সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে কি না সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ রবিবার আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। রাজধানীর শেরে বাংলানগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) মিলনায়তনে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারও (পিএসও) উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তার যে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি, তাতে সেনাবাহিনী নিয়োগের সম্ভাবনা কম বলেই নির্বাচন কর্মকর্তাদের ধারণা। পুলিশ এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেও একই ধারণা মিলেছে। এ ছাড়া আজকের বৈঠকের জন্য তৈরি কার্যপত্রেও সেনা নিয়োগ বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা নেই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আজকের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে তা পর্যালোচনা করে কমিশন সেনানিয়োগ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন সেনা মোতায়েন ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।গত ১৩ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে ইসির মতবিনিয়ম সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ভোটের দিন র্যাব ও বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে।আজকের বৈঠকের জন্য প্রস্তুত কার্যপত্রে নির্বাচনী নিরাপত্তার উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে মেটাল ডিটেক্টর বসিয়ে চেকিংয়ের ব্যবস্থা, ভোটের দিন কেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ ও দিয়াশলাই, লাইটারসহ দাহ্য পদার্থ বহনে কড়াকড়ি আরোপ করা, বৈদ্যুতিক হিটার বা যেকোনো ধরনের চুলা ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া-আসার জন্য আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় নিবিড় টহলের ব্যবস্থা নেওয়া।কার্যপত্রে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটিতে ভোটের আগে-পরে অন্তত চার দিনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনায় নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার ভিডিপির ৬৫ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত রাখার কথা বলা হয়েছে। কার্যপত্রে আরো বলা হয়েছে, ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের টিম থাকবে। ভোটের দিন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে অন্তত ২৮৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। ভোটের আগে-পরে চার দিন উত্তরে ৯, দক্ষিণে ১৪ ও চট্টগ্রামে ১০ জন বিচারিক হাকিমও নিয়োজিত থাকবেন। এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই বিএনপির পরামর্শক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘শত নাগরিক’ এবং বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটের সাত দিন আগেই সেনা মোতায়েন দাবি করে। সেনাবাহিনী নিয়োগের পক্ষে মত প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চেয়েও ব্যর্থ হয় ড. এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আবার বর্তমান কমিশন উপজেলা নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করলেও নির্বাচনী সহিংসতা ও ভোট ডাকাতি বন্ধ করা যায়নি।২৫ এপ্রিলের পর তিন সিটিতে বহিরাগত নিষিদ্ধ : তিন সিটিতে ২৫ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে হবে। এ সময় মোটরসাইকেল ও ২৭ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে কিছু যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ ছাড়া ২৬ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো জনসভা আহ্বান, এতে যোগদান, কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। তবে প্রার্থী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যক্তি এবং জাতীয় হাইওয়েসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।