শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সাগরের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

05_138526
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে; আরো এগিয়ে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত হবে।’
লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে চার বছর নিয়োজিত থেকে দেশের জন্য অসামান্য সম্মান ও গৌরব বয়ে আনা জাহাজ ‘বানৌজা ওসমান’-এর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রামের নেভাল বার্থে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংরক্ষণ এবং এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ওসমান দীর্ঘ ২৫ বছর দেশ-বিদেশে যে অসামান্য অবদান রেখেছে, তারই স্বীকৃতিস্বরূপ এ ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড দেওয়া হয়। এর আগে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বানৌজা ঈসা খাঁকে এবং গত সরকার আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বানৌজা বঙ্গবন্ধুকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা, যেখানে প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি সমদ্রপথে পরিচালিত হয়। সম্পদ আহরণ ও নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে সমুদ্র এলাকার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত ও নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে নৌবাহিনীকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং চলতি বছর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বিজয়ের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্র এলাকা এবং এ সম্পদের ওপর আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
সম্পদ আহরণসহ সমুদ্র এলাকার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে নৌবাহিনীকে আরো দক্ষ ও শক্তিশালী করতে সরকারের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও জানান শেখ হাসিনা। এসব পরিকল্পনা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময় মোট ১৬টি জাহাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে। দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজন করা হয়েছে। নেভাল এভিয়েশন ও আন-কনভেনশনাল ওয়ারফেয়ারের জন্য স্পেশাল ফোর্স সোয়াডস কমিশন করা হয়েছে। একটি শক্তিশালী নৌবহর গঠনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক দুটি করভেট চীনে নির্মাণাধীন, যা আগামী বছর নৌবহরে সংযোজিত হবে। দুটি সাবমেরিনও আগামী বছরের মধ্যে নৌবাহিনীতে সংযোজন করা হবে।’
পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় সাবমেরিন বার্থিং ও এভিয়েশন সুবিধাসংবলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটির কার্যপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নৌবাহিনী নিজস্ব অর্থায়নে খুলনা শিপইয়ার্ডে দুটি কনটেইনার শিপ, প্রথমবারের মতো নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট তৈরির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো আমাদের নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আরো বড় আকারের এবং শক্তিশালী দুটি বড় পেট্রোল ক্রাফট তৈরি শুরু হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প বিদেশের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে।’
শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশে নৌবাহিনীকে শক্তিশালীকরণ ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ১৯৭৪ সালে ‘দ্য টেরিটরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট’ প্রণয়নের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের নৌঘাঁটি ঈসা খাঁয় পৌঁছালে নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব তাঁকে স্বাগত জানান। পরে নৌবাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়। এরপর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড পাওয়া নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ওসমানের ক্যাপ্টেনের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বানৌজা ওসমান জাহাজে কেক কেটে সম্মাননা উৎসব পালন করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিমানবাহিনীর প্রধান এবং সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন।