হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী গভীর অরণ্য থেকে বিপুল পরিমাণ রকেট লঞ্চার ও মর্টার শেল উদ্ধার করেছে র্যাব। দুই দিনের অভিযান শেষে গতকাল অস্ত্র উদ্ধারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন র্যাব-এর সদস্যরা। উদ্ধার অভিযানের সময় র্যাব সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে সাতছড়ি যান। বিকালে র্যাব জানায়, দিনভর অভিযানে প্রায় ২০০ কামান বিধ্বংসী উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলা উদ্ধার করা হয়। আরও গোলাবারুদ সেখানে রয়েছে বলে তাদের ধারণা। টিলার ওপর গভীর কূপের মধ্যে তৈরি করা বাংকারের মধ্যে এই গোলাগুলো পাওয়া যায়। তবে কারা কখন এই অস্ত্র মজুত করেছিল এ বিষয়ে কোন ধারণা দিতে পারেনি র্যাব। যে স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয় তা ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের ৩ কিলোমিটার ভেতরে। বনে একশ’ ফুট উঁচু টিলার মাঝামাঝি স্থানে বিভিন্ন বাংকারে অভিযান চালায় র্যাব। তাদের সঙ্গে ডগ স্কোয়াডও ছিল। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান ও পরিচালক (মিডিয়া ও লিগ্যাল উইং) উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমানও সেখানে এক পর্যায়ে অভিযান তদারক করেন। বিকালে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, দিনের আলো না থাকায় অভিযান বন্ধ করা হয়। বুধবার সকাল থেকে আবার অভিযান চালানো হবে। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংকার থেকে ১৮৪টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কামান বিধ্বংসী গোলা এবং এই গোলা ছোড়ার কাজে ব্যবহারের ১৫৪টি চার্জও পাওয়া গেছে। র্যাবের মিডিয়া উইং-এর পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এই অভিযান চালানো হয়। তবে তারা ৪-৫ দিন ধরে ওই এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিলেন। র্যাবের নেটওয়ার্ক সিগন্যালে ওই বাংকারগুলোতেও অস্ত্র থাকার সঙ্কেত পাওয়ার পরই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। দুটি টিলার ওপর একটিতে দুটি এবং অন্যটিতে পাঁচটি গভীর কূপ ছিল, সেখানে প্রতিটি কূপে একাধিক বাংকার রয়েছে বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংকারগুলো কংক্রিটের তৈরি। এগুলো একদিনে হয়নি। এটা দীর্ঘ দিন আগে তৈরি করে গোলাবারুদ মজুদ করা হয়েছে। ওই টিলার ওপর কয়েকটি ঘর রয়েছে, তবে সেখানে নারী ও শিশু ছাড়া কোন পুরুষ ছিল না।
এদিকে র্যাবের এ অভিযান অত্যন্ত গোপনীয় ভাবে চালানোর কারণে সোমবার বিষয়টি জানাজানি হয়নি। বিপুুল সংখ্যক র্যাব সদস্যের আনাগোনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ খবরে সকালে হেলিকপ্টারে করে সাতছড়ি ছুটে আসেন র্যাবের সহকারী ডাইরেক্টর জেনারেল কর্নেল জিয়াউল হাসান, মিডিয়া উইং কমান্ডের প্রধান কর্নেল হাবিবুর রহমান, ব্যাটালিয়ান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে ছুটে যান মিডিয়াকর্মীরা। দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিং-এ হাবিবুর রহমান বলেন, র্যাবের এ অভিযান চলমান থাকবে। সাতছড়ি পাহাড়ের সকল টিলায় অভিযান চালানো হয়েছে। প্রয়োজনে র্যাব সদস্যরা এখানে আরও কয়েক দিন অবস্থান করবেন এবং পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় অভিযান চালাবেন। তিনি বলেন, কারা কি উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্র এখানে রেখেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জড়িতদের খুঁজে বের করার। ২০০৩ সালের ২৭শে জুন বগুড়ার কাহারোল উপজেলায় আনারসের ট্রাকে ১৭৪ কেজি বিস্ফোরক এবং প্রায় ১ লাখ রাউন্ড গুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের পর সাতছড়ি আলোচনায় আসে। তদন্তে উঠে আসে সাতছড়ি থেকেই এসব গোলাবারুদ ও অস্ত্র পাচার হয়ে গিয়েছিল। কাহারোলে গোলাবারুদ উদ্ধারের পর সাতছড়ি থেকে ভারতীয় নিষিদ্ধ ঘোষিত এটিটিএফ ও এনএলএফটি সংগঠন দু’টি তাদের ক্যাম্প গুটিয়ে নেয়। চলে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় পুলিশের হাতে আটক এ গোলাবারুদ ও অস্ত্র আটকের পর এসব অস্ত্র আড়ালে রাখা হতে পারে। পরে সুযোগ না থাকায় এসব অস্ত্র তারা সরিয়ে নিতে পারেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যেভাবে ‘অপারেশন সাতছড়ি’
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে জানান, জানুয়ারি থেকেই সাতছড়ি পাহাড় রয়েছে র্যাবের নজরদারিতে। ছিল গোয়েন্দা জাল। মূলত সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য ওই এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছিল র্যাব। গতকাল ‘অপারেশন সাতছড়ি’ নিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন র্যাব ৯-এর গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। তারা জানান, ওই সীমান্তে হঠাৎ করে অপরিচিতদের আনাগোনা ছিল। এ কারণেই ওখানে নজরদারি বাড়ানো হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাওয়া গেল অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান। র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন, র্যাবের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে সাতছড়ির টিপরা বস্তি ও পাহাড়ি অঞ্চলে নজরদারি করে আসছিল। এরপর তারা নিশ্চিত হন সাতছড়ি পাহাড়ি অঞ্চলে মাটির নিচে বাংকারে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বিস্ফোরক, গোলাবারুদ মজুত রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৯ এবং ঢাকার গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা সাতছড়ি বন ও আশপাশ এলাকায় বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করে পুরো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়। আর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার পর শুরু করা হয় অভিযান। গহিন অরণ্য সাতছড়ি পাহাড় ও টিপরা বস্তি। সীমান্ত থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরত্ব হওয়ায় ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত খুব একটা ছিল না। তবে, টিপরা বস্তি ও আশপাশ এলাকায় স্থানীয় কিছু পাহাড়ি বসবাস করে। অভিযানে থাকা র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, নজরদারি শুরু করলেও সে বিষয়টিতে তারা অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করেন। এর কারণ এই অপারেশনে তারা যে কোন সময় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে পারেন- এমন আশঙ্কা থাকায় অপারেশনের বিষয়টি শুধু র্যাবের অপারেশনে থাকা কর্মকর্তারা আর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা জানতেন। তবে, র্যাবের নজরদারি শুরু হওয়ার পর ওখানে কোন সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর সরব উপস্থিতি তারা লক্ষ্য করেননি। মে মাসের শেষে দিকে শুরু হয় অপারেশন সাতছড়ির পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনা মতো র্যাব সদস্যরা ১লা জুন থেকে অভিযানে নামেন। তারা প্রথমে টিপরা বস্তি ও পাহাড় এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন। টানা দুই দিনে তারা পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর সোমবার বিকাল থেকে শুরু করা হয় অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। এর আগে র্যাবের আর্মস সংকেত যন্ত্র নিয়ে পুরো পাহাড়ে সার্চ করা হয়। আর ওই সার্চের সময় সংকেত মিলে মাটির নিচে আর্মস থাকার সম্ভাবনা। অভিযানের পরপরই সেখানে পৌঁছেন সাংবাদিকরা। অভিযান নিয়ে বেশ কৌতূহল ছিল। সরজমিনে পরিদর্শন করা কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার স্থানটি গহিন অরণ্যে। ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত করা অনেক দুষ্কর। র্যাব প্রথমে টিপরা বস্তি ও পাহাড়ি এলাকায় ৬টি বাংকারের সন্ধান পায়। এসব বাংকার বেশ সুরক্ষিত। বিশেষ কায়দায় প্রস্তুত করা হয়েছে বাংকারগুলো। দেখে মনে হয় ১০ থেকে ১২ বছর আগে ওই বাংকারগুলো তৈরি করা হয়েছে। বাংকারের চারপাশে দেয়ালে আস্তরণ পড়ে গেছে। উপরের অংশও বেশ সুরক্ষিত। র্যাব সদস্যরা বাংকারগুলো আবিষ্কারের পর সেখান থেকে অনেকটা অক্ষত অবস্থায়ই অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেন। অভিযানে থাকা র্যাব ৯-এর সদস্যরা গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পুরো অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছে র্যাব-৯ এবং ঢাকার গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। তারা জানান, সার্চের মাধ্যমে আরও বাংকার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ কারণে অভিযান চলছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তারা অভিযান সমাপ্ত করতে পারবেন। র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে জানান, অভিযানে কতদিন লাগবে বলা যাবে না। তবে, শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে। এদিকে, অপারেশন সাতছড়ির খবর প্রকাশ পাওয়ায় সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিজিবিকে সতর্ক রাখা হয়েছে। টহলের পাশাপাশি তল্লাশিও জোরদার করা হয়েছে। সাতছড়িতে থাকা র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, বৈরী আবহাওয়া তাদের অপারেশনকে কিছুটা শ্লথ করে দিয়েছে। তবে, পর্যাপ্ত আলো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই চলছে অভিযান।
সরকারের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে: মনিরুজ্জামান
সরকারের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতার যে ব্যবস্থাপনা তার ভেতরে অনেক ধরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সার্বিকভাবে ভারতের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারের দাবির প্রতি নতুন করে সন্দেহ দেখা দেবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। গতকাল বিবিসিকে এ কথা বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মনিরুজ্জামান। বিবিসি তার রিপোর্টে বলেছে, ভারতীয় সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের ভেতরে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের পর বাংলাদেশের মাটিতে এটাকে সবচেয়ে বড় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা হিসেবে দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এত সব অস্ত্রশস্ত্র কি সীমান্তের কাছে হঠাৎ করেই মজুত করা হয়েছে- বিবিসি এমন প্রশ্ন করে মেজর জেনারেল মনিরুজ্জামানের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, না। কোনভাবেই হঠাৎ করে একদিন-দু’দিন বা সাত দিনে এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ এখানে মজুত করা সম্ভব নয়। এখানে দেখা যাচ্ছে, শুধু ২০০ রকেট লঞ্চার ছাড়াও অ্যান্টি ট্যাংক এক্সপ্লোসিভ ছিল, মর্টার শেল ছিল, চার্জার ছিল রকেট লঞ্চারের এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ওখানে ছিল। অস্ত্রশস্ত্র ভা-ারই ছিল না, সেটাকে পাহারা দেয়ার জন্য বাংকারও তারা তৈরি করেছিল। কাজেই সুসংহত একটা ঘাঁটি ছিল এটা। ধীরে ধীরে অনেক বছরে গড়ে উঠেছে। তারা এটাকে শক্তভাবে মজুত অবস্থায় রাখার জন্য সব ধরনের বন্দোবস্ত নিয়েছিল। বিবিসি তার কাছে জানতে চায়, আপনি যে অস্ত্রশস্ত্রের কথাগুলো বললেন, এর অনেকগুলোই ভারি অস্ত্র। এগুলো তো লুকিয়ে পরিবহন করা সম্ভব নয়। সীমান্তে দু’পাশে বিএসএফ আছে, বিজিবি আছে। এর মধ্যে, এ নিরাপত্তার মধ্যে এটা করা কি করে সম্ভব হয়? জবাবে তিনি বলেন, বেশ কিছু ঘটনাতে এটাই আমরা বুঝতে পারছি যে সরকারের নিরাপত্তা এবং সরকারের গোয়েন্দা তৎপরতার যে ব্যবস্থাপনা তার ভেতরে অনেক রকম ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে আমরা যেটা মিয়ানমার সীমান্তে দেখলাম এবং পরেও জানা যাচ্ছে যে মিয়ানমারের সীমান্তে আমাদের যে গহিন জঙ্গলগুলো আছে সেখানেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ধরনের অস্ত্রশস্ত্র অনেক কিছু সেখান থেকে পাচার হচ্ছে। কাজেই সব কিছু বিশ্লেষণ করলে এটাই বোঝা যাচ্ছে, সরকারের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থাপনার ভেতরে অনেক দুর্বল স্থান রয়ে গেছে এবং এ দুর্বলতার কারণে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। বিবিসি তার কাছে পাল্টা প্রশ্ন করে- ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সেখানে এ মজুত করছিল। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত যে সরকার সে সময় দেখেছি… বলা হচ্ছিল একটা কথা, এ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যে নেটওয়ার্ক সেটা ভেঙে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের ভেতরে। এমনকি বিচ্ছিন্নতাবাদী যেসব নেতা ছিলেন তাদের ধরে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হস্তান্তরও করেছে। তাহলে কি মনে হয় এই যে একটা ধারণা করা হচ্ছিল যে বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেটওয়ার্কটা ভেঙে দেয়া হয়েছে সেটা অতটা স্পষ্ট করে বলা যায় না? জবাবে মেজর জেনারেল মনিরুজ্জামান বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করছে সে দাবি যে যৌক্তিক ছিল না, বর্তমান ঘটনা থেকে সেটা প্রমাণ হচ্ছে। একই সঙ্গে বোঝা যাচ্ছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী অভিযান বিশেষ করে ভারতের মার্কসিস্ট অঞ্চলে অনেক বছর থেকে চলে আসছিল, সেগুলো স্তিমিত হয়ে গেলেও এগুলো এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে এবং তারা এ অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে তাদের ঘাঁটি নতুন করে স্থাপন করার জন্য এবং সে স্থাপিত ঘাঁটির দিকে নতুন করে অভিযান চালানোর জন্য আবার সচেষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এটা লক্ষ্য করা গেছে, এ অঞ্চলে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী অভিযানের যারা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন তাদের অনেকে বাংলাদেশে অবস্থান গ্রহণ করলে তাদের বিগত কয়েক বছরে ভারতের সরকারের হাতে আবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে দেয়া হয়েছে এবং তাদের দেয়ার পরও যে এ ধরনের নেতৃত্ব আবার নতুন করে গড়ে উঠতে পারে তারই একটা নতুন করে এখানে আবার আলোর চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। বিবিসি জানতে চায়, নতুন করে এই যে ভারতীয় সীমান্তের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেল, এত ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্র সেটা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে? জবাবে মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে বিশেষ করে ভারতে যে নতুন সরকার এসেছে, তারা নতুন করে সব কিছু মূল্যায়ন করবেন। একটা নাজুক পর্যায়ে আমাদের এখন বর্তমানে সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়াও এর আগেও আমরা একবার লক্ষ্য করেছিলাম, বিএসএফ ও বিজিবির ভেতরে যখন একটা বৈঠক হয়েছিল, তখন বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে ৬৭টি ঘাঁটি তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে উল্লেখ করছিল, যেটা বিজিবির পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। কিন্তু এ নতুন ঘাঁটির যে সন্ধান পাওয়া গেল তার মাধ্যমে সে ধরনের দাবির দিকে তারা আবার নতুন করে দৃষ্টিপাত করবে বলে আমরা মনে করছি। তবে সার্বিকভাবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারের দাবির প্রতি যে নতুন করে সন্দেহ দেখা দেবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
উৎস- মানবজমিন