ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করার জন্য ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান। গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘সহিংসতা ও নৈরাজ্য হলে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে’- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে নয়াপল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। মো. শাহজাহান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় তিনি ফ্যাসিস্ট নেতা। আমরা প্রত্যাশা করবো, হরতালকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনরা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতাসীনরা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে সমপ্রচার নীতিমালা, গণবিরোধী কালাকানুন তৈরি করছে। ‘বিএনপির জোটে ভাঙন দেখা দিয়েছে’- আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় জোট ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। তা ব্যর্থ হয়েছে। এবারও কেউ বিভক্ত করতে পারবে না। বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার প্রতিবাদে ২০ দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালন হবে জানিয়ে বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এই মুহূর্তে হরতাল দিতে বাধ্য হয়েছে। ২০ দল শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করতে চায়। আশা করছি ন্যায়বিচারের দাবিতে ডাকা হরতাল মানুষ সর্বাত্মকভাবে পালন করবে। হরতালে আগের চেয়ে বেশি জনসম্পৃক্ত হবে। জোট ছাড়াও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমর্থন জানাবে। হরতালের আগে সারা দেশে গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, সোমবারের হরতাল বানচাল করতে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে সরকার বিরোধী দলের ওপর জুলুম নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ধারবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির নামে নিপীড়ন ও হয়রানি করছে। আমরা অবিলম্বে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করছি। হরতালের আওতামুক্তের তালিকা তুলে ধরে মো. শাহজাহান জানান, হজযাত্রীদের যানবাহন, খাওয়ার হোটেল, ওষুধের দোকান, ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্স এবং সংবাদ মাধ্যমের এবং সাংবাদিকদের ব্যবহৃত যানবাহন ও লাশ বহনকারী গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ২০ দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল সফল করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এই আহ্বান জানান। এছাড়া দেশবাসীকে হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এজাজ হোসেন। এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে নয়াপল্টন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার চেষ্টা করে বিএনপি। এ সময় গুলি ছুড়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। কিছুক্ষণ পর অদূরে স্কাউট ভবনের সামনে ৫-৬টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে উঠে আশপাশে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ওদিকে ২০ দলীয় জোটের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। গতকাল সন্ধ্যায় দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত এ বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মহিদুল ইসলাম হিরু, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা করিম সরকারের নেতৃত্বে মিছিলে অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থক যোগ দেয়।
হরতাল বানচালে দেশব্যাপী গণগ্রেপ্তার: বিএনপি
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ২০ দলের ডাকা আজকের হরতাল বানচাল করতে সরকার সারা দেশে বিরোধী নেতাদের গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণগ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আজকের হরতাল বানচাল করতে সরকার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তল্লাশির নামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন ও হয়রানি করছে। সারা দেশে গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, গতকাল বাগেরহাটে বিএনপি নেতা আজাহার মোল্লা, পৌর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাইউল শেখসহ ৫ জন, খুলনার ফুলতলা উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাবু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক পারভেজ ভূঁইয়া, চালনা কলেজ ছাত্রদল সভাপতি জিএম সুমনসহ ৬ জন, মাগুরায় বিএনপি নেতা বাচ্চু শেখ, রেজাউল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, তুষার আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, মো. মোস্তফা, তোরাব আলীসহ ১১ জন, নোয়াখালীতে ছাত্রদল নেতা হারুন, নারায়ণগঞ্জে মহানগর যুবদল নেতা মো. মাসুদ, বিএনপি নেতা ফারুক আহমেদসহ ১০ জন, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা পলাশ, মুন্সীগঞ্জ জেলায় শ্রীনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন শাহজাহান, হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রদল সভাপতি সাদেকুর রহমানসহ ৯ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার বিরোধী দলকে দমন করার হীন চক্রান্তের অংশ হিসেবে নেতা-কর্মীদেরকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে হেনস্তা করছে। গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের নামে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা শান্তিপূর্ণ হরতালকে বানচাল এবং নেতাকর্মীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যেই দেশব্যাপী গ্রেপ্তারের হিড়িক শুরু হয়েছে। জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় আঁচ করতে পেরে জোর করে ক্ষমতা গ্রহণের শুরু থেকেই ক্ষমতাসীনরা দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কব্জায় এনে দেশব্যাপী তাণ্ডবের মহাযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছে। এসব করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে-ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে জনরোষের মুখে দেশত্যাগের পথও যেন বন্ধ না হয়ে যায়। মির্জা আলমগীর বলেন, আদালতের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতেই সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার। এই আইনের দ্বারাই দেশের প্রধান নির্বাহী অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীকেই বিচার বিভাগের ওপর খবরদারি করার গ্যারান্টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাশের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, নির্যাতনের মাত্রা যতই বাড়বে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা ততই সুসংগঠিত হয়ে চলমান আন্দোলন আরও বেগবান হবে। স্বৈরাচারের পতন এবং গণতন্ত্রের বিজয় অর্জিত হবেই হবে। দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে আজকের হরতাল পালনের আহ্বান জানান মির্জা আলমগীর।