দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুর এক বছর। গতকাল ছিল এই নেতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তাকে স্মরণ করেছে গোটা বিশ্ব। এই উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা ৫৬ মিনিট) বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার শুরু হয়। ম্যান্ডেলার ৬৭ বছরের মানবসেবাকে স্মরণ করে ৬৭ সেকেন্ডের এ ঝংকারের আয়োজন করা হয়। এরপর তিন মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। প্রিটোরিয়ায় প্রার্থনা শেষে, ফুলেল শুভেচ্ছায় এই বিশ্বনেতাকে সম্মান জানান বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় ক্রিকেট দল এবং রাগবি দলের মধ্যে একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচেরও আয়োজন করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা মাদিবাকে স্মরণ করব। দেশের ঐক্য, বিশ্ব শান্তি, উন্নয়ন ও সব দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকের জন্য সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন দেখেছেন মাদিবা। আসুন আমরা পুনরায় প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। ম্যান্ডেলা তার নিজ দেশের লোকদের কাছে মাদিবা নামেই বেশি পরিচিত। এটি তার গোষ্ঠী নাম। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটে বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলার। বর্ণবাদ পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি। বিভিন্ন সময়ে মোট ২৭ বছর তার কারাগারে কেটেছে। আর ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পান তিনি। ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বৈরশাসককে শুধু উচ্ছেদই করেননি; গণতন্ত্রকেও সুসংহত করেছিলেন। প্রায় এক শতাব্দীর দীর্ঘ জীবনকালের পুরোটাই কেটেছে মানবতার মুক্তির সংগ্রামে। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অগ্রগতির ধারা সূচনা করেছেন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে একাধিকবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৬২ সালে গ্রেফতারের পর তাকে টানা ২৭ বছর কারাভোগ করতে হয়েছে। পাঁচ বছর দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেন। অবসর জীবনে তিনি মানবতা, শিক্ষা ও শান্তির জন্য নিজেকে নিবেদিত রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এই নেতা ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের আসন করে নিয়েছিলেন। ভয়কে জয় করে সামনে এগিয়েছিলেন। তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা। বিবিসি, আল জাজিরা।