। আর এ কারণেই বাংলাদেশের জন্য ঘরের মাঠের এই সিরিজটি ছিল চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ দারুণভাবে উৎরে গেল মুশফিকুর রহীম ও তার দল। টেস্ট র‌্যাংঙ্কিয়ের ১০ নম্বর দল হিসেবে বাংলাদেশকে খেলতে হতো আইসিসি’র সহযোগী দেশগুলো নিয়ে আয়োজিত ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপের চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে। তবে গতকালের এই জয়ে সেই বিব্রতকর অভিজ্ঞতা থেকে রক্ষা পেলো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৩-০ তে হারাতে পারলেই ১৪টি পয়েন্ট এগিয়ে যাবে টাইগাররা। কারণ বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট এখন ১৯ আর জিম্বাবুয়ের ৩৯। যদি সিরিজের তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ জয় পায় তাহলে বাংলাদেশ পাবে ৩৪ পয়েন্ট। তবে ২-০ তে সিরিজ জিতে গতকালই বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের কাছ থেকে এগিয়ে আছে ৯ পয়েন্ট।
গতকাল খুলনায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ১৬২ রানে। খেলার পঞ্চম ও শেষ দিনে বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া ৩১৪ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৫১ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। সাকিব, তাইজুল আর জুবায়েরের ঘূর্ণিতে সাড়ে তিন ঘণ্টারও কম সময়ে অলআউট হয়ে যায় তারা।
যেভাবেই হোক ঢাকা টেস্টের জয়ে সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার পর লক্ষ্য দাঁড়ায় সিরিজ জয় ও র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতি। ফিরে আসা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে খুলনা টেস্টে দলীয় নৈপুণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, তাইজুল ইসলাম, শুভাগত হোম। সাকিব আল হাসান ব্যাটে-বলে ইতিহাসগড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচ সেরা থেকে বিশ্বসেরা হয়েছেন। একই টেস্টে শত রানের পাশাপাশি ১০ উইকেট। প্রায় ১৫০বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে তার আগে মাত্র দু’জনেরই রয়েছে এই কৃতিত্ব। একজন ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম আর অপরজন পাকিস্তানের ইমরান খান। সাকিবময় হয়ে যাওয়া এ টেস্টকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। তামিমের প্রথম ইনিংসের সংযমী শত রান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুই ইনিংসের ফিফটি বিশেষ করে দ্বিতীয়টি ছিল অনেক মূল্যবান। দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল ও শুভাগত হোমের ফিফটি বাংলাদেশের বোলারদের লড়াই করার পুঁজিটা এনে দেয়। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৩৩ রান করে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। জিম্বাবুয়ের দুই ইনিংসে সংগ্রহ ৩৬৮ ও ১৫১। গতকালের জয়টি রানের দিক থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ২০০৫ সালে ২২৬ রানের ব্যবধানে জিতেছিল। ৮৭ টেস্টে বাংলাদেশের এটি ৬ষ্ঠ জয়। এর মধ্যে ৪টি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আর দু’টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এটি বাংলাদেশের চতুর্থ সিরিজ জয় যার দু’টিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ শুরু করেছিল টাইগাররা। গতকাল সিরিজ নিশ্চিত হয় খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে। এবার চট্টগ্রাম জহুর আহম্মেদ স্টেডিয়ামে তৃতীয় টেস্টে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার পালা। সিরিজের শেষ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে ১২ই নভেম্বর । খুলনা টেস্টে চতুর্থ দিনটি ছিল বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল ৬৫ রান পিছিয়ে থেকে। চতুর্থ দিন ২০১ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এগিয়ে থাকে ২৬৬ রানে। এটা খুব বেশি না হলেও মন্দ ছিল না। তবে সংশয় থেকেই যায় বাংলাদেশ দল বলে। তাই বড় ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার তাড়া ছিল। আগের দিন ৬৩ রানে অপরাজিত থাকা রিয়াদ ও ২৩ রানে অপরাজিত থাকা শুভাগত হোম ৫ম দিন শুরু করেন। ৮ রান যোগ করেই ফিরে যান মাহমুদুল্লাহ। তার সংগ্রহ ১৫৮ বলে ৭১ রান। কিন্তু একপাশ আগলে রেখে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি তুলে আউট হন শুভাগত হোম। শেষ পর্যন্ত ৩১৩ রানে এগিয়ে থেকে অধিনায়ক ইনিংস ঘোষণা করেন। ৩১৪ রানের টার্গেটে জবাব দিতে নেমে স্পিনারদের সামনে আবারও অসহায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম টেস্টে তাইজুল একাই নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। আর গতকাল সাকিব, তাইজুল আর জুবায়ের মিলে নেন ১০ উইকেট। সাকিব-তাইজুলের আঘাতে ১৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মাসাকাদজা ও রেগিস চাকাভা। চতুর্থ উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটিটি ভেঙে দেন তরুণ জুবায়ের। আগের দিন সেঞ্চুরি হাঁকালেও ২৭ রানেই চাকাভাকে থামান জুবায়ের। ৫ম উইকেটে হ্যামিলটন আবারও আরভিনকে নিয়ে ৩১ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে জুটিও ভেঙে দেন জুবায়ের। তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মাসাকাদজা। ৬১ রান তোলার পার সাকিব তাকে সাজঘরের পথ দেখান সরাসরি বোল্ড করে। তার বিদায়ের সময় জিম্বাবুয়ের স্কোর বোর্ডে ১৩৭ রান ৬ উইকেট হারিয়ে। এরপর মাত্র ১৪ রান যোগ হতেই সাকিব ও তাইজুল বাকি ৪টি উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন।