ত্রুটিপূর্ণ বোলিংয়ের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটে সোহাগ গাজীকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। সংবাদ শুনে অন্য সব ক্রিকেটপ্রেমীদের মতোই কষ্ট পেয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক রাজ। কেননা তিনি জানেন নিষিদ্ধ হওয়ার পরবর্তী সময়টুকু কত কষ্টের। কতটা যন্ত্রণার। জানেন বলেই সংবাদটি শুনে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন সোহাগকে। সাহস জুগিয়ে বলেছেন, নিষিদ্ধ হওয়ার সংবাদে যেন ভেঙে না পারেন। বরং সবকিছু সামলে নিতে আত্দবিশ্বাস রাখতে বলেছেন অফ স্পিনারকে।
বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে একমাত্র বোলার রাজ্জাক, যার নামের পাশে লেখা ২০৭ উইকেট। এই বাঁ হাতি স্পিনারের ক্যারিয়ারটা একেবারেই নিশ্ছিদ্র ছিল না। ২০০৮-২০০৯ সালে ত্রুটিপূর্ণ অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন রাজ্জাক। এরপর বিসিবির তৎকালীন কোচ সালাউদ্দিনের তত্ত্ব্বাবধানে নিজেকে শুধরে নেন এবং আইসিসির কাছে পরীক্ষা দিয়ে ফিরে আসেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। নিষেধাজ্ঞার সে সময়টুকু কতটা দুর্বিসহ ছিল, সেটা ভালো করেই জানেন। সে সব কথা স্মরণ করেই সাহস জুগিয়েছেন সোহাগকে, ‘খবরটি শুনার পরই সোহাগকে ফোন করি। আমি জানি সংবাদটি শোনার পর তার মনের অবস্থা। সে যাতে ভেঙে না পড়ে এবং মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত রাখে, সেজন্য আমি সাহস জুগিয়েছি। আমার কথা বলেছি। জানিয়েছি কীভাবে আমি সব প্রতিকূল অবস্থাকে সামাল দিয়ে আবার ফিরেছি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।’ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরাটা খুব কঠিন নয় বলে মানেন রাজ্জাক, ‘আমি মনে করি কষ্ট করলেই সে আবার খেলতে পারবে ক্রিকেট। বোলিং অ্যাকশন শোধরানোর জন্য তাকে অনেক বেশি বেশি বোলিং করতে হবে। পায়ের ল্যাণ্ডিং নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি মনে করি তাতে আরও ক্ষুরধার হবে তার বোলিং। এজন্য নিজের উপর আস্থা রাখতে হবে। ধৈর্য্য রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এখন তার পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সবাইকে। সাহস দিতে হবে সবার। যাতে সে আত্দবিশ্বাস হারিয়ে না ফেলে।’
চাকার বোলার ধরার ‘ক্রাক ডাউন’ অপারেশনে এ বছর অনেক বোলারকেই অভিযুক্ত করেছে আইসিসি। ত্রুটিপূর্ণ বোলিংয়ের জন্য এ বছর নিষিদ্ধ করেছে সোহাগসহ আরও চার স্পিনারকে। মজার বিষয় নিষিদ্ধ সবাই অফ স্পিনার। সোহাগের সঙ্গে একই দিন নিষিদ্ধ হন জিম্বাবুয়ের প্রসপার উতসেয়া। গত আগস্টে নিষিদ্ধ হন পাকিস্তানের সাঈদ আজমল। জুলাইয়ে নিষিদ্ধ হন শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়েকে ও নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। সর্বশেষ ত্রুটিপূর্ণ অ্যাকশনের জন্য রিপোর্টেড হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনিল নারাইন, পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ। এছাড়ার ভারতের তিন অখ্যাত স্পিনার আদনান রসুল, সুর্য্য কুমার ও প্রেনেলান সুব্রাইয়েনও রয়েছেন।
গত পরশু সন্ধ্যায় বিসিবিকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে আইসিসি, তাতে সোহাগের হাত কতটুকু ভাঙে, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু লেখা নেই। তবে বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, ‘রিপোর্টে আমি দেখিনি কত ডিগ্রি হাত ভাঙছে তার। তবে শুনেছি ২৫ ডিগ্রি।’ বিসিবির আরেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘২৫ ডিগ্রি কিন্তু বেশি কিছু নয়। একটু কষ্ট করলেই শোধরানো যাবে। আমরা খুব দ্রুত একটি রিভিউ কমিটি গঠন করব। সেই কমিটির সদস্য সবাই বাংলাদেশের হতে পারেন। আবার বিদেশি কোনো বিশেষজ্ঞের কাছেও তাকে পাঠাতে পারি। কেননা সে আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন বোলার।’
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী একজন বোলার কোনোভাবেই কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি ভাঙতে পারবেন না। কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা দেওয়ার সময়ও সোহাগের বিশ্বাস ছিল তার কনুই কোনোভাবেই ১০ ডিগ্রির বেশি ভাঙে না। তাই আত্দবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু আইসিসির রিপোর্ট আসার পর তার মাথায় বাজ পড়েছে যেন! সে ভাবতেই পারছে না তার কনুই এতটা ভাঙে, ‘আমি ভাবতেই পারছি না আমার কনুই একটা ভাঙে। ক্রিকেট আমার ধ্যান জ্ঞান। ক্রিকেট খেলতে পারব না ভাবতেই পারছি না।’ সোহাগের কনুই ২৫ ডিগ্রির মতো ভাঙলেও আজমল ও সেনানায়েকের কনুই ভাঙে ৪৩ ডিগ্রি। তারা যদি শুধরে ফেরার আশা করেন, তাহলে সোহাগ কেন পারবেন না? এটাই জিজ্ঞাস্য আব্দুর রাজ্জাকের। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে যার বোলিং অ্যাকশনকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছিলেন অশোকা ডি সিলভা ও ড্যারেল হারপার।