পরশু ভারতীয় এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মাইকেল হোল্ডিং। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য ছিল একটিই- ‘এই ভারতকে হারানো সম্ভব নয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।’ প্রশ্নকর্তা নানাভাবে বিষয়টি ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন, যাতে একবারের জন্য হলেও সাবেক ক্যারিবিয়ান পেসার নিজের মন্তব্যটা একটু ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে নিয়ে যান। কিন্তু টলানো যায়নি হোল্ডিংকে।
আসলে বাস্তবতাকে তো তিনি আর আবেগ দিয়ে উপেক্ষা করতে পারেন না। বিষয়টি এমন যে হারটা যেন অবধারিতই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। সেটি আরো বেশি জেসন হোল্ডাররা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মাত্র ১৮২ রানে গুটিয়ে গিয়ে। বোলিংয়ে যদিও বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোর হতাশা ঝেড়ে নতুনভাবে নিজেদের তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু তাতেও থামানো যায়নি ভারতের জয়রথ। ৪ উইকেট হাতে রেখে বিশ্বকাপের টানা চতুর্থ জয় নিশ্চিত করার সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিটটাও কাটা হয়ে গেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে স্বর্ণযুগটা অনেক পেছনে ফেলে এসেছে, সেটা বিশ্ব আসর এলে যেন আরো ভালোভাবে চোখে ধরা পড়ে। ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুড়ে আসা কিংবা বোলারদের উদাসীন বোলিংয়ের দৃশ্যগুলো পরিণত হয় শুধুই দীর্ঘশ্বাসে। সঙ্গে রয়েছে হঠকারী সিদ্ধান্ত। গতকালের ম্যাচই যেমন। যে ওয়াকার উইকেট ধরা হয় বিশ্বের দ্রুততম পিচগুলোর একটি, সেখানে কিনা টস জিতে ব্যাটিং নিলেন হোল্ডার। পরিণতি যা হওয়ার তাই। মোহাম্মদ সামির তোপে স্কোরে ৮ রান তুললেই আউট ডোয়াইন স্মিথ। আর যাঁকে নিয়ে ম্যাচের আগে হয়েছে বিস্তর আলোচনা, সেই ক্রিস গেইল তো ‘সতীর্থ’ ভারতীয় বোলারদের সৌজন্যে জীবন পেয়েছেন বারকয়েক। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলার কারণে ভারতীয় বোলারদের নাড়ি-নক্ষত্র চেনা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই ব্যাটসম্যানের। তাই বিধ্বংসী গেইলকে দেখার প্রত্যাশাই ছিল ক্রিকেটবিশ্বের, তা বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আগের সাক্ষাতে তাঁর ব্যাট না হাসলেও।
কিন্তু এবারও ব্যর্থ বিশ্বকাপের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরির মালিক। ২১ রানে তো সামির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলেনই, তার আগে আবার রান আউট করে গেছেন মারলন স্যামুয়েলসকে। গেইল ফেরার পরের বলেই আবার দীনেশ রামদিন বিলিয়ে আসেন উইকেট। ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিণতি আঁচ করা যাচ্ছিল তখনই। তবে শেষ পর্যন্ত রান যে পৌনে দুই শ ছাড়িয়েছে তা ওই অধিনায়ক হোল্ডারের ব্যাটে ভর দিয়ে। বল হাতে পারফরমেন্স যেমনই হোক না কেন, আগের ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করা এই অলরাউন্ডার ভারতের বিপক্ষেও খেলেছেন ৫৭ রানের ইনিংস। তাঁর আগে ড্যারেন সামির মাঝারি মানের একটা ইনিংসই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পারফরমেন্সের হাইলাইটস।
১৮৩ রানের লক্ষ্য, ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের জন্য এমন আর কি। অথচ ওয়াকার পিচে জেরম টেলর, আন্দ্রে রাসেলরা রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ২০ রানের মধ্যে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (৭) ও শিখর ধাওয়ানকে (৯) ফিরিয়ে টেলর যেন আভাস দিচ্ছিলেন অন্য কিছুরই। সেট হয়ে যাওয়া বিরাট কোহলির (৩৩) বাজে শটে ফেরা কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করে চলা আজিঙ্কা রাহানের (১৪) দ্রুত ফিরে যাওয়া সম্ভাবনার হাওয়া বইতে দিতে শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাম্পে। তাতে কী! সুরেশ রায়না-ধোনি তো আছেন ক্রিজে- ভারতীয় সমর্থকদের মনে হয়তো এমন কিছুই বাজছিল তখন। কিন্তু রায়নার (২২) পর জাদেজাও (১৩) ব্যর্থ হলে ১৩৪ রানে ভারত হারায় ৬ উইকেট। তবু ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাসে এতটুকু ঘুণ ধরার কথা নয়। ক্রিজে যে তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে ‘ক্যাপ্টেন কুল’। এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ম্যাচ বের করে নেওয়ার নজির তো তাঁর কম নেই। এবার পারবেন না! পেরেছেন, ৫৬ বলে ৩ চার আর ১ ছক্কায় হার না মানা ৪৫ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে নিশ্চিত করেন ভারতের জয়। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবদানকেও ছোট করার উপায় নেই, ওই পরিস্থিতিতে ধোনিকে সঙ্গ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৬ রান যোগ করেছেন তিনি দলের স্কোরে।
তাতে ভারতের স্বপ্নের গাড়িটা পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালের স্টেশনে। আপাতত খানিকটা বিশ্রাম!
উৎস- কালেরকন্ঠ