সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মুফতি হান্নানসহ ১৩ জনের বিচার শুরু

pic-27_124997

রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঘটনার সাড়ে ১৩ বছর পর মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হলো।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. ইমরুল কায়েস এ অভিযোগ গঠন করেন। আদালত আগামী ২৩ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ওই হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় চারজন। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরেকজন। হামলায় সিপিবির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়। হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় একই আসামিদের বিরুদ্ধে গত ২১ আগস্ট অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গতকাল অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। এ উপলক্ষে করাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান। আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বিচার প্রার্থনা করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে আদালতের পিপি আসাদুজ্জামান রচি অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে বিচারক অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। ১৩ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নানসহ পাঁচজন কারাগারে রয়েছেন। তাঁরা হলেন মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি মাইনুদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির ও শওকত ওসমান। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন আটজন। তাঁরা হলেন মশিউর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, শফিকুর রহমান, নূর ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুহিবুল্লাহ মুত্তাকীন, আনিসুল ইসলাম মোরসালিন ও রফিকুল ইসলাম মিরাজ।
প্রসঙ্গত, মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানসহ অন্য আসামিরা ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলা এবং রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলারও অন্যতম আসামি।
সমাবেশে হামলার ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেছিলেন। সাতজন তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন তদন্ত করেন। অবশেষে গত বছরের ২৭ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের পৃথক মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন। উভয় মামলায়ই মুফতি হান্নানসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে সিপিবি নেতাদের ‘কাফের’ আখ্যায়িত করেন। তাঁদের নিশ্চিহ্ন করাই ছিল হামলার মূল উদ্দেশ্য। মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মুফতি শফিকুর রহমান। টাইমবোমা বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় মুফতি হান্নানকে। অভিযোগপত্রে ১০৭ জনকে সাক্ষী করা হয়।
এ মামলায় মুফতি মাইনুদ্দিন শেখ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য মতে, তিনি মুফতি হান্নানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আবদুল হাই, শফিকুর রহমান, শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীর বদর ওরফে আবু জান্দালের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। ২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি হুজি কার্যালয়ে গেলে তিনি জানতে পারেন, পরের দিন পল্টন ময়দানে সিপিবির জনসভা আছে। ওই কার্যালয়েই সমাবেশে বোমা হামলার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রসঙ্গত, সমাবেশে বোমা হামলার সময় মঞ্চে ছিলেন ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সরদার ফজলুল করিম, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর তৎকালীন সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম ও সিপিবির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম। হামলায় ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন। খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস আহত হয়ে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ ফেব্রুয়ারি মারা যান।
২০০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোমিন হোসেন ঘটনার নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং গ্রেপ্তারকৃতদের অব্যাহতির আবেদন করেন। কিন্তু ২০০৫ সালের শুরুর দিকে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে সিপিবির সমাবেশে হামলার যোগসূত্র খুঁজে পান। ওই বছরের ২৭ জানুয়ারি মামলার কার্যক্রম ফের শুরুর জন্য আদালতে আবেদন করেন তিনি। ২৯ জানুয়ারি আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। এর মাধ্যমে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। সব মিলিয়ে সাতজন তদন্ত কর্মকর্তা মামলা তদন্ত করেন।