শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মিরসরাইয়ে অন্তঃস্বত্তা গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু পরিবারের দাবী যৌতুকের জন্য পরিকল্পিত হত্যা

Mirsarai Murder Photo-10.07.2016

নাছির উদ্দিন, মিরসরাই :
মিরসরাইয়ে ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম ফাতেমা আক্তার (২০)। সোমবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাতে উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের নজিম উদ্দিন ভুঁইয়া বাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের স্বামী শহিদুল ইসলামকে (৩০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, গত দেড় বছর পূর্বে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী সদর থানার উত্তর সুল্লিয়া গ্রামের খুরশিদ আলমের মেয়ে ফাতেমার সাথে মিরসরাইয়ের হিঙ্গুলী ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মুন্সি মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলামের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা একে অপরকে ভালোবেসে পরিবারের অমতে ঢাকায় এক আতœীয়ের বাড়ীতে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে শহিদের পরিবার তা কোন ভাবে মেনে নেয়নি। গত ৬ মাস পূর্বে পরিবারের মতামতে শহীদ স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসে। বর্তমানে ফাতেমা ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলো বলে জানা যায়। এদিকে ফাতেমা বাড়ীতে থাকলেও স্বামী শহিদ ঢাকায় একটি দোকানে চাকরি করেন। মাঝে মধ্যে ছুটিতে বাড়ীতে আসেন। বাড়ীতে শহিদের মা এবং বোন যৌতুকের জন্য তার স্ত্রীর উপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। পরে এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য আদালতে শালিসও হয়েছিল। ঘটনার দিন বিকেলে ফের পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে বাড়ীর সবাই এসে তা সমাধান করেন। রাতে প্রতিদিনের ন্যায় ফাতেমা ঘুমাতে যায়।
পরদিন সকাল ৯টায়ও শহীদ এবং ফাতেমা ঘুম থেকে না ওঠায় তাদেরকে জাগ্রত করার জন্য দরজায় কড়া নাড়েন শহীদের মা। এ সময় শহীদের ঘুম ভাংলে তিনি দেখতে পান স্ত্রী কক্ষে থাকা সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। পরে তিনি ফাতেমাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে খাটে শুয়ে দেখতে পান সে মারা গেছে। পরে তিনি বাড়ীর সবাইকে বিষয়টি জানান। এদিকে ঘটনার পর পরিবারের সবাই পালিয়ে গেছে। এক পর্যায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জোরারগঞ্জ থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতাহাল করে লাশটি ময়না তদন্তের জন্য থানায় নিয়ে আসে। এসময় শহিদও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো।
এদিকে নিহতের বাবা খুরশেদ আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদেরকে না জানিয়ে তারা নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করার পর থেকে ঢাকায় বসবাস করে। গত ৬ মাস পূর্বে আমার মেয়েকে তার গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে যায়। বাড়ী নেয়ার পর শহিদের মা এবং বোন আমার মেয়ের মাধ্যমে চার লাখ টাকা যৌতুক দাবী করেন। তাদের দাবী মেটাতে না পারায় তারা বিভিন্ন সময় আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো। পরে আমার মেয়ে বাদী হয়ে এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিাযোগ করে। এ বিষয়ে সেখানে বৈঠকের মাধ্যমে যৌতুক দাবী ও নির্যাতন করবেনা মর্মে মুছলেকা দিয়ে মেয়েকে ঘরে নিয়ে যায় তার শশুর শাশুড়ি। ঘটনার ২দিন পূর্বেও মেয়ে আমাকে ফোনে জানায়, তারা টাকার জন্য আগের মত নির্যাতন শুরু করছে। তার স্বামীও আগের মত দেখতে পারে না। তিনি যেন দ্রুত এসে তাকে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে লাশের সুরতাল প্রতিবেদন কারী জোরারগঞ্জ থানার এসআই সেকান্দার মোল্লা বলেন, লাশের গলায় কোন কিছু দিয়ে পেছানো একটা মোটা দাগ পাওয়া গেছে এবং নাক দিয়ে ফেনা বের হয়েছে। এছাড়া শরীরের আর কোন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত আনোয়ারুল্লাহ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না ন্তদন্তের পর জানা যাবে এটি হত্যা না আতœহত্যা। তবে প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী শহিদকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবার মামলা করলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।