গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করতে বিএনপি’র নেতৃত্বে ধ্বংসযজ্ঞ এবং সাধারণ নিরীহ লোকদের হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে এই অপরাধ সংঘটনের জন্য বিএনপি নেত্রীকে একদিন অবশ্যই দায় বহন করতে হবে। যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিক, যুবলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক, এমপি ও সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ বক্তৃতা করেন। শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে অতীতের মতো ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে এবং সকল ধরনের বদনাম থেকে মুক্ত থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি বলেন, যুবলীগ স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং ১৯৭৫-এর পরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সকল আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিল। এ জন্য আগামী দিনে দেশের জন্য লড়াই-সংগ্রামে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকরা ও দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ থাকায় ২০১৪ সালে জানুয়ারি দেশের গণতন্ত্র ভণ্ডুল করতে পারেনি।শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর সকল যুবককে জাতি গঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যুবলীগ গঠন করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল জাতীয় কার্যক্রমে দেশের যুবকদের অবদান রয়েছে। এ জন্য স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যুবকদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত। তিনি বলেন, তারা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনপ্রিয় যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করে। এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর দেশব্যাপী যুব নেতাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় এবং তাদের হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি মিথ্যা প্রচারে সিদ্ধহস্ত। তিনি বলেন, ‘নিজেরাই একটি অপরাধ করার পর তারা সহজেই অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিতে পারে, ১৯৭৫ সাল থেকে তারা এসব করে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানকে খন্দকার মোশতাক সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন। কারণ তিনি (জিয়া) ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। জিয়ার সঙ্গে যোগসাজস করে মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিদেশে পাঠিয়ে সেখানে তাদের পুনর্বাসিত করেছিল। তাদের সহযোগী শমসের মবিন চৌধুরী এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছিল। তিনি এখন বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার ব্যাপারে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধানে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার নিষিদ্ধ করার জন্য ভোটার হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের এই অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পুনর্বাসিত করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া ও মোশতাক সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত করে দেশে খুনীদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির দিক-নির্দেশনায় একটি দেশ কখনো সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর পরই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। তারা হত্যা, ষড়যন্ত্র, দারিদ্র্য ও অনুন্নয়ন ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় দেশের জনগণ ১৯৯৭ সালে জনগণের সরকারের সেবা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তিনি বলেন, প্রতিটি খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ৫ বছরে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। কারণ দল সংরক্ষিত গ্যাস বিক্রি করে দিতে একমত হয়নি। তিনি বলেন, এই সুযোগ নিয়ে যুদ্ধাপরাধীরা খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নারীদের নির্যাতন এবং অন্যান্য মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল, বাংলাদেশে তাদের কোন ঠাঁই নেই। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে দেয়া রায় একের পর এক কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, বিচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা চাপের সম্মুখীন। কিন্তু এই বিচার ১৯৭১ সালের ঘটনার শিকার ও তাদের আত্মীয়স্বজনের মানবাধিকার রক্ষা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, যুদ্ধাপরাধীদের চেয়ে বরং জনগণের মানবাধিকার রক্ষা করা জরুরি। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কোন চাপের কাছে মাথা নত করবে না। কারণ ১৯৭১ সালেও বাঙালিরা তা করেনি। তিনি বলেন, একটি বিজয়ী জাতি কোন চাপের কাছে মাথা নত করতে জানে না। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইচ্ছা থাকলে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী এবং বঙ্গবন্ধু যা শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেই চেতনায় কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাইজেশনের সুযোগ নিয়ে কাজ করার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ‘শিক্ষা ও আয়ের’ সুযোগকে যুবকদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি ১৯৯০ সালের স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের তিন শহীদ নূর হোসেন, ফাত্তাহ ও বাবুলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, একটি সুখি-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা নজীর স্থাপন করে গেছে। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা কর্মসংস্থানের জন্য অন্যদের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং স্বকর্মসংস্থান খুঁজে নেওয়ার জন্য যুবকদের প্রতি আহ্বান জানান।