পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের সফর শেষে গতকাল ভারত ফিরে গেছে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এনআইএ’র চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। এবার যাবার পালা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের। এনআইএ সদস্যরা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের ভারতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে গেছেন। একইসঙ্গে দুই দেশের গোয়েন্দারা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে তাদের উভয়ের তালিকা অনুযায়ী জঙ্গিদের ব্যাপারে তদন্ত করতে একমত হয়েছেন।
এনআইএ’র আমন্ত্রনের বিষয়টি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অনুমতি পেলেই তারা ভারতে পালিয়ে থাকা জঙ্গি সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য ভারতে যাবেন।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে নিজ দেশে ফিরে যান এনআইএ গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ে দুই দেশের গোয়েন্দারা কিছু তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ তদন্তের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত অপরাধীদের আটকের চেষ্টা চালাবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বড় একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। সেখান থেকে তারা নাশকতার পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দা দলের সঙ্গে যৌথ বৈঠকে অংশ নেওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বৈঠকে জঙ্গিদের বিষয়ে কিছু তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে। এখন থেকে জঙ্গি দমনে দুই দেশের গোয়েন্দারা যৌথভাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে আমরা ভারতে যাবো।
গত ২রা অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে দুই ব্যক্তি মারা যায়। এরপরই দেশটির গোয়েন্দারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় জেএমবির নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতে পারেন। তাদের তদন্তে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর জেএমবি সদস্য নানা ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে রয়েছে বলেও তারা জানতে পারেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির টার্গেট যেহেতু বাংলাদেশ, সেহেতু তারা বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এ সব বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করেছে। এনআইএ বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গি কার্যক্রম নির্মূল করতে চায়। একই সঙ্গে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পর জঙ্গি সদস্যদের অনেকেই আবারও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে বলে তারা ধারণা করছে। এজন্য তারা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে মিলে একত্রে জঙ্গি নিমূল অভিযান চালাতে চায়। যাওয়ার আগে এনআইএ গোয়েন্দারা তাদের সরকারি ও ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরও আদান-প্রদান করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতের গোয়েন্দারা যে ১৪ জঙ্গি সদস্যের তালিকা দিয়েছে তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি সদস্য। দুই দেশ যেহেতু একই জঙ্গিদের খুঁজছে সে জন্য বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে কোন জঙ্গি তালিকা হস্তান্তর করা হয়নি। তবে এলিট ফোর্স র্যাব নিজেদের উদ্যোগে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থানরত ৪১ জন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ৫ জন জঙ্গি সদস্যের তালিকা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সকালে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ’র মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসে। ভারতীয় এই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিনকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়।