রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত

2_155028
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার তার নিজ দলের একাধিক নেতাসহ বিএনপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের নেতারা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘মুখফোঁড়রা অনেক কথাই বলেন। এটা তাদের স্বাধীনতা। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। আশা করি আপনারাও (সাংবাদিক) এটা গ্রহণ করবেন না।’ মঙ্গলবার সকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাজেদা চৌধুরী এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল, সুজিৎ রায় নন্দি প্রমুখ। সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘কে কী বলল তাতে কান দেবেন না। বঙ্গবন্ধু আমাদের যা দিয়ে গেছেন তা নিয়ে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি। আর ওয়াজেদ কে, জয় কে তা সবাই জানে।’
আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাভারে বাজার বাসস্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজের উদ্বোধন শেষে বলেছেন, দল করলে দলের নিয়ম মেনেই করা উচিত। দায়িত্বশীল পদে থেকে দলের জন্য ক্ষতিকর কোনো মন্তব্য কিংবা আচরণ করা সমীচীন নয়। তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়। সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। এছাড়া তিনি আমাদের দলের ভবিষ্যৎ নেতা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর অসম্মানজনক বক্তব্য গোটা মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় আবেগে চরম আঘাত। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী যে অপমানজনক কথা বলেছেন, তা কেবল চরম সীমা লংঘনকারীরাই বলতে পারে। মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ও বিকারগ্রস্ত না হলে কেউ এমন কথা বলতে পারে না। তিনি বলেন, সবসময়ই মন্ত্রী এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন ও লাগাম ছাড়া বক্তব্য দিয়ে গেছেন। ক্ষমতার শীর্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্যকে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, এ কারণেই হজ, হাজী, মহানবী (সা.) কে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক ভাষায় কটূক্তি করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন। বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের জোর দাবি জানান।
বিএনপির আরও দুই নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তার অপসারণের দাবি করেছেন। আলাদা দুটি অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি করেন। শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সামনে নজরুল ইসলাম খান লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা জানান এবং তার অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেন। আর রুহুল কবির রিজভী বলেন, মন্ত্রীর এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের সত্যিকার চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, লতিফ সিদ্দিকী বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীর দল আওয়ামী লীগের নেত্রী ভোটের আগে মাথায় হিজাব পরেন, হাতে তসবিহ নেন। কিন্তু পরে সব ভুলে যান। এসব ভোটের জন্য অভিনয়।’
লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি পাঠানো অন্যান্য সংগঠনগুলো হলো- ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ বিএমএল, জাতীয়তাবাদী ওলামা দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাতীয়তাবাদী ওলামা দল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ ও মহাসচিব এমএ আজিজ এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম প্রধানও মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যকে আমলে নিয়ে তাকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুবলীগ।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষোভ, প্রতিবাদ : লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে এসব বক্তব্যের জন্য মন্ত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এছাড়া মন্ত্রীর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।