সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

শ্বাসরুদ্ধকর সিডনির ১৬ ঘণ্টা, বন্দুকধারী নিহত

451102-65fb1aac-8477-11e4-917d-bf0f063a4996

অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জিম্মি নাটকের অবসান হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে জিম্মি সংকটের এ অবসান ঘটল গতকাল। সব জিম্মিকে নিরাপদে ক্যাফে থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, বন্দুকধারী গুলিতে নিহত হয়েছেন। আর ডেইলি মেইল একজন জিম্মি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি, আলজাজিরা ও এনডিটিভির।এর আগে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সিডনিতে ক্যাফেতে অভিযান চালায় পুলিশ ও বিশেষ বাহিনী। এ সময় ভিতর থেকে উচ্চ শব্দ শোনা গেছে। পরে কয়েকজন জিম্মিকে ভবনের ভিতর থেকে স্ট্রেচারে করে বের করতে দেখা গেছে। কয়েকজন নিরাপদেও বের হয়েছেন। ওই ক্যাফেতেই ৪০ জনের মতো বেসামরিক নাগরিককে জিম্মি করে রেখে ছিল বন্দুকধারী। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বন্দুকধারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে। ইরানি বংশোদ্ভূত ওই বন্দুকধারীর নাম ম্যান হারোন মনিস। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। বিবিসির খবরে বলা হয়- মনিস অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। তার সঙ্গে আত্মীয়স্বজন কেউই থাকত না। নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে লিন্ডট চকোলেট ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে লোকজন জিম্মি করার খবর আসে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ নিরাপত্তা বাহিনী ক্যাফেটি ঘিরে ফেলে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, একদিকে যখন স্থানীয় প্রশাসন সমঝোতার চেষ্টা করছে তখন অন্যদিকে দফায় দফায় জরুরি বৈঠকে বসছে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকের পর নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, জিম্মি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট জাতির উদ্দেশে দুই দফা ভাষণে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় সংকট নিরসনে মতৈক্যের কথা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা বিল শর্টেন। তিনি সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন দেওয়ার কথা জ্ঞাপন করেছেন। বিল শর্টেন বলেন, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় স্বার্থে এবং নিরাপত্তার ইস্যুতে আমরা এক এবং অভিন্ন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মার্টিন প্লেস এলাকায় যান চলাচলে সীমাবদ্ধতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি মার্টিন প্লেসসহ সিডনির জনগণকে নিরাপদে সরে থাকতে বলা হয়েছে।স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে সিডনি শহরের স্থল, নৌ ও আকাশ পথে ব্যাপক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাস, ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিডনি শহরের ওপর দিয়ে নিরাপত্তায় নিয়োজিত হেলিকপ্টার ছাড়া সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সিডনির হারবার ব্রিজ, অপেরা হাউসসহ বিশেষ বিশেষ স্থাপনাও। এ ছাড়া সিডনি এয়ারপোর্টেও বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ায় কর্ম ও ভ্রমণরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে নিরাপত্তার কারণে সিডনিতে মার্কিন কনস্যুলেট কার্যালয়ও খালি করে ফেলা হয়েছে। এ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেনভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারসহ বিশ্বনেতারা।