সেদিন সন্ধার আধো আলো, আধো আঁধারে সে হাটতে হাটতে মিলিয়ে গেলো। নিজের চিন্তার ভেতরে বেঁচে থাকার অস্থির অচেনা মানুষটা পরিচিত পথ ধরে হয়তো পৌছে যাবে সেই শহরে, নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার গন্তব্যে, বহুক্ষণ আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম, ক্লান্ত পায়ে ধীরে ধীরে একটু সামনে যেতেই আর দেখতে পেলাম না। অস্থির নয়নে অন্ধকারে উকিঝুকি মেরে দেখি মিলিয়ে গেছে অজানায়, আঁধারের যন্ত্রণা লেপটে থাকা পৃথিবীটা আমার সাথে ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে।
তাঁর যাওয়ার পথে বহু দূর চেয়ে থাকলো জেগে থাকা চোখ, তবুও থামেনি, থামবে না, যেন থামতে নেই।
সেই যে গেছে, ব্যাথার বাহানাতে পিছু ফিরে দেখেনি আর একটিবারও। মনে কি পড়েনি তার কষ্ট বহন করা বাহনটি ভেঙ্গে চুরে দুমড়ে যেতে পারে। হয়তো পেরেছে।
সেই যে ছুটি নিয়েছিলো তারপর আর দেখা হয়নি, বহু বছর কেটে গেলো, বহু কাল পরে অন্য পথে সে-একটু অন্যভাবে। জানা নেই তার প্রিয় পথের মানুষটি ঠিক আগের মতোই আছে, তাঁর স্বপ্নের দেয়ালটাতে কি দারুণ সময়ের ঘড়ি টানিয়ে রেখেছে। স্পষ্ট টুন টুন শব্দ প্রতিটি মুহুর্ত মনে করিয়ে দেয় প্রিয় আপনকে হারিয়ে সে কেমন আছে।
অস্পষ্ট ভাগ্য করে নিদারুন খেলা। একটু খোঁজ নিতে চেয়ে জানতে চাইলো কেমন আছো তুমি ? এই বন্দি জীবন কেমন কাটছে তোমার? কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো ? অনেক কাজের ভীড়ে তাহলে তোমারও মন কাঁদে ভালবাসার স্মৃতি কাতরতায় !
উত্তর নেই,আমি অবাক হইনি একটুও। তার এ খোঁজ নেয়ার কারণ ছিলো তাঁর বিবেক। হ্যাঁ এতটুকু বিবেক এর কারণে মানুষকে এখনো মানুষ ভাবতে ভালো লাগে। সাধনার সময় চলছে আবার উদ্যমী সাহসে। তুমি নেই, ছিলে না কোথাও, তাহলে কেনো এত খোঁজ খবর ? অভিমানের দরজাটা বন্ধ হয়ে আবার খোলে।
তুমি আছো ? না কি নেই ! বুঝা যায়নি ঠিক আগের মতো। সুন্দর পৃথিবীতে নিঃসঙ্গতার এক অন্ধকার ঘর নির্দয়ে আবিস্কার করি। সেখানে কারণে অকারণে নাম ধরে ডাকবে না যখন তখন কেউ। ভালবেসে হাসাবে না কেউ। জানা অজানা গল্প বলে চমকিয়ে দেবে না কেউ। জানি এটাই জীবন, এখান থেকেই বিদায় নিতে হবে, এটাই নিয়তি, ভাবনায় ডুবে যায় অনন্ত দূর দৃষ্টি, সব ভুল নয়, কিছু সার্থকতা আমাকে প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেয় নিঃস্বর্তে।
নিয়মের দায়ে আমরা হাসি, বেঁচে থাকি, সহজ, কঠিন পথে হাটি তবুও থেমে নেই কিছুই। থামতে নেই, ব্যাথার আরেক নামই জীবন, ব্যাথা বহন করে সবাই কম বেশি।
ব্যাথা সয়ে সয়ে মানুষ সুখি হতে চায়, চায় সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে। আমরা মানুষ, মানুষ হাসবে না কেনো?
আমিও একদিন সবার কথা শুনবো যেদিন আমি পাথরের মতো ঠাই দাঁড়িয়ে থাকবো, অমানুষের জায়গাটাতে একটি সুন্দর মনের মানুষ বসাতে পারবো। সে দিন আমিও এগিয়ে যাবো। কোন একজন আপন এগিয়ে যেতে বলবে, যাবো, থামতে বলবে থামবো, কষ্ট পেতে বলবে পাবো, তবুও ভালবাসবো, সব সম্পর্কের ভালবাসার জয় হয় কোন না কোন দিন। হবেই জয় নিরবে নিরবে গোপন নিঃশ্বাসের মাঝে তুমি আছো, থাকবে।
যুগ যুগ ধরে না পাওয়ার ব্যাথা বয়ে বেড়ায় মানুষ। আমিও কত শত ব্যাথার সাথে দিন রাত খেলা করি। ব্যাথা বয়ে বেড়ায় মানুষ। তবুও ভালবাসা বেঁচে থাকে হৃদয়ের গোপন ঘরে, মাকড়শার জাল বোনে তার ভীতর আরেকটি ঘর তৈরী করে তার নাম দেয়া হয় বেনামী ভালবাসার রক্তাক্ত বেদনা।
ভালবাসা ভালো থেকো অনন্তকাল ধরে। যে পথে তুমি হেটে যাবে বহু বছর ধরে, সে পথ তোমার শান্তির নিঃশ্বাস ফেলার নির্মল বাতাসে ছোঁয়া থাকুক, তুমি শান্তই থেকো, কখনোই ক্লান্ত হবেনা, সূর্য্যের মতো উজ্জল প্রাণবন্ত উচ্ছাস মনে হেটে যাও বহুদূরে—–!!
শীতের সকালে ঘন কোয়াশায় সাগরের তীর ঘেঁষে হাতে হাত রেখে এক সাথে হাটার সময় টুকু পাওনা থাকলো তোমার কাছ থেকে—
মনে রেখো!!!
পারভিন লিয়া, কবি, গল্পকার।