রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

৬৭-তে বিয়ের সানাই রেলমন্ত্রীর

39619_f7

সাতষট্টি বছর বয়সী রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিয়ে। পাত্রী তিন বছরের পরিচিত। বিয়ে ফিরে যায়- এমন আশঙ্কায় মন্ত্রী নিজেও পাত্রীর নাম, বয়স ও পরিচয় এখনই বলতে নারাজ। তবে ঢাকা ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান পালনের প্রস্তুতি চলছে। গতকাল রেল মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে বিয়ের বিষয়ে সহাস্যে অনেকটা লাজুক ভঙ্গিতে মন্ত্রী বললেন, ইনশাআল্লাহ, বিয়ে করতে যাচ্ছি। আমার নতুন জীবনের জন্য দোয়া করবেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা ও কুমিল্লায় হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। কোন ঘটক বা কারও সহযোগিতায় বিয়ে হচ্ছে কি? রেলমন্ত্রী বলেন, কোন ঘটক না। পাত্রীর সঙ্গে আমার তিন বছর ধরে পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিয়ে করতে যাচ্ছি। তিন বছরের পরিচয়কে প্রেম বলা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন বছর থেকে শুধু পরিচয়। এই পরিচয় থেকেই বিয়ের সিদ্ধান্ত। এর বেশি কিছু নয়। কোন প্রেম-ট্রেম নয়। রাষ্ট্রীয় এত বড় দায়িত্বে থেকে এই বয়সে কি প্রেম করার সময় আছে? হবু বউয়ের পরিচয় জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, পাত্রী মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেছেন। এরই মধ্যে তিনি আইন পাসও করেছেন। বিয়ের পর যদি আইন পেশায় যেতে চান তাহলে সেটি তার ইচ্ছা। এ ব্যাপারে আমার দিক থেকে কোন ধরনের আপত্তি থাকবে না। পাত্রীর নাম ও বয়স কত? এমন প্রশ্নে কিছুটা সময় গম্ভীর হয়ে যান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। কিছুক্ষণ থেমে তিনি বলেন, মেয়েটি গ্রামের সহজ সরল সাধাসিধে। আপনারা ধীরে ধীরে সবকিছু জানতে পারবেন। এখন এত প্রশ্ন করার কি দরকার? হবু বর রেলমন্ত্রী বলেন, মেয়েটি মাস্টার্স পাস করে আইনেও পড়েছেন। তাই তার বয়স কত হতে পারে এ বিষয়ে সহজেই বুঝতে পারছেন। আন্দাজ করেও বলে দিতে পারেন। তবে এটুকু বলতে পারি পাত্রী পরহেজগার, বোরকা ছাড়া চলাফেরা করেন না। ভাল পরিবার ও বংশের মেয়ে। তার বাড়ি কুমিল্লায়। এর বেশি বলা যাবে না বা বলা ঠিকও হবে না। মেয়েটির নাম জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, নাম এখনই বলা যাবে না, যদি বিয়ে ফিরে যায়! কুমিল্লা জেলার যে কোন উপজেলায় তার বাড়ি। এটুকু বলা যায়। ৬৭ বছর বয়সে কেন বিয়ের এই সিদ্ধান্ত- এমন প্রশ্নে রেলমন্ত্রী বলেন, দেখলাম মানুষের জীবনের শেষ বয়সে একজন সঙ্গিনী দরকার, যাতে পরবর্তী জীবনে নিঃসঙ্গ না থাকতে হয়, বাকি জীবনটা ভালভাবে কাটানো যায়। চিন্তা করেছি বিয়ের পর নতুন বউকে নিয়ে ঢাকায় সংসার পাতবো। গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় রেলমন্ত্রীর বিয়ের বিষয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা না হলেও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানানো হয়, রেলমন্ত্রীকে মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে সংসারজীবন শুরু করার কারণে। শিগগিরই তিনি ওই বাসা বুঝে পাবেন। ওদিকে গত মার্চেই বিয়ের কথা ইনিয়ে বিনিয়ে সংসদকে জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি বলেছিলেন, আমাকে চিরকুমার বলা ঠিক হবে না। ওই দিন জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নেতা হাজী সেলিমের বক্তব্য ধরে রেলমন্ত্রী এ কথা বলেন। সংসদে সম্পূরক প্রশ্ন করার সময় কবি হেলাল হাফিজের একটি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে হাজী সেলিম বলেন, এখন যৌবন যার শ্রেষ্ঠ সময় তার। মূল কবিতার লাইন থেকে ‘যুদ্ধে যাওয়ার’ শব্দটি বাদ দেন সেলিম। রেলমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ঢাকার এই সংসদ সদস্য বলেন, তিনি চিরকুমার হিসেবেই বেশি পরিচিত। জবাব দিতে গিয়ে শুরুতেই রেলমন্ত্রী বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য প্রশ্ন উত্থাপনের আগে আমাকে চিরকুমার উল্লেখ করেছেন। আমি মনে করি, এটা বলা ঠিক হবে না, এটা আপাতত। মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে হাসির রোল পড়ে যায় সংসদে। অনেককে টেবিল চাপড়াতেও দেখা যায়। উল্লেখ্য, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বসুয়ারা গ্রামে ১৯৪৭ সালের ৩১শে মে জন্মগ্রহণ করেন মুজিবুল। তথ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মুজিবুল। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ১৫ই সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মুজিবুল। ২০১৩ সালের ২১শে নভেম্বর পুনঃবণ্টনকৃত মন্ত্রিপরিষদে মুজিবুল রেলপথ এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এবারের মেয়াদেও গত ১২ই জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান কুমিল্লা-১১ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক।