এবার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলা যেকোনো দিন চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের করা আপিলের ওপর গতকাল বুধবার শুনানি শেষ হয়েছে।
বিচারপতি এস কে (সুরেন্দ্র কুমার) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গতকাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখার আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
গতকাল সকালে জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এরপর বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে কামারুজ্জামানের মামলায় শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার আদেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে করা তিনটি আপিলের ওপর শুনানি শেষ হলো। এ ছাড়া আবদুল আলীম কারাগারে মারা যাওয়ায় তাঁর আপিল অকার্যকর হিসেবে আদেশ দিয়ে আপিলটির পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন আদালত।
এ ছাড়া আপিল বিভাগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর করা আপিল বিচারাধীন রয়েছে।
কামারুজ্জামানের আপিল : গতকাল এ মামলায় সরকারপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি কামারুজ্জামানের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আবেদন জানান। এরপর কামারুজ্জামানের আইনজীবী এস এম শাহজাহান পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারপক্ষ কোনো সাক্ষী দিয়েই সন্দেহাতীতভাবে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। তাই তাঁকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘রেকর্ডপত্র দেখে আমরা বিবেক দিয়ে বিচার করি।’ উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার আদেশ দেন।
একাত্তরে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছর ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে সাতটির মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ (১, ২, ৩, ৪ ও ৭) প্রমাণে সক্ষম হয়। এ কারণে পাঁচটিতে সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটিতে ফাঁসি (অভিযোগ ৩ ও ৪), দুটিতে যাবজ্জীবন (অভিযোগ ২ ও ৭) আর একটিতে (অভিযোগ ১) ১০ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। অবশিষ্ট দুটি অভিযোগ (অভিযোগ ৫ ও ৬) প্রমাণ করতে না পারায় তা থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর সাজার বিরুদ্ধে ওই বছরের ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান। এ আপিলের ওপর গত ১৮ মে থেকে শুনানি শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত উভয় পক্ষ ১৭ কার্যদিবস শুনানি করেছে।