রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ব্রাজিলের ‘সুপার ক্লাসিকো’ জয়

1-mmmmmmmmmmmmmmmmmmmmmmmmm_35930_0

 

ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। সারা বিশ্ব জানে ম্যাচটার গুরুত্ব কতটুকু। লিওনেল মেসিও কি জানতেন না! বরং একটু বেশিই জানতেন। তারপরও সুযোগটা হেলায় হারালেন। ম্যাচের ৪১ মিনিটে পিছিয়ে পড়া দলকে সমতায় ফেরানোর যে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি তা হারানোর পর অবসাদগ্রস্ত দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পরতে দিয়েছিলেন অনায়াসে। গোলবারের সামনে মেসির পড়ন্ত দেহটাই যেন পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রতীক হয়ে থাকল। আরও একবার আর্জেন্টাইন অধিনায়ক পেনাল্টি মিস করলেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। মেসি অবসাদ ভেঙে যখন মাটির পৃথিবীতে চোখ খুললেন ততক্ষণে গোলরক্ষক জেফারসনকে ঘিরে সাম্বা নৃত্য শুরু করেছে ব্রাজিলিয়ানরা। ২৮ মিনিটে দিয়েগো তারদেল্লির গোলে এগিয়ে থাকা ব্রাজিলের জন্য মেসির পেনাল্টি মিস যে জয়ের শুভবার্তা হয়েই দেখা দিল! ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলই জিতল। ২-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয় গোলটাও করেছেন তারদেল্লি। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল। জয়ের এই ধারাটা বজায় থাকল তাহলে!

‘মেসিকে বল ছুঁতে দিও না।’ সতীর্থদের প্রতি আহ্বান ছিল গতকালের ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক নেইমারের। কিন্তু দুঃসাধ্য এই কাজটা করবে কে! ডেভিড লুইজ, ড্যানিলো, মিরান্ডা নাকি ফিলিপ লুইস? মেসিকে পুরো ম্যাচে বল শূন্য রাখার চেয়ে দুঃসাধ্য কাজ আর হতে পারে না। তবে নেইমারের কথার অন্তত সত্তর ভাগ রেখেছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডাররা। ফলাফল! আর্জেন্টিনার পরাজয়। ম্যাচে মেসি-ডি মারিয়া জুটির যে ঝলক দেখার অপেক্ষায় পৃথিবীর কোটি কোটি ভক্ত চোখ মেলে তাকিয়ে ছিলেন টিভি পর্দায়, তা বৃথাই গেল। বেইজিংয়ের বার্ড নেস্ট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা প্রায় ৮০ হাজার দর্শকও মেসি ম্যাজিকের দেখা পাননি। তবে ব্রাজিলের উইলিয়ান-নেইমার জুটি বেশ ভালোই খেলেছে। নেইমার অবশ্য একটা দারুণ সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। ব্রাজিল ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৩২ মিনিটে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন এ তরুণ তারকা। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে আরও একটা গোল করে আর্জেন্টিনার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছিলেন দিয়েগো তারদেল্লিই। শেষদিকে মাঠে নেমেছিলেন তারকা ফুটবলার কাকা। তবে তিনি সেই পুরনো ঝলক আর দেখাতে পারেননি। তাতে কি! ব্রাজিল ততক্ষণে বিজয়ের রসদ ঠিকই জুটিয়ে নিয়েছে। ম্যাচ শেষে চীনা রেফারি ফ্যান কি বাঁশি ফুঁ দিতেই উৎসবে মেতে উঠে ব্রাজিলিয়ান ভক্তরা।

সুপারক্লাসিকো কিংবা সুপার ডার্বি। আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ লড়াইয়ের বয়স শত বছর। গত সেপ্টেম্বরেই শত বছর পূর্ণ করেছে সুপার ডার্বি। ১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ম্যাচ খেলেছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচ আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-০ গোলে। এই ১০০ বছরে কত ঘটন-অঘটনই না হয়েছে সুপার ডার্বিতে। একে-অপরের প্রতি কাঁদা ছোড়াছুড়ি কম হয়নি। মোট ৯৬টা ম্যাচ খেলেছে দুই দল। জয়-পরাজয়ের হিসেবটা এবার সমান্তরালে পৌঁছল। দুই দলের ঝুলিতেই এখন জয় আছে ৩৬টি করে। ড্র ২৪টি। তবে গোলের সংখ্যায় এখনো এগিয়ে থাকল আর্জেন্টিনাই (১৫১ গোল)। ব্রাজিল গোল দিয়েছে ১৪৭টি।

নেইমার ঠিক শত্রুর মতোই আচরণ করলেন মেসির সঙ্গে। বার্সেলোনার বন্ধুত্ব সম্পূর্ণ ভুলে গেলেন তিনি। বল নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন এমন করে যেন তিনি মেসিকে চিনতেই পারছেন না। একজন যোগ্য অধিনায়কের মতোই আচরণ করেছেন নেইমার। মেসিও ঠিক তাই। তবে ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ার আগে ঠিকই একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন। কি কথা হয়েছিল দুজনের মধ্যে! নেইমার হয়ত মেসিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ভেবো না, পরের বার তুমিই হয়ত জিতবে! নেইমার যত সান্ত্বনাই দিক, পরাজয়ের জন্য মেসি নিজেকে এককভাবেই দায়ী করতে পারেন। পেনাল্টিতে গোলটা করতে পারলে যে, ম্যাচের চেহারাটা ভিন্নও হতে পারতো! আর্জেন্টাইন ভক্তরা মেসির পেনাল্টি মিসের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়েই বাড়ি ফিরেছে গতকাল। এই যন্ত্রণা দূর করার জন্য আরও একটা সুপারক্লাসিকোর অপেক্ষায়ই থাকতে হবে তাদেরকে।