শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা

7_131412

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ছয়টি নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের বড় ঋণগুলো অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চিহ্নিত করে আইনগত এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্র্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বেসিক ব্যাংকের কার্যক্রম ও সর্বশেষ আর্থিক পরিস্থিতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জমা দেয়। ওই প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বেসিক ব্যাংকের ওপর সর্বশেষ তৈরি করা প্র্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা- যা মোট ঋণের ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। মূলত দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন করায় শেষ পর্যন্ত তা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। একই সময়ে বেসিক ব্যাংকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে ১২শ’ কোটি টাকা। গত বছর প্রভিশন ঘাটতি ছিল প্রায় ৭৮৯ কোটি টাকা।বুধবার সংসদীয় কমিটিতে এই রিপোর্ট উপস্থাপনের পর ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদকে আরও সময় দেয়ার কথা সংসদীয় কমিটিতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এই কমিটিকে কাজ করতে আরও সময় দেয়া প্রয়োজন। অবশ্য এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বেসিক ব্যাংকের ঋণ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, এই ঘটনায় যাতে কেউ পার না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।এদিকে সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংকের অনিময় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় বিভিন্ন ঋণের কেসগুলোর অনিয়ম দূর করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এক কোটি টাকার ওপরে অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত জামানত এবং তথ্যবিহীন কেসগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এসব অনিয়মকৃত ঋণ আদায়ে আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। নির্দেশনায় বেসিক ব্যাংকের সম্প্রতি অনিয়মের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনার ওপর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা প্রতিবেদনে বেসিক ব্যাংকের আর্থিক সূচকের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। অবশ্য এর আগে গত মে মাসের আর্থিক সূচকের পরিস্থিতি তুলে আরও একটি প্রতিবেদন জমা দেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এবার প্রতিবেদনে আরও একমাসের অর্থাৎ জুন পর্যন্ত ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকটিতে আমানত এসে ফের কমেছে। জুন মাসে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ হয়েছে ১২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা- যা ২০১৩ সালে ছিল ১৩ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটিতে জুনে এসে লোকশান হয়েছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুনে এসে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। গত বছর এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা।ব্যাংকের এই সার্বিক পরিস্থিতি ও আমানতের ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব ড. এস আসলাম আলম যুগান্তরকে বলেন, এখন বেসিক ব্যাংকের আমানত নিয়ে কোনো উদ্বেগের কারণ নেই। আমরা ইতিমধ্যে ব্যাংকের নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছি। আমানতকারীদের আমানত এখন সুরক্ষিত। এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ব্যাংকটি এখন নতুনভাবে পরিচালনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আমরা কিছু নির্দেশনা দিয়েছি।প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের সুনামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সালে ৯টি একক ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ হিসেবে ৪৫৬ কোটি টাকা ও ২০১০ সালে ৮টি একক প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ অর্থাৎ ৪৯৫ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ১২টি একক ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্থাৎ ৮৮১ কোটি টাকা, ২০১২ সালে ২৩টি একক ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্থাৎ ২৩০৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। বিশেষায়িত এই ব্যাংকে ২০০৯ সালে ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫৬ কোটি টাকা; কিন্তু ২০১৩ সালে এটি দাঁড়িয়েছে ২৩০৫ কোটি টাকা। এটি ২০০৯ সালের তুলনায় ৫ গুণের বেশি।