প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় সমুজ্জ্বল সশস্ত্র বাহিনী জাতির জন্য গর্ব। তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সুশৃঙ্খল, দক্ষ, আধুনিক এবং সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে দেখতে চায়। এজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই আমরা করবো।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০১৪ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই বাহিনীর অব্যাহত সমৃদ্ধি চাই। আমরা আশা করি সুশৃঙ্খল ও পেশাগত দক্ষতা বজায় রেখে জাতি গঠনে সশস্ত্র বাহিনী আরো অবদান রাখবে।
সংবর্ধনায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এম মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাদের স্ত্রীগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী এবং কূটনীতিকবৃন্দ সংবর্ধনায় যোগ দেন।
সংবর্ধনায় বক্তব্য প্রদানের পরে প্রধানমন্ত্রী সামরিক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিক এবং অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিনি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানান এবং তাদের অব্যাহত অগ্রগতি, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবস বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর বীর যোদ্ধারা একত্রে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে।
সম্মিলিত আক্রমণে দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে জন্ম লাভ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যদেরকে এবং ত্যাগকে জাতি সর্বদা স্মরণ করবে।
এ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
তিনি দখলদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগের কথাও স্মরণ করেন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য ও যুদ্ধাহতদের প্রতি সমবেদনা জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আগত কয়েকটি বন্ধুপ্রতীম দেশের সম্মানিত অতিথিদের তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি একটি আধুনিক ও চৌকষ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বহু সামরিক প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোর উন্নয়নে সামরিক একাডেমী, সম্মিলিত সামরিক স্কুল ও প্রতিটি কোরে প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু ইশাখা নৌঘাঁটির উদ্বোধন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে যুগোশ্লাভিয়া থেকে দু’টি জাহাজ কিনেছিলেন যেগুলো ৩৯ বছর পরও সচল রয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একইভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মিগ-২১, যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান ও রাডার কিনেছিলেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং দেশের বাইরে এ প্রতিষ্ঠানটির পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার জন্য পরিচিতি লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অভ্যন্তরীণ সংকটে তাদের সেবাকর্মের মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, তারা সড়ক নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে। তাছাড়া তারা জাতি গঠন কার্যক্রম ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ে বেসামরিক প্রশাসনকেও সহায়তা করছে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মিাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘে সর্বাধিকসংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক শান্তিরক্ষী বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কর্তব্য পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তিনি এই শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনকের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আঞ্চলিক সদর দপ্তরসহ ছয়টি নতুন ইউনিট গঠন ছাড়াও সিলেটে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার রামু একটি নতুন পদাতিক বিভাগ প্রতিষ্ঠারও অনুমোদন দিয়েছে। তাছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও অপর একটি পদাতিক বিভাগ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য মাল্টি ব্যারেল রকেট লাঞ্চার এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ার জাহাজের চর এলাকার জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে দীর্ঘমেয়াদী ভূমি লীজ দিয়েছে। তিনি বলেন, চর ক্যারিং এর ভূমি লীজ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএমএ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের সময় দু’বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। সৈনিকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ফাউন্ডেশন কোর্সের সময়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক, ইলেক্ট্রোনিক এবং কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিবিএ, পদার্থবিদ্যা এবং অর্থনীতি বিষয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, সশস্ত্র বাহিনী প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, সশস্ত্র বাহিনী মেডিকেল কলেজ এবং বাংলাদেশ পিচ সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ব্রিগেড এবং বিভিন্ন ছোট ও বড় ইউনিটের সমন্বয়ে ৫২ ইনফ্রান্ট্রি ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সশস্ত্র বাহিনী হাসপাতাল আরো আধুনিক করা হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণে মেজর পদে এফআরসিএস এবং এফসিপিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসকদের সরাসরি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পটুয়াখালীতে একটি নতুন নৌ-ঘাঁটি উদ্বোধন করা হয়েছে। কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি সাব-মেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য মেডিকেল সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে। সদস্য বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন এ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে। তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য এককালীন ভাতা ও মঞ্জুরি দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আবাসিক সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। মিরপুর ডিওএইচএস-এ তিনটি বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এখানে ৫৬ টি পরিবার ফ্ল্যাট পাবেন। সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী এবং স্বাবলম্বী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০১৪ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই বাহিনীর অব্যাহত সমৃদ্ধি চাই। আমরা আশা করি সুশৃঙ্খল ও পেশাগত দক্ষতা বজায় রেখে জাতি গঠনে সশস্ত্র বাহিনী আরো অবদান রাখবে।
সংবর্ধনায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এম মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাদের স্ত্রীগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী এবং কূটনীতিকবৃন্দ সংবর্ধনায় যোগ দেন।
সংবর্ধনায় বক্তব্য প্রদানের পরে প্রধানমন্ত্রী সামরিক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিক এবং অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিনি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানান এবং তাদের অব্যাহত অগ্রগতি, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবস বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর বীর যোদ্ধারা একত্রে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে।
সম্মিলিত আক্রমণে দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে জন্ম লাভ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যদেরকে এবং ত্যাগকে জাতি সর্বদা স্মরণ করবে।
এ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
তিনি দখলদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগের কথাও স্মরণ করেন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য ও যুদ্ধাহতদের প্রতি সমবেদনা জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আগত কয়েকটি বন্ধুপ্রতীম দেশের সম্মানিত অতিথিদের তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি একটি আধুনিক ও চৌকষ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বহু সামরিক প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোর উন্নয়নে সামরিক একাডেমী, সম্মিলিত সামরিক স্কুল ও প্রতিটি কোরে প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু ইশাখা নৌঘাঁটির উদ্বোধন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে যুগোশ্লাভিয়া থেকে দু’টি জাহাজ কিনেছিলেন যেগুলো ৩৯ বছর পরও সচল রয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একইভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মিগ-২১, যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান ও রাডার কিনেছিলেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং দেশের বাইরে এ প্রতিষ্ঠানটির পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার জন্য পরিচিতি লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অভ্যন্তরীণ সংকটে তাদের সেবাকর্মের মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, তারা সড়ক নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে। তাছাড়া তারা জাতি গঠন কার্যক্রম ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ে বেসামরিক প্রশাসনকেও সহায়তা করছে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মিাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘে সর্বাধিকসংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক শান্তিরক্ষী বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কর্তব্য পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তিনি এই শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনকের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আঞ্চলিক সদর দপ্তরসহ ছয়টি নতুন ইউনিট গঠন ছাড়াও সিলেটে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার রামু একটি নতুন পদাতিক বিভাগ প্রতিষ্ঠারও অনুমোদন দিয়েছে। তাছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও অপর একটি পদাতিক বিভাগ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য মাল্টি ব্যারেল রকেট লাঞ্চার এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ার জাহাজের চর এলাকার জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে দীর্ঘমেয়াদী ভূমি লীজ দিয়েছে। তিনি বলেন, চর ক্যারিং এর ভূমি লীজ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএমএ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের সময় দু’বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। সৈনিকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ফাউন্ডেশন কোর্সের সময়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক, ইলেক্ট্রোনিক এবং কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিবিএ, পদার্থবিদ্যা এবং অর্থনীতি বিষয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, সশস্ত্র বাহিনী প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, সশস্ত্র বাহিনী মেডিকেল কলেজ এবং বাংলাদেশ পিচ সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ব্রিগেড এবং বিভিন্ন ছোট ও বড় ইউনিটের সমন্বয়ে ৫২ ইনফ্রান্ট্রি ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সশস্ত্র বাহিনী হাসপাতাল আরো আধুনিক করা হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণে মেজর পদে এফআরসিএস এবং এফসিপিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসকদের সরাসরি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পটুয়াখালীতে একটি নতুন নৌ-ঘাঁটি উদ্বোধন করা হয়েছে। কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি সাব-মেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য মেডিকেল সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে। সদস্য বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন এ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে। তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য এককালীন ভাতা ও মঞ্জুরি দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আবাসিক সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। মিরপুর ডিওএইচএস-এ তিনটি বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এখানে ৫৬ টি পরিবার ফ্ল্যাট পাবেন। সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী এবং স্বাবলম্বী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।