তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, যারা নীতিমালা চান না, তারা স্বৈরাচারের দালাল।
তিনি বলেন, কোন বিষয়ে নীতিমালা হলেই একটি গোষ্ঠী হৈচৈ শুরু করে দেন। কারণ নীতিমালাটি বাস্তবায়িত হলে তাদের স্বৈরাচারি আচরণ বন্ধ হয়ে যাবে বলেই তারা এমনটি করে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, যারা নীতিমালা মানেন না, তারা সংবিধানও মানেন না। দেশকে পিছনের দিকে টেনে ধরতেই তারা নীতিমালা না পড়ে শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশে বিরোধীতা করছেন।
তথ্যমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নীতিমালার রূপরেখা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যায়ন বিভাগ আয়োজিত এ বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
সভাপতিত্ব এবং মূল বক্তৃতা উপস্থাপন করেন আযোজক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এজেএম শফিকুল আলম ভূঁইয়া।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারকে ৫০/৬০ বছরের পুরনো অনেক কিছুতেই পরিবর্তন ও সংস্কার আনতে হচ্ছে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে এসব পরিবর্তন করতে গিয়ে সরকারকে স্বৈরাচারি মনভাবাপন্ন ব্যক্তিদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সম্প্রচার নীতিমালা না পড়েই এর বিরোধীতা করছেন। নারী বা পুরুষ যেই হোক তার মাথায় যদি সাম্প্রদায়িকতার বীজ থাকে, তাহলে কোন ভাল কিছুই তার পক্ষে যাওয়ার কথা নয়। বেগম জিয়ার মাথায়ও এ গন্ডগোল রয়েছে।
তিনি বলেন, তা না হলে নারী নীতিমালা নিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীরা যখন বির্তক শুরু করল, তখন তিনি নারী হয়েও কিভাবে চুপ থাকলেন? তেতুল হুজুর যখন নারীদের ঘরের ভিতরে আটকে রাখতে ও তাদের নিয়ে কু-রুচিপূর্ণ মন্তব্য করলেন, তখনও তিনি চুপ থাকলেন এবং নারী হয়েও তিনি সব সময়ই জঙ্গীবাদদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্যমন্ত্রী তাই বলেন, নারী যখন সাম্প্রদায়িক হয়, তখন তা হয় প্রচন্ড ভয়াবহ। বিশেষ করে নারীদের জন্যই।
মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশে শুধু বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা না করে নীতিমালা পড়ুন, গঠনমূলক সমালোচনা করুণ, তা গ্রহণ করা হবে।’
চলচ্চিত্রের খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী আবার বলেন, এ নীতিমালাও কোন আইন নয়, বিধান মাত্র। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, খসড়া এ নীতিমালায় চলচ্চিত্রের নির্মাণ, বিতরণ ও প্রদর্শন সন্ত্রান্ত বিষয়াদি ছাড়াও অপসংস্কৃতি রোধ, অশ্লীলতা বন্ধ, পাইরেসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সাম্প্রদায়িকতা ও উস্কানীমূলক বক্তব্যে যেন সামাজিক দাঙ্গা সৃষ্টি না হয় এমনই নানা বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বহমান নদী, চলামান সমাজ, দেশ বিভিন্ন সময়ে বাঁক খায় বা নেয়। সেই বাঁকে থেমে না থেকে এগিয়ে যাওয়াই হলো আধুনিকতার পরিচয়। বাংলাদেশেরও আজকের পর্যায়ে আসতে এমনই তিনটি বাঁক রয়েছে।
তিনি বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০’এ স্বৈরাচারকে হটিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রা, এ তিন বাঁককে অস্বীকার করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আর চলচ্চিত্রকেও তা ধারণ করতে হবে।
ইনু বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে দারিদ্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লিঙ্গ বৈষম্য ও জঙ্গীবাদ, এ চার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাচ্ছে। চলচ্চিত্রকেও এ যুদ্ধে অংশ নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বে ৩৫ কোটি বাঙালী আছে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি, পশ্চিমবঙ্গের ১০ কোটি এবং ত্রিপুরা, আসাম, বিহারসহ সারাবিশ্বে বাকি ৯ কোটি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে এই ৩৫ কোটি মানুষের বাজার দখল করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সে লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এফডিসির ডিজিটালায়ন, ভারতের পুনের চেয়ে উন্নত ও আধুনিক ফিল্ম ইনস্টিটিউট গঠন, ফিল্ম আর্কাইভ ভবন নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে এ মাধ্যমকে সব ধরণের সহযোগিতা দিয়ে চলেছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
উপাচার্য আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোন বায়বীয় কথা নয়। এ চেতনাকে ধারণ করে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। তাই যে কোন নীতিমালার ক্ষেত্রে এ চেতনার প্রতিফলন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র হলো একটি সার্বজনীন যোগাযোগের মাধ্যম ও আন্তর্জাতিক এক ভাষা। যা সহজেই সবারই বধগম্য করতে পারে। তাই রাষ্ট্রের মৌলিক দর্শনের পরিপন্থি কোন বিষয় এ মাধ্যমের নীতিমালায় থাকতে পারে না।