সরকারের সিদ্ধান্তের পর এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও র্যাবের গুলিতে পঙ্গু লিমন মামলা থেকে অব্যাহতি পায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে র্যাবের দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলা প্রত্যাহার হলেও সরকারি কাজে বাধা দঁওয়ার মামলাটি ঝুলে আছে।এই মামলায় ঝালকাঠির আদালতে লিমনকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়। গুনতে হয় আইনজীবীর খরচ।ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সোমবার লিমনের মামলার হাজিরার দিন ছিল। তবে বিচারক না থাকায় সরকারি কাজে বাধাদানের মামলা থেকে সোমবারও অব্যাহতি পাননি লিমন হোসেন।লিমনের আইনজীবী আক্কাস সিকদার জানান, সোমবার এ মামলায় লিমনের অব্যাহতি আবেদনের শুনানির নির্ধারিত তারিখ ছিল। আদালতে বিচারক না থাকার কারণে অব্যাহতি আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকার পক্ষের এপিপি মোহাম্মদ হোসেন আকন খোকন সময়ের আবেদন করলে আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আরিফুজ্জামান আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।লিমন সোমবার আদালতে হাজির হননি। তিনি মামলার আইনজীবীর মাধ্যমে আগেই আবেদন করলে সোমবার তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। লিমনের আইনজীবী জানান, বিচারক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত লিমনকে ঝুলে থাকতে হচ্ছে। কারণ ভারপ্রাপ্ত বিচারকের অব্যাহতি দেয়ার এখতিয়ার নেই।২০১১ সালের ১১ মার্চ কলেজ ছাত্র লিমন হোসেন ঝালকাঠির রাজাপুর সাতুরিয়া গ্রামে গরু চড়াতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে আহত হন। র্যাব তাকে তখন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর আটক করে। এরপর তার বিরুদ্ধে র্যাব অস্ত্র ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানায় আলাদা ২টি মামলা দায়ের করে।
লিমনের এই ঘটনায় সারাদেশে তখন তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। লিমনের চিকিৎসা এবং সহায়তায় এগিয়ে আসেন অনেকে। গত বছরে ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দু’টি মামলাই প্রত্যাহরের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলাটি গত বছরের ২৯ জুলাই প্রত্যাহার করা হয় আদালতের মাধ্যমে। কিন্তু সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি গত এক বছরেও প্রত্যাহার করা হয়নি।
লিমনের আইনজীবী ডয়চে ভেলেকে জানান, এপর্যন্ত মামলাটি প্রত্যাহারের শুনানির জন্য নয়বার আদালত তারিখ দিয়েছেন। আর প্রতিবারই শুনানির দিন পিছিয়ে দেয়া হয়। লিমন এখন সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে সম্মান শ্রেণিতে পড়াশুনা করছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, মামলার প্রতি তারিখেই তাকে ঢাকা থেকে ঝালকাঠি যেতে হয়, যা তার জন্য খুবই কষ্টকর। আর তার মাসহ পরিবারের সদস্যরা এখনো রাজাপুরে নিজেদের গ্রামে থাকছেন না। তাঁরা পাশের উপজেলা কাউখালিতে বসবাস করছেন।লিমন জানান, এখন তিনি কৃত্রিম পা দিয়েই চলাফেরা করতে পারছেন। সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই হোস্টেলে থাকেন তিনি। গণবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার লেখাপড়ার খরচ বহন করছে। তবে হোস্টেলে থাকা খাওয়ার খরচ দিতে হয়। প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ তাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেয়। তা থেকে তিন হাজার টাকা থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ হয়। আর বাকি টাকা মাকে পাঠিয়ে দেন।লিমন বলেন, মামলা থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি শান্তি পাচ্ছেন না। তাই সরকারের কাছে তার আবেদন তার মামলাটি যেন দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়।