দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় হতাশা প্রকাশ করে তিনিসহ আটক সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।দলটির ভারপ্রাপ্ত আমি মকবুল আহমাদ আজ এক বিবৃতিতে আগামীকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করেছে।আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সরকারী ষড়যন্ত্রের শিকার উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তার আপোসহীন নেতৃত্বে দিশেহারা হয়ে সরকার তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে ১, ৬, এবং ৭ নং অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে আপিল করেন। মাননীয় আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায়ে মুজাহিদ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দেশের জনগণ হতাশ হয়েছে।
সরকারের দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলাধীন কোনো থানা বা বাংলাদেশের অন্য কোনো থানায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত অপরাধের জন্য কোনো মামলা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য তিনি তার তদন্তে পাননি। তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, মুজাহিদ আল বদর, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল শামস বা এই ধরনের কোনো সহযোগী বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন -এমন কোনো তথ্য তিনি তার তদন্তকালে পাননি। এরপরও তাকে সরকারের সাজানো মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। তিনি জুলুমের শিকার হয়েছেন।বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সরকারের দায়ের করা ৬ নং অভিযোগে মুজাহিদকে বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানোর জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার এই অপবাদ রচনা করে। তার বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগপত্রের কোথাও একটি বারের জন্যও বলা হয়নি যে, তিনি কবে কিভাবে কোন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা বা অপহরণ করেছেন। কোনো অভিযোগেই সুনির্দিষ্ট দিন, তারিখ উল্লেখ নেই। বুদ্ধিজীবী পরিবারের কোনো সদস্য, যারা ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কথিত ঘটনার ভিক্টিম তাদের কারো স্ত্রী বা সন্তান-সন্ততি ট্রাইব্যুনালে এসে মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করেননি। অথচ সরকার যে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে তার ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
বিবৃতিতে জানানো হয়, মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের করবেন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে জনাব মুজাহিদ খালাস পাবেন বলে আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি।জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমি বিবৃতিতে আরো বলেন, দেশবাসী অবগত আছেন ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী সরকারের আমলে বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রমাণসহ জহির রায়হানকে অপহরণ করা হয়। তার রহস্য আওয়ামী সরকার উন্মোচন করেনি। অত্যন্ত সুকৌশলে তদানীন্তন আওয়ামী সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডটি এড়িয়ে গেছে। সেই বুদ্ধিজীবী হত্যার মিথ্যা অভিযোগ মুজাহিদের ঘাড়ে চাপিয়ে সরকার তার অতীতের কূটকৌশল বাস্তবায়ন করলো মাত্র। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও সত্যানুসন্ধিৎসু ইতিহাস গবেষকদের নিকট বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল রহস্য অবশ্যই উন্মোচিত হবে ইনশাআল্লাহ্।বিবৃতিতে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে হত্যার সরকারী ষড়ন্ত্রের প্রতিবাদে এবং তিনিসহ আটক জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির।