পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষার দাবীতে ফুসে উঠছে কৃষক জনতা
মিরসরাইয়ের নাহার এগ্রো ফার্মের বিরুদ্ধে বর্জ্য নিষ্কাশনে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ ও কৃষি, জলাশয় জমি হুমকীর মুখে পতিত করায় ফুসে উঠছে জনগন । উপজেলার জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় ও করেরহাট এলাকায় অবস্থিত নাহার এগ্রোর ফার্মগুলো থেকে দীর্ঘদিন ধরে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে আসপাশের পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলী জমি, দুর্গন্ধে অতিষ্ট এলাকাবাসী প্রতিকার চেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে হামলার পর ও কোন ফল না হওয়ায় এখন আবারো ফুসে উঠছে সর্বস্তরের সকলে।এলাকাকাসী ও প্রত্যক্ষদর্শিদের নানান অভিযোগের ভিত্তিতে করেরহাটস্থ নাহার এগ্রো ফার্ম ও জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড়ে অবস্থিত মীরসরাই এগ্রো নামে নাহার এগ্রোর ফার্মটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফার্মের মুরগীর বর্জ্যসহ বিভিন্ন মলমূত্র ছাড়াও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে এখানকার পরিবেশ। ফার্মের পাশ দিয়ে মানুষকে নাকে হাত বা রুমাল দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব বর্জ্য নিষ্কাশনে পরিবেশ বিভাগের যথাযথ নিয়ম থাকা সত্ত্বেও তা মানছেন না ফার্ম কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও তাদের ব্যবহৃত জেনারেটরের উচ্চ শব্দের কারণে শব্দদূষণও ঘটছে নিয়মিত। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনসাধারণ। ইতোপূর্বে বিক্ষুদ্ধ জনগণের রোষানলে পড়তেও হয়েছে ফার্মটিকে। গত বছরের ২৬ এপ্রিল ফার্মটির জোরারগঞ্জের দক্ষিণ সোনাপাহাড়ে অবস্থিত শাখাতে হামলা ও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ওই হামলায় আহত হয় ফার্মটির কর্মচারীসহ ৩৫ জন।এদিকে উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ঘেরামারায় অবস্থিত নাহার এগ্রোর ফার্মের বিরুদ্ধেও নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফার্ম থেকে নিষ্কাশিত উৎকট অনপোযোগী বর্জ্য ফসলী জমিতে ফেলায় জমি যথাযোগ্য উৎপাদন ক্ষমতার ভারসাম্য হারাচ্ছে। বারইয়াহাট থেকে করেরহাট সড়কের কিছু জমিতে ও এনে ফেলছে এই এগ্রো । যেখানে দূর্গন্ধে মানুষ আসপাশ দিয়ে ও চলাচল করতে পারছে না। কৃষকরা ও তাদের জমি চাষ করতে মাঠের পাশে যেতে পারছে না। এতে করে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, করেরহাট ইউনিয়নের ঘেরামারায় অবস্থিত নাহার এগ্রো ফার্মের বর্জ্য ফার্মের ড্রেন দিয়ে পাশের সড়কের ব্রিজের নীচ দিয়ে ছরার (লক্ষ্মীছরা) পানিতে মিশে যাচ্ছে। এতে করে ছরার পানি দূষিত, দুর্গন্ধযুক্ত ও কালো রং ধারণ করেছে। ছরার পানির উপর নির্ভরশীল দক্ষিণ অলিনগর, পশ্চিম ছত্তরুয়া, ভালুকিয়া এলাকার কৃষকদের কয়েকশত একর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে দূষিত পানির ফলে। শুধু ফসলি জমি নয়, যেসব পুকুরে ছরার পানি প্রবেশ করছে সেইসব পুকুরের মাছও মরে যাচ্ছে। পঁচা, দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে আশেপাশের এলাকার শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করেও এর কোন সুফল মিলছে না বলে জানান স্থানীয়রা। এর আগেও স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে নাহার এগ্রোর এক কর্মকর্তাকে নাজেহাল করলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে তা শেষ হয়। স্থানীয় রিক্সাচালক সুমন জানান, বর্জ্যরে দুর্গন্ধে বাড়িঘরে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়ছে।লক্ষ্মীছরা এলাকার কৃষক অরুণ দাশ জানান, প্রায় দেড় একর জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু দূষিত পানির কারণে ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ক্ষোভের সুরে দক্ষিণ অলিনগর এলাকার কৃষক বালুমনি বলেন, ‘ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি দূষিত পানির কারণে হাত ও পায়ে খোশ-পাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।’ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. আফছার জানান, কষ্টের টাকায় করা ফসলের এইরকম ক্ষতি হতে থাকলে আমাদের আর চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। একই সুর কৃষক বিমল চন্দ্র দাশ, মোঃ ইউসুফের কণ্ঠেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মৎস্য চাষী জানান, বেশ কিছুদিন আগে ছরার দূষিত পানি পুকুরে প্রবেশ করায় প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার মাছ মরে যায়। খোলা পরিবেশে এমন বর্জ্য ফেলার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। স্থানীয় কৃষকরা দীর্ঘদিন এর প্রতিবাদ করে আসলেও স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগীদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহম্মদ আশরাফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন যেহেতু বিষয়নি সর্বসাধারন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক পরিবেশ বিভাগের মাধ্যমে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে। আবার এই সব বজ্য্র কৃষি ও জলাশয়ে ফেলা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন কখনোই নয়। কৃষি জমিতে দিতে হয়ে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দিতে হবে । আবার প্রচন্ড দূর্গন্ধ তো কোন ভাবেই কেউ কামনা করে না। তবে এই বিষয়ে নাহার এগ্রোর নির্বাহী পরিচালক ইমরুল হোসেন রুবেল এর বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এখন এলাকাবাসীর দাবী যথাযথ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করলে এখান থেকে এইসব পরিবেশ প্রতিকূল প্রতিষ্ঠান অপসারন প্রয়োজন।