শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

যানবাহনে শামুক গতি তবু সবার মুখে হাসি

pic-18_136808

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে চাঁদপুর যাওয়ার কোনো বাস পাননি আবদুল হালিম। সদর উপজেলায় নিজের বাড়িতে ঈদ করতে স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে নিয়ে তিনি এই কাউন্টার থেকে ওই কাউন্টারে ঘুরছিলেন টিকিটের জন্য। শেষ পর্যন্ত উঠলেন একটি লোকাল বাসে। রাজধানীতে চলাচল করে, এমন একটি বাসে উঠতে পেরে তাঁর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। অথচ কিছুক্ষণ আগে তাঁর চোখেমুখে ছিল বিষাদের ছায়া। সব বিষাদ ঝেড়ে হাসতে হাসতে হালিম ও তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বললেন, ‘বাড়ি যাব।’ অন্য রকম খুশির আভা ছড়িয়ে ছিল তাঁদের চোখে-মুখে।

টার্মিনালে বাস মিলছে না বলে কারওয়ান বাজারে দিনাজপুরের ১৫ যাত্রী একটি ট্রাকে উঠে পড়ে বিকেলে। তাদের একজন রুস্তম আলী ট্রাকে উঠতে উঠতেই হেসে বললেন, ‘আর কোনো কথা নাই। বাড়ি যাই।’ রাজধানীর সড়কে গতকাল শনিবার সকালে ছিল যানবাহন ও মানুষের ভিড়। দেড় কোটি মানুষের শহর ঢাকা ক্রমেই খালি হয়ে যাচ্ছে। নগর পরিবহনের যেসব বাস চলেছে, সেগুলো আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেগে ছুটেছে। সাঁই সাঁই শব্দে গাড়ির চলাচলে চমকেছে পথচারীরা। শেষ মুহূর্তে গাড়ির সংকট, গাড়ির শামুক গতি, সড়ক দুর্ঘটনায় যোগাযোগ কিছু সময় বন্ধ থাকাসহ নানা ঝামেলা ও শঙ্কা উপেক্ষা করে বাড়ির পানে মানুষ ছুটছিল। মহাসড়কে ক্রমেই বাড়ছিল চাপ। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বলেছেন, এবার মহাসড়কে চাপ পড়েছে ধীরে ধীরে। কারণ, ছুটি দীর্ঘ আর গার্মেন্টগুলো ছুটি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দিনে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিছু স্থানে গাড়ি চলেছে শামুক গতিতে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির জট ছিল অবশ্য। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। এ কারণে এ পথে তৈরি হয়েছিল গাড়িজট। গাড়ির জটের মধ্যেও মুখে ছিল বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। মহাসড়ক পুলিশ ও টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত থেকে মহাসড়কগুলোয় চাপ বাড়ছিল। চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সকালে ৩০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। গাজীপুরের চন্দ্রাসহ আশপাশে গাড়ির ধীরগতিতে দুর্ভোগে পড়ে ঘরমুখো মানুষ। সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর, নারিন্দা ও সিরাজগঞ্জের কড্ডায় দুর্ঘটনা ঘটার পর যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরাতে দেরি হওয়ায় গাড়ির জট বেড়ে যায়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া এলাকায় সকাল ৯টায় যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে ১৫ জন গার্মেন্টকমী আহত হয়। বাসটি চট্টগ্রাম থেকে রংপুরের পাগলাপীরে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের উভয় পাশে বিপুলসংখ্যক গাড়ি আটকা পড়ে।

আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, যানজট ছাড়তে আধাঘণ্টা সময় লাগে। মহাসড়কের মির্জাপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত খুব ধীরে ধীরে গাড়ি চলাচল করে। মহাসড়ক পুলিশের গোড়াই থানার ওসি যুবায়দুল আলম কালের কণ্ঠকে জানান, আগের রাতে গরুবোঝাই ট্রাকের চাপে যান চলাচলের শৃঙ্খলা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে উত্তরমুখী বাসের চাপ ছিল অতিরিক্ত। ওই সময় থেকেই যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার পরও যান চলাচল স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে।

শুক্রবার রাতে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাখালী থেকে বেশ কিছু গাড়ি সাভারের নবীনগর হয়ে মানিকগঞ্জ দিয়ে টাঙ্গাইলে যায়। সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লেগেছে টাঙ্গাইল শহরে যেতে।

জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ধীরগতি : বিকেল পর্যন্ত জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। চার লেনের কাজ শেষ না হওয়ায় মহাসড়কে ৮৭ কিলোমিটারের অর্ধেকই এখন বেহাল। স্থানে স্থানে ট্রাফিক সাইনও নেই। এ কারণে রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো চলাচল করেছে খুব ধীরে। চান্দনা চৌরাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকলেও গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়নি। মাওনায় যানবাহনের গতি ছিল খুব ধীর। ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, মহাসড়কের ভালুকা অংশে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেছে ধীরে। ধীরগতির কারণ মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং, যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ টেম্পো, পিকআপ, লোকাল বাস, সড়কের ওপর ফেলে রাখা নির্মাণসামগ্রী ও ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট। দুপুরে একাধিক বাসচালক জানান, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় মহাসড়কের অবস্থা একেবারে খারাপ নয়। তবে ভালুকার হবিরবাড়ির মাস্টারবাড়ি, সিডস্টোর, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহনের গতি অনেক কমিয়ে আনতে হয়। আর ওই কম গতির কারণেই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না যানবাহন। ভালুকা মডেল থানার ওসি গোলাম সারোয়ার কালের কণ্ঠকে জানান, ভালুকা এলাকায় মহাসড়ক সচল রাখার জন্য পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে।

মাওয়ায় ঢল : মাওয়া ঘাটে গতকাল আগের দিনের চেয়ে বেশি ভিড় ও জট ছিল। দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার মাওয়ায় যাত্রী পারাপারে সব রকম ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। তাই যাত্রীদের চাপ বাড়লেও অনবরত ফেরিগুলো যান পারাপারে ব্যস্ত ছিল। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ডসংখ্যক চার হাজার ২০০ যান পারাপার হয়েছে। মাওয়া বিআইডাব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশিকুজ্জামান বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এবার রেকর্ডসংখ্যক যান পারাপার করা সম্ভব হয়েছে। রবিবার এত চাপ থাকবে না আশা করে তিনি বলেন, যাত্রীদের বিড়ম্বনা অন্য সময়ের থেকে এবার কম। আমাদের মাওয়া প্রতিনিধি জানান, মাওয়া থেকে শ্রীনগরের সমষপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন পড়েছিল গাড়ির। মাওয়ায় চার শতাধিক গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। ভোররাত থেকেই মাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। যানজটের কারণে অনেকে মাওয়া পর্যন্ত গাড়িতে এসেছে, এরপর লঞ্চ বা স্পিডবোটে করে পার হয়ে আবার কাওড়াকান্দি থেকে বাসে ওঠে।

চাঁদপুরে ফেরিঘাটে যাত্রী দুর্ভোগ : চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাটে গতকাল ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছিল। মাত্র তিনটি ফেরি দিয়ে যাত্রীবাহী বাস পারাপার অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ফলে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চাঁদপুর ও শরীয়তপুর প্রান্তে শতাধিক বাস পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। এ ছাড়া গরু ও পণ্যবাহী ট্রাক তো ছিলই।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, যশোর ও খুলনা রুটের যাত্রীবাহী বেশ কিছু বাস চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস দিয়ে চলাচল করে থাকে। আর এই ঈদের সময় এই রুটে ফেরিঘাটে জট তৈরি হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।

ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন জানান, মূলত ফেরি সংকটের কারণে যানজট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি পরিবহনের চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনার জন্য তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।