বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

শোকাবহ ১৫ই আগস্ট

36722_f5

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম শাহাদত বার্ষিকী আজ। শোকাবহ ১৫ই আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। জাতির জন্য কলঙ্কময় এক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই দিনে কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্তে কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের নির্মম বুলেটে সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন ইতিহাসের এই মহানায়ক। সারা দেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস হিসেবে দিবসটি পালিত হবে। শোক আর শ্রদ্ধায় পুরো জাতি স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিও উচ্চারিত হবে শোক দিবসের নানা অনুষ্ঠানে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবেও বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও শাখা কার্যালয়ে ওড়ানো হবে কালো পতাকা। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠান সরাসরি সমপ্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে শহীদ হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আরজু মনি, নিকট আত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুর নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল প্রমুখ। পুরো জাতি আজ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এই দিনের ঘটনায় শাহাদতবরণকারী সবাইকে স্মরণ করবে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
স্বাধীন সংগ্রামের জন্য একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, মরণপণ সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা এবং স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে ভূমিকা রেখে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন একটি ইতিহাস, জাতির স্বাধীন সত্তা আর ঐক্যের প্রতীক। তার ইস্পাত-কঠিন নেতৃত্বই জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ছিনিয়ে আনার প্রেরণা যুগিয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম-নিপীড়ন থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে তার এই আহ্বান বরণ করে নিয়েছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালো রাতের নৃশংস হত্যাকা ের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস তাকে পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখা হয়। কারাগারে থাকাবস্থায় তার মাথার ওপর ঝুলেছিল মৃত্যুর খড়গ। তবুও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি মহান এই নেতা। এ কারণে পাকিস্তানের স্বৈরশাসককেও নতি স্বীকার করতে হয়েছে তার কাছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রিয় এই নেতাকে তারা দেশে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরের ২১ বছর তার শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয় রাষ্ট্রীয় অবহেলায়।
সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এ ছাড়া বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং সংবাপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডির ৩২নং রোডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত হবে মোনাজাত ও কোরআন তেলওয়াত। এ ছাড়াও ১৫ই আগস্টে শাহাদাত বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য শহীদের বনানী কবর স্থানে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে ফাতেহা পাঠ ও মুনাজাত করা হবে। এদিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। একই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে। এ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবেন। এদিন বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে মিলাদ মাহফিল হবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সন্মেলন কক্ষে সর্বধর্ম প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। বাদ আসর বাংলাাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে। আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ই আগস্ট বিকাল ২টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শোক দিবস উপলক্ষে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মহিফিল, সাড়ে ১০ টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বেলা ১১ টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘ইসলাম প্রচার ও প্রসারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভা, দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বাযতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে জুমআর নামাযের পর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বিকাল ৪টায় একই স্থানে শোকগাথা আলোচনা সভা, সন্ধ্যা ৭ টায় মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভির পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য দলের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সকল শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সারা দেশে ব্যাপক আয়োজনে দিবসটির বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।

উৎস- মানবজমিন