সুষ্ঠু ও আবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সাত দফা ঘোষণা দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় সংকট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি। খালেদা জিয়ার প্রস্তাবগুলো হলো-
১. জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।
২. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। যাতে, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়। সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়।
৩. নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
৪. নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।
৫. নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদূষ্ট ও বিতর্কিত হিসাবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে।
৬. সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া সব সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।
বক্তব্যের শুরুর দিকে খালেদা জিয়া বলেন, গত ৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার অজুহাতে এককভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। সেসময় সমঝোতার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছিল তারা। কিন্তু এখন তারা নিজেদের অঙ্গীকার মানছে না। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সরকার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিজেদের কব্জায় রাখতেই জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। একইভাবে বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অভিশংসনের আইন করেছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বকশীবাজারে বিএনপির মিছিলে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ করে বলেন, আমাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু আমাকে মাইনাস করার সিদ্ধান্ত কেবল জনগণই নিতে পারেন। তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদ কার্যত বিরোধী দলশূন্য হয়ে পড়েছে। কোনো বিরোধী দল ৫ জানুয়ারিরর নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ৯৫ শতাংশ লোক নির্বাচন বর্জন করেছে। ভোটবিহীন নির্বাচনের এ সরকার জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।