Thursday, January 23Welcome khabarica24 Online

শর্ত ভেঙে যাত্রা করেছিল পিনাক-৬

35228_x1

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া শর্ত ভেঙে যাত্রা করেছিল দুর্ঘটনায় পড়া লঞ্চ পিনাক-৬। খারাপ আবহাওয়ায় যাত্রার অনুমতি না থাকলেও লঞ্চটি ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পথে স্রোতের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে যায়।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পিনাক-৬ লঞ্চটি প্রথম নির্মাণ হয়েছিল ১৯৯১ সালে। এর মালিক মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মেদিনীমণ্ডলের এবি সিদ্দিক কালু মিয়া। লঞ্চটির যাত্রী ধারণক্ষমতা সর্বাধিক ৮৫ জন। এর দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট। লঞ্চ জরিপের সময় অধিদপ্তর থেকে শর্ত বেঁধে দেয়া হয়- খারাপ আবহাওয়ায় লঞ্চটি যাত্রা করলে সেখানে ধারণক্ষমতার বেশি লোক ওঠানো যাবে না। লঞ্চটির জরিপ সার্টিফিকেটে স্ট্যাম্প দিয়ে ও লাল কালিতে এ শর্ত লেখা ছিল। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে গত সোমবার লঞ্চটি কাওড়াকান্দি থেকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ লোক নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এ ছাড়া পথিমধ্যে আরও দেড় শতাধিক যাত্রী ওঠানো হয়। গত সোমবার সকালে দুর্ঘটনার সময় পদ্মায় ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখানো হয়েছিল। ওই অবস্থায় ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের লঞ্চের চলাচল নিষেধ। নির্দেশ অমান্য করে যাত্রা করায় ঘাটের একদম কাছে এসেও লঞ্চটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী এক বছর পরপর লঞ্চের জরিপ করাতে হয়। কিন্তু পিনাক ৬-এর জরিপ করা হয়েছিল সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৭ই জুলাই। জরিপের মেয়াদ শেষ হলেও তা অস্থায়ী পারমিট হিসেবে বিশেষ টোকেন নিয়ে চলাচল করছিল। পিনাক-৬ লঞ্চের সর্বশেষ জরিপ করেন সমুদ্র অধিদপ্তরের সদরঘাট কার্যালয়ের মেরিন চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও চিফ সার্ভেয়ার মির্জা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, বিরূপ আবহাওয়ায় পিনাক-৬ লঞ্চটির ৮৫ জনের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি ছিল না। লঞ্চটির জরিপের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
সমুদ্র অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, মাওয়া ঘাটের লঞ্চের জরিপে আগে থেকেই নানা অনিয়ম চলে আসছে। মালিকদের দাপটের কারণে জরিপ কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় মালিকরা পছন্দের লোক দিয়ে জরিপ করিয়ে থাকেন। একের অধিক লঞ্চের মালিকরা একটি লঞ্চ জরিপ করিয়ে বাকি লঞ্চগুলোর সার্টিফিকেট নিয়ে থাকেন। ফলে সরজমিনে পরিদর্শন না করেই জরিপ কর্মকর্তারা সার্টিফিকেট দিয়ে দেন। এভাবে ফিটনেসে ঘাটতি রেখেই অসংখ্য লঞ্চ চলাচল করছে মাওয়া রুট থেকে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দুর্ঘটনাকবলিত পিনাক-৬ লঞ্চে কোন মাস্টার ছিল না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ পাস নিয়ে সুকানিরা ওই লঞ্চটি পরিচালনা করছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নৌপরিবহন পরিদর্শকরা টাকার বিনিময়ে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়ে থাকেন। শুধু মাওয়া-কাওড়াকান্দি ঘাট না, দক্ষিণাঞ্চলের সব লঞ্চঘাটে এ অনিয়ম চলে আসছে। গত সোমবার পুলিশ বাধা দিলেও মালিক সমিতি পিনাক-৬ লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রীসহ কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ছেড়ে দেয়। তবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দাবি করেছেন, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার জন্য লঞ্চগুলোকে নির্দেশ দেয়া ছিল। তদারক করার লোক না থাকায় লঞ্চমালিকরা কথা শোনেননি।