নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত সরকার তুলে দিতে পারে বাংলাদেশের হাতে। দিল্লিতে এক সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। আর তাই দিল্লির নির্দেশে এই প্রথম বাংলাদেশের কোন অপরাধীকে সে দেশের হাতে তুলে দেয়ার আবেদন ভারতের কোর্টে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর আগেই বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছিল নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে। ইন্টারপোল নূর হোসেনের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশও জারি করেছিল। ভারতের কাছেও পাঠানো হয়েছিল সেই আবেদন। সোমবার উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাসাতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিমের আদালতে নূর হোসেনকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ যে আবেদন করেছে সেটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি বিকাশ রঞ্জন দে। এ দিন নূর হোসেনের পক্ষ থেকে কোন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন নি। পুলিশের পক্ষ থেকেও নুরুল হোসেনকে রিমান্ডে নেয়ার নতুন কোন আবেদন জানানো হয়নি। ফলে নূর হোসেনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের রায় দিয়ে মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক মধুমিতা রায় আগামী ৭ই জুলাই ফের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি কৌঁসুলি বিকাশ রঞ্জন দে জানিয়েছেন, নূর হোসেনের দুই সঙ্গীকেও ১৪ দিনের জেল রিমান্ড দিয়েছে বিচারক। তবে এদিন আদালতে সুমন খানের হয়ে আইনজীবী তারক দাশ তার মক্কেলকে অকারণ হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগে জানান। সুমন খান দাবি করেন, তিনি বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়েই ভারতে এসেছিলেন। নূর হোসেন আগের মতোই এদিনও প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে আদালতের লকআপে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। কেন পালিয়ে এলেন- এর উত্তরে তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে মামলা হওয়াতেই তিনি ভারতে চলে এসেছেন। কে তাকে ফাঁসিয়েছে তার নাম বলতে অস্বীকার করলেও তিনি জানিয়েছেন, যে তাকে ফাঁসিয়েছে সে-ই তাকে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি দাবি করেন, নজরুলের সঙ্গে তার কোন বিরোধ ছিল না। তবে সাংবাদিকরা জানতে চান, তিনি র্যাবকে কত টাকা দিয়েছেন? এর উত্তরে রাগত ভঙ্গিতে নূর হোসেন বলেন, র্যাবকে কেন টাকা দেবো? কোন টাকাই আমি দিইনি। এর পরেই পুলিশ ঠেলতে ঠেলতে তাকে আদালতে নিয়ে যায়। এদিন সকালে নূর হোসেন সহ তিন বাংলাদেশীকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও নূর হোসেন জানান, তিনি চক্রান্তের শিকার। গত ১৪ই জুন রাতে কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে বাগুইআটি থানার কৈখালি এলাকার ইন্দ্রপ্রস্থ আবাসন থেকে দুই সঙ্গীসহ নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিনই তিনজনকে আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। গত ৮ দিনে পুলিশ নূর হোসেন ও তার সঙ্গীদের নিয়ে তাদের নেটওয়ার্ক ও লিংকম্যানদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায়। কোথা থেকে তারা অর্থ পেতেন সে সম্পর্কে অবশ্য নূর হোসেন ও তার সঙ্গীরা উল্টোপাল্টা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে। জানা গেছে, এই তল্লাশি সূত্রে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। তবে এর কোন সমর্থন পুলিশ সূত্রে পাওয়া যায় নি। এদিকে নূর হোসেনের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া সব তথ্যই দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক বাংলাদেশ হাইকমিশনকে সেই সব তথ্য জানিয়ে নূর হোসেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সেই তথ্য ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এরপরই দিল্লির নির্দেশে আদালতে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের আবেদন আদালতে নথিভুক্ত করা হয়েছে।