রাজধানীর যানজটপূর্ণ চিরচেনা রূপ বদলে গেছে। শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে ঈদ ও পূজার ছুটি। ফলে আগেভাগেই মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। তাই গতকাল শনিবার রাজধানী ছিল বেশ ফাঁকা। তবে জটলা ছিল গরুর হাট, লঞ্চঘাট, ট্রেনস্টেশন আর টার্মিনাল ঘিরে। গতকাল দিন গড়াতে টার্মিনালের ভিড়ও কমতে থাকে। রাস্তার ওপর গরুর হাট চলে আসায় সংলগ্ন সড়কগুলোতে ধীরগতিতে গাড়ি চলেছে। কোথাও কোথাও লেগে যাচ্ছিল যানজটও।
গতকাল প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা। রাজধানীর বেশির ভাগ প্রতিমাই বিসর্জন দেওয়া হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে। একদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও মাওয়া অভিমুখে ঘরমুখো মানুষের ঢল, তার সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা- সব মিলিয়ে পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায়ই ছিল ভিড়ে ঠাসা।
পুরান ঢাকার সাদেক হোসেন খোকা মাঠে বসেছে হাট। কিন্তু গতকাল গরুর হাট ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়ও। বিশেষ করে ধোলাইখাল ও দয়াগঞ্জ সড়ক পরিণত হয় আরেকটি হাটে। ফলে সদরঘাট অভিমুখী মানুষকে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়। হাঁটা ছাড়া ঘাটে পৌঁছানোর আর কোনো উপায় ছিল না। এ ছাড়া নারিন্দা, বানিয়ানগর, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এই হাটের প্রভাবে ছিল যানজট। নয়াবাজারে এবার হাট না বসায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে আশপাশের সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ঘরমুখো মানুষ। গুলিস্তান, ইংলিশ রোড, মালিটোলাসহ বেশ কিছু এলাকায় যানজট থাকলেও তা অসহনীয় ছিল না।
রাজধানীর আরো কিছু এলাকায় হাট রাস্তায় ছড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। দুপুরে মধ্যবাড্ডা থেকে রামপুরা পর্যন্ত ছিল যানজট। এই অংশটুকু পার হতে পৌনে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। এর প্রধান কারণ আফতাবনগর হাট। বারিধারার জে ব্লকের গরুর হাটের কিছু অংশ চলে এসেছিল রাস্তায়। তাই নতুনবাজার এলাকায় গাড়ি চলেছে ধীরগতিতে। মহাখালী থেকে বনানী অভিমুখেও গাড়ি চলেছে আস্তে আস্তে। মাঝেমধ্যে গাড়িগুলোকে দাঁড়াতেও হয়েছে। বনানী রেললাইনের ফাঁকা জায়গায় বসা গরুর হাটও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।
এয়ারপোর্ট থেকে কাউলা পার হওয়ার পরই থেমে যাচ্ছিল যানবাহন। কারণ বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গায় বসা হাট। হাটটি রাস্তার ওপর না এলেও যারা গরু কিনতে এসেছিলেন তাঁরা দুই লাইন করে গাড়ি রেখেছেন। আবার বাসায় গরু নেওয়ার জন্য ভ্যান পার্ক করে রাখা হয়েছিল রাস্তায়। গরুর খাবারও রাস্তার ওপর বিক্রি হচ্ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলতে পারছিল না। তবে খিলক্ষেত পার হতেই রাস্তা ফাঁকা।
গতকাল বিকেলে উত্তরা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন মো. শামীমুল ইসলাম। তিনি সন্ধ্যায় ফোনে কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর বাড়ি মাগুরায়। কল্যাণপুর থেকে বাসে উঠেছেন। উত্তরা থেকে কল্যাণপুর যেতে মাত্র ৪০ মিনিট সময় লেগেছে। অথচ গাবতলী পার হতেই এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে হাটের কারণে।
তবে রাজধানীর বাদবাকি রাস্তা ছিল বেশ ফাঁকা। দ্রুতগতিতে চলছিল যানবাহন। অনেক স্থানেই সিগন্যাল মানারও প্রয়োজন ছিল না। সংসদ ভবনের সামনে থেকে লেগুনায় চড়ে গতকাল দুপুরে মহাখালীতে এসে নামেন মো. রাশেদ। তিনি জানালেন, মাত্র ১০ মিনিট লেগেছে। অন্য দিন হলে অন্তত ৪০ মিনিট লাগত। ফাঁকা রাস্তায় চালকের বেপরোয়া গতিতে বরং ভয়েই ছিলাম।
রাজধানীর লোকাল বাসগুলোতেও দিন শেষে কমে যায় যাত্রীসংখ্যা। বিশেষ করে গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান অভিমুখী বাসগুলোতে সকালের দিকে বেশ ভিড় ছিল। বিকেলের দিকে তা কমতে থাকে। অন্যান্য রুটের বাসগুলোতে যাত্রীদের জন্য হাঁকডাক ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি। যাত্রীর জন্য স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে বাসগুলো। দিন গড়াতে লোকাল বাসের সংখ্যাও কমতে থাকে।
গতকাল রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতেও খুব একটা ভিড় ছিল না। সবার মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল গরুর হাট। ছোটখাটো মার্কেটের বিক্রেতাদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। তবে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ কিছু মার্কেটে ক্রেতা সমাগম ছিল।