পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরা অনিশ্চিত। নিউইয়র্কই হচ্ছে আপাতত তার ঠিকানা। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। অথবা কানাডায়ও চলে যেতে পারেন। কারণ, সেখানে অবস্থান করছেন তার মেয়ে ও বোন। নিউইয়র্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে মেক্সিকো চলে যান আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের এই সদস্য।জানা গেছে, দুই দিন মেক্সিকো অবস্থান করে শুক্রবার নিউইয়র্কে ফিরে আসেন লতিফ সিদ্দিকী। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এক প্রবাসীর গাড়িতে চড়ে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় যান তিনি। সঙ্গে স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য লায়লা সিদ্দিকীও রয়েছেন। নিউইয়র্কের প্রবাসীরা জানান, অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও মোটেও বিচলিত নন লতিফ সিদ্দিকী।নিউইয়র্কে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি জানান, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে মেক্সিকো থেকে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নামেন লতিফ সিদ্দিকী। এক সপ্তাহ আগেও মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করা এই আওয়ামী লীগ নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে কেউ বিমানবন্দরে আসেননি। সরকারি কোনো গাড়িও যায়নি বিমানবন্দরে।সূত্রমতে, ২ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার কথা ছিল। নিউইয়র্ক থেকে ঢাকাগামী বিমানের আগাম টিকিটও কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু বিতর্কিত ওই মন্তব্যের পর তিনি নিজেই টিকিট বাতিল করেন। মেক্সিকো যাওয়ার পর থেকেই তার স্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিদিনের খবরাখবর নিচ্ছেন। সরকার, বিরোধী দল কিংবা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের আপডেট খোঁজ নিচ্ছেন। বিশেষ করে শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের খবর জানার চেষ্টা করেছেন লতিফ সিদ্দিকী। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তিনি আপাতত দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সূত্রমতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিউইয়র্ক কিংবা কানাডায় থেকে যেতে পারেন লতিফ সিদ্দিকী।৩০ সেপ্টেম্বর মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে গুয়াদালাজারা শহরে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে যোগদান করার কথা ছিল লতিফ সিদ্দিকীর। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড নিজ হাতে গ্রহণ করার কথা থাকলেও যাননি তিনি। আওয়ামী লীগের এই বিতর্কিত নেতা জনরোষে পড়ার আশঙ্কা থেকেই অনুষ্ঠানটি এড়িয়ে যান। তবে গুয়াদালাজারা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত লতিফ সিদ্দিকীকে বিচলিত মনে হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকী এখন পর্যন্ত তার পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাননি। এ কারণে সরকার তাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। তবে সংবিধানের ৫৮(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী তাকে অপসারণের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফেরার পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের ফাইল প্রস্তুত। রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব দেশে ফিরলেই তার বিষয়ে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সরকারের কঠোর মনোভাব রয়েছে এখনো। জাতিসংঘ অধিবেশন থেকে ফিরেই ওইদিন রাতে গণভবনে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন তিনি। দলের সিনিয়র নেতাদের প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, লতিফ সিদ্দিকী শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতই করেননি, দলের শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঈদের পরই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা ডাকা হচ্ছে। সেখানেই তাকে দলীয় পদ থেকে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে দলের নীতিনির্ধারকদের জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রে জানা যায়, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ৪৬টি অভিযোগ তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনে টাঙ্গাইল জেলার বিআরডিবির জমি দখলসহ প্রায় ডজনখানেক অভিযোগ জমা পড়েছে। ঈদের ছুটির পর দুদক এসব অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছে। দুদকের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়টিও মাথায় রেখে আপাতত দেশে ফেরার কথা ভাবছেন না লতিফ সিদ্দিকী।প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি! আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে লতিফ সিদ্দিকীকে আপাতত দলের প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঈদের পর কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে পদ থেকে বহিষ্কারের প্রশ্নে নেতাদের মনোভাব বুঝেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যাপারে শীর্ষ নেতারা প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংসদ সদস্য পদে লতিফ সিদ্দিকীর থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত হবে দল থেকে বহিষ্কার করা না করার ওপর।