শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরসরাই ইকোনমিক জোনের জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণের ন্যায্যমূল্যের দাবীতে কৃষকদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতনিধিঃ মীরসরাইয়ে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পজোনের জন্য সম্প্রতি নতুন করে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে নতুন এই অধিগ্রহণের কার্যক্রমের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন কয়েক হাজার কৃষক ও জমির মালিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে । এদিকে মানববন্ধনকারীদের উপর স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মীরসরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফার কর্মী সমর্থকরা মারধর করে বলে অভিযোগ করে হামলায় আহতরা। এসময় মানববন্ধনকারীদের ৪টি ব্যানার ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা । বৃহস্পতিবার ১৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১১টার সময় স্থানীয় ইছাখালী ইউনিয়নের শিল্প জোন এলাকায় সড়কের ধারে উক্ত মানববন্ধন পালন করা হয়। এসময় স্থানীয় জমির মালিক কৃষকসহ শতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মীরসরাইয়ের সাংসদ গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন স্পষ্ট বলেছেন কৃষি জমিতে কোন প্রকার শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে না। দেশের বৃহত্তম এই শিল্প জোনের জন্য ৩ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ইতিপূর্বে ৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকী জমি অধিগ্রহনের জন্য নির্ধারিত আরো অনেক জমি রয়েছে। কিন্তু সেখানে অধিগ্রহন না করে পাশ্ববর্তি পূর্ব ইছাখালী এবং পশ্চিম ইছাখালী মৌজার প্রায় ১২ হাজার একর সম্পূর্ন ধানী এবং মৎস উৎপাদিত জমি অধিগ্রহনের জন্য স্থানীয় জমির মালিকদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে জমি অধিগ্রহনের যে সরকারী মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে তাতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে অভিযোগ করেন। স্থানীয় জমির মালিক জয়নাল আবেদীন সেলিম, নুরুল আমিন ডিপটি, আবুল কাশেম, ফয়েজ আহম্মদ, রেজা মিয়া, বামন সুন্দর কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মজিবুল হক সহ প্রমুখ বলেন, সরকারী মৌজাপ্রতি মূল্যের চেয়ে স্থানীয় ভাবে ক্রয়-বিক্রয় কৃত জমির মূল্যে অনেক ব্যবধান। সরকারী মূল্যে প্রতি শতাংশ জমি ১১ হাজার ৫শত টাকা। কিন্তু স্থানীয় মূল্য প্রতি শতাংশ এখন প্রায় ১ লক্ষ টাকা। যা সরকারী মূল্যের চাইতে অনেক কম। এছাড়াও তারা আর অভিযোগ করে বলেন, সরকার ঢালাও ভাবে জমির শ্রেণি বিন্যাস না করে গড়হারে মনগড়া এবং নামমাত্র মূল্যে নির্ধারণ করেছে। সরকার ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী জমির মূল্য নির্ধারণ করেছে। আমাদের দাবী হল, বর্তমানে ২০১৭ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিবে হবে। এছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ সরেজমিনে এসে জমির মালিকদের সাথে কথা বলে প্রত্যেকটা জমির শ্রেণি বিন্যাস করে (নাল, খাই, পুকুর দোকান এবং অন্যান্য স্থাপনার) নির্ধারণ করে জমির শ্রেণি অনুযায়ী সরকারী এবং স্থানীয় মূল্যের সমাহারে নির্ধারন করলে আমরা জমি দিতে আগ্রহী। অন্যথায় আমরা একখন্ড জমিও দেব না। এছাড়া কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সরকারের চাহিদানুযায়ী জমি অধিগ্রহনের জন্য চরাঞ্চলে যথেষ্ট পরিমান পতিত এবং অনাবাধি জমি রয়েছে। সেখান থেকে অধিগ্রহন করার জন্য তারা সরকারের প্রতি আহবান জানান। তারা আরো বলেন, বর্তমানে জমি অধিগ্রহনের জন্য যে নোটিশ করা হয়েছে তাতে অনেকের জীবন জীবিকা রয়েছে। কেউ ধান ও অন্যান্য ফলষ চাষ করে এবং অনেকে মৎস উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেই সকল জমি যদি অধিগ্রহন করা হয় জমির মালিকরা সারা জীবনের জন্য তাদের সম্বল হারাবে এবং কর্মজীবি মানুষগুলো তাদের জীবিকা হারাবে। এদিকে স্থানীয় মো. ইলিয়াছ, বৃদ্ধ হাজী আবুল কাশেম, সাইফুল ইসলাম ও আব্দুল আজিজ অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাস্থলে তারাসহ অনেকে মানব বন্ধনের জন্য সমবেত হলে সকালে ইছাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা কিছু লোকজন পাঠিয়ে উল্লেখিত আমাদের সহ আর অন্তত ১০ জনকে মারধর করে মানব বন্ধনের ৪টি ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এবিষয়ে চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, আমি বিশেষ কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। মানববন্ধন এবং হামলার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি এলাকায় খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এবিষয়ে মীরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কায়সার খসরু বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের আবেদনের বিষয়টি আমরা বেজা চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করব। এবষিয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল কবির বলেন, জমির মালিকরা আমাদের কাছে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে তাদের দাবীগুলো উপস্থাপন করলে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সামাধানের চেষ্টা করব।