জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবিধান ও সংসদকে অবমাননা করেছেন। এর আগে তাকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে একই অপরাধ করেছেন। ইতিহাস বিকৃতির এই চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা করতে হবে। তার বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব করতে হবে।
আজ রবিবার জাতীয় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা এই দাবি জানান। ‘জিয়াউর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি’- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের এমন উদ্ভট তত্ত্ব এবং তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করেন। ইতিহাস বিকৃতিতে ভূমিকা রেখে খালেদা জিয়া এই দেশে থাকার অধিকার হারিয়েছে বলে তারা দাবি করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই আলোচনা চলাকালে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ সংসদে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘন্টা এই অনির্ধারিত আলোচনা চলে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং তার নির্দেশেই এদেশের রাজনীতি স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হয়েছিলো। সর্বশেষ দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। জিয়াউর রহমানও তার লেখায় সেটা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের হত্যার মধ্য দিয়ে তারা স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হলে আবারো যড়যন্ত্র শুরু হয়। তার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে সকল সামপ্রদায়িক শক্তিকে একত্রিত করে ১৯ দলীয় জোট গঠন করে নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে। নতুন করে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করা। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। খালেদা জিয়াকে আইনের মুখোমুখী করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, মার্চ মাসে যারা ইতিহাস বিকৃত করতে চায়, তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যিনি গিনেজ বুক অব রেকর্ডে আন্দোলন করে নাম লেখাতে চান, সেই নেত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের এই দিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সৃষ্ট গণআন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বেগম জিয়ার মনে অনেক দুঃখ, কষ্ট ও বেদনা। কারণ উনি বার বার পরাজিত হয়েছেন, আগামীতেও হবেন। তিনি বলেন, দেশের যদি কেউ ক্ষতি করে গেছেন তিনি হচ্ছেন জেনারেল জিয়া। মুক্তিযোদ্ধা হলে জিয়াউর রহমান কী যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী বানাতে পারতেন? তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া ও তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গদের স্মৃতিশক্তি লোপের কারণে আবল-তাবল বকছেন। এখনও সময় এসেছে এসব আবোল-তাবোল বক্তব্যে বন্ধ করুন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে খালেদা জিয়া সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। আপনি কী আন্দোলন করবেন? যে শিশুদের পেট্টোল বোমা মেরে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন, এজন্য একদিন আপনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশের মানুষ যখন স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন এমন উদ্ভট তত্ত্বের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। দেশে একটি সংবিধান আছে। সাংবিধানিক ও ঐতিহাসিকগতভাবে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক ও প্রথম রাষ্ট্রপতি। এর বিরুদ্ধে কারোর কোন কথা বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, একজন মেজর যিনি মুজিবনগর সরকারের ৪শ’ টাকার বেতনভূক্ত কর্মচারী ছিলেন, তিনি কীভাবে রাষ্ট্রপতি বা ঘোষক হন? তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া বিগত আন্দোলনে পাশও কনেনি, ফেলও করেননি- এক ক্লাশ নিচে নেমে গিয়ে আগেই গিনিজ বুকের রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন। ব্যর্থ আন্দোলনের রেকর্ড গড়েছেন। যদি কেউ সংবিধান লংঘন করে, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে বিচার করা যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়া সংবিধান লংঘন করেছেন, এটা সহ্য করা যায় না। এখনই তাঁকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াসহ তার সহযোগীদের অসংলগ্ন আচরণ করছেন। আঞ্চলিক ভাষায় তাদের ‘তার’ ছিড়ে গেছে। এর পিছনে স্বাধীনতা দিবসে সারা দেশে একত্রে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ঘটনা। ওটা নিয়েই তাদের অন্তর জ্বালা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যখন জাগ্রত হচ্ছে, তখন পাকিস্তানের আইএসআই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আর তাদের হয়ে বিএনপি নেতারা কাজ করছেন। আবোল-তাবোল বকছেন। ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করছেন। ক্যান্টনমেন্টে থাকা বেগম জিয়াও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পদক নিচ্ছেন। বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মিথ্যাচারের উপর এই দলের জন্ম। খালেদা জিয়া নিজের জন্মদিন নিয়েই মিথ্যাচার করেছেন। তেমনি জিয়াউর রহমান যে সপ্তম রাষ্ট্রপতি সেটা তাদের ওয়েবসাইটেও ছিলো। যে কারণে সেই ওয়েবসাইট আজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। একটা মিথ্যারে দশবার জোর দিয়ে বললে সত্য হয়ে যাবে তারা সেই নীতি অবলম্বন করেছেন। কিন্তু সত্যকে কোন ভাবে চেপে রাখা যায় না। তা একদিন প্রকাশিত হবেই।
ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। আজ খালেদা জিয়াও তাই করছে। তিনি বলেন, এই সংসদের ক্ষমতা আছে কাউকে তলব করার। যে কারো কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার। আজ সেটাই করতে হবে। কঠোর এবং চরম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে চরম সংকট সৃষ্টি করেছেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা বিরোধীদের পূনর্বাসিত করেছেন। আর তাকে নিয়ে যে মন্তব্য করা হচ্ছে তা চরমঔধত্যপূর্ণ।বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিরোধী দলের সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপার্সন আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। বিরোধী দলকে সংসদ থেকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়ে তারা নিজেদের অযোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তার মন্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। তিনি আরো বলেন, বিরোধী দলের নেতা না হতে পেরে খালেদা জিয়া আবোল-তাবোল বক্তৃতা করছেন। বিএনপির ওয়েবসাইটেই বলা আছে, জিয়াউর রহমান সপ্তম রাষ্ট্রপতি। আর এখন তারা উল্টো বলছেন। ক্ষমতা হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।বিতর্কের সূত্রপাত করে জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ২৬ মার্চ আমরা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা শুনেছি। আর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মাত্র ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছেন। তিনি বলেন, গিনিজ বুকে উঠার মতো আন্দোলন নাকি উনি (খালেদা জিয়া) করবেন? অবশ্য গিনিজ বুকে ওঠার মতো রেকর্ড তাঁর রয়েছে, যা কোন নারী ভাঙ্গতে পারবে না। এর বেশী আমি কিছু বলতে চাই না। তিনি বলেন, একের পর এক রাষ্ট্র ও সংবিধানের সীমা অতিক্রম করছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির নেত্রীর এই বাড়াবাড়ি আচরণ দেশের প্রচলিত আইন দিয়ে মোকাবেলা করার ক্ষমতা না থাকে, তবে এই সংসদ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হবে না।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, সাংবিধানিকভাবে নিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে ইস্যু সৃষ্টি করার একটাই উদ্দেশ্যে- দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ কেন, সারাবিশ্বের মানুষ জানেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই ছিলেন প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি স্বাধীন একটি রাজনৈতিক দল। রাজনীতির খেলায় খালেদা জিয়া হেরে গিয়ে তিনি এখন হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আমাদের বোমাবাজি-পেট্টোল বোমার ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু ৫ বছরের এক ঘন্টা আগেও আমরা পদত্যাগ করবো না। তিনি আরো বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালে জনগণকে মাঠে নামার জন্য ডাক দিয়েছিলেন, একজন মানুষও নামেনি। আগামীতেও নামবে না।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার দাবি জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া যে কথা বলেছেন তা দেশদ্রোহীতা ও সংবিধানের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই উনার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হবে না কেন? সরকার মামলা না করলে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করবো। তিনি বলেন, জাতি জানতে চায়, একাত্তরে খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন? ক্যান্টনমেন্টের এসি রূমে কারোর মেহমানদারীতে নাকি বন্দী ছিলেন? মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খালেদা জিয়া সংবর্ধনা নেন! উনি কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন? উনি তো বীরঙ্গনাও নন। অবিলম্বে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার দাবি জানান তিনি।
আজ রবিবার জাতীয় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা এই দাবি জানান। ‘জিয়াউর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি’- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের এমন উদ্ভট তত্ত্ব এবং তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করেন। ইতিহাস বিকৃতিতে ভূমিকা রেখে খালেদা জিয়া এই দেশে থাকার অধিকার হারিয়েছে বলে তারা দাবি করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই আলোচনা চলাকালে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ সংসদে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘন্টা এই অনির্ধারিত আলোচনা চলে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং তার নির্দেশেই এদেশের রাজনীতি স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হয়েছিলো। সর্বশেষ দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। জিয়াউর রহমানও তার লেখায় সেটা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের হত্যার মধ্য দিয়ে তারা স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হলে আবারো যড়যন্ত্র শুরু হয়। তার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে সকল সামপ্রদায়িক শক্তিকে একত্রিত করে ১৯ দলীয় জোট গঠন করে নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে। নতুন করে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করা। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। খালেদা জিয়াকে আইনের মুখোমুখী করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, মার্চ মাসে যারা ইতিহাস বিকৃত করতে চায়, তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যিনি গিনেজ বুক অব রেকর্ডে আন্দোলন করে নাম লেখাতে চান, সেই নেত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের এই দিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সৃষ্ট গণআন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বেগম জিয়ার মনে অনেক দুঃখ, কষ্ট ও বেদনা। কারণ উনি বার বার পরাজিত হয়েছেন, আগামীতেও হবেন। তিনি বলেন, দেশের যদি কেউ ক্ষতি করে গেছেন তিনি হচ্ছেন জেনারেল জিয়া। মুক্তিযোদ্ধা হলে জিয়াউর রহমান কী যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী বানাতে পারতেন? তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া ও তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গদের স্মৃতিশক্তি লোপের কারণে আবল-তাবল বকছেন। এখনও সময় এসেছে এসব আবোল-তাবোল বক্তব্যে বন্ধ করুন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে খালেদা জিয়া সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। আপনি কী আন্দোলন করবেন? যে শিশুদের পেট্টোল বোমা মেরে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন, এজন্য একদিন আপনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশের মানুষ যখন স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন এমন উদ্ভট তত্ত্বের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। দেশে একটি সংবিধান আছে। সাংবিধানিক ও ঐতিহাসিকগতভাবে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক ও প্রথম রাষ্ট্রপতি। এর বিরুদ্ধে কারোর কোন কথা বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, একজন মেজর যিনি মুজিবনগর সরকারের ৪শ’ টাকার বেতনভূক্ত কর্মচারী ছিলেন, তিনি কীভাবে রাষ্ট্রপতি বা ঘোষক হন? তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া বিগত আন্দোলনে পাশও কনেনি, ফেলও করেননি- এক ক্লাশ নিচে নেমে গিয়ে আগেই গিনিজ বুকের রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন। ব্যর্থ আন্দোলনের রেকর্ড গড়েছেন। যদি কেউ সংবিধান লংঘন করে, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে বিচার করা যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়া সংবিধান লংঘন করেছেন, এটা সহ্য করা যায় না। এখনই তাঁকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াসহ তার সহযোগীদের অসংলগ্ন আচরণ করছেন। আঞ্চলিক ভাষায় তাদের ‘তার’ ছিড়ে গেছে। এর পিছনে স্বাধীনতা দিবসে সারা দেশে একত্রে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ঘটনা। ওটা নিয়েই তাদের অন্তর জ্বালা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যখন জাগ্রত হচ্ছে, তখন পাকিস্তানের আইএসআই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আর তাদের হয়ে বিএনপি নেতারা কাজ করছেন। আবোল-তাবোল বকছেন। ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করছেন। ক্যান্টনমেন্টে থাকা বেগম জিয়াও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পদক নিচ্ছেন। বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মিথ্যাচারের উপর এই দলের জন্ম। খালেদা জিয়া নিজের জন্মদিন নিয়েই মিথ্যাচার করেছেন। তেমনি জিয়াউর রহমান যে সপ্তম রাষ্ট্রপতি সেটা তাদের ওয়েবসাইটেও ছিলো। যে কারণে সেই ওয়েবসাইট আজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। একটা মিথ্যারে দশবার জোর দিয়ে বললে সত্য হয়ে যাবে তারা সেই নীতি অবলম্বন করেছেন। কিন্তু সত্যকে কোন ভাবে চেপে রাখা যায় না। তা একদিন প্রকাশিত হবেই।
ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। আজ খালেদা জিয়াও তাই করছে। তিনি বলেন, এই সংসদের ক্ষমতা আছে কাউকে তলব করার। যে কারো কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার। আজ সেটাই করতে হবে। কঠোর এবং চরম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে চরম সংকট সৃষ্টি করেছেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা বিরোধীদের পূনর্বাসিত করেছেন। আর তাকে নিয়ে যে মন্তব্য করা হচ্ছে তা চরমঔধত্যপূর্ণ।বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিরোধী দলের সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপার্সন আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। বিরোধী দলকে সংসদ থেকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়ে তারা নিজেদের অযোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তার মন্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। তিনি আরো বলেন, বিরোধী দলের নেতা না হতে পেরে খালেদা জিয়া আবোল-তাবোল বক্তৃতা করছেন। বিএনপির ওয়েবসাইটেই বলা আছে, জিয়াউর রহমান সপ্তম রাষ্ট্রপতি। আর এখন তারা উল্টো বলছেন। ক্ষমতা হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।বিতর্কের সূত্রপাত করে জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ২৬ মার্চ আমরা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা শুনেছি। আর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মাত্র ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছেন। তিনি বলেন, গিনিজ বুকে উঠার মতো আন্দোলন নাকি উনি (খালেদা জিয়া) করবেন? অবশ্য গিনিজ বুকে ওঠার মতো রেকর্ড তাঁর রয়েছে, যা কোন নারী ভাঙ্গতে পারবে না। এর বেশী আমি কিছু বলতে চাই না। তিনি বলেন, একের পর এক রাষ্ট্র ও সংবিধানের সীমা অতিক্রম করছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির নেত্রীর এই বাড়াবাড়ি আচরণ দেশের প্রচলিত আইন দিয়ে মোকাবেলা করার ক্ষমতা না থাকে, তবে এই সংসদ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হবে না।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, সাংবিধানিকভাবে নিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে ইস্যু সৃষ্টি করার একটাই উদ্দেশ্যে- দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ কেন, সারাবিশ্বের মানুষ জানেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই ছিলেন প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি স্বাধীন একটি রাজনৈতিক দল। রাজনীতির খেলায় খালেদা জিয়া হেরে গিয়ে তিনি এখন হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আমাদের বোমাবাজি-পেট্টোল বোমার ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু ৫ বছরের এক ঘন্টা আগেও আমরা পদত্যাগ করবো না। তিনি আরো বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালে জনগণকে মাঠে নামার জন্য ডাক দিয়েছিলেন, একজন মানুষও নামেনি। আগামীতেও নামবে না।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার দাবি জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া যে কথা বলেছেন তা দেশদ্রোহীতা ও সংবিধানের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই উনার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হবে না কেন? সরকার মামলা না করলে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করবো। তিনি বলেন, জাতি জানতে চায়, একাত্তরে খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন? ক্যান্টনমেন্টের এসি রূমে কারোর মেহমানদারীতে নাকি বন্দী ছিলেন? মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খালেদা জিয়া সংবর্ধনা নেন! উনি কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন? উনি তো বীরঙ্গনাও নন। অবিলম্বে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার দাবি জানান তিনি।
উৎস- কালেরকন্ঠ