মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) টেকনাফের নাফ নদীতে টহলরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। এতে বিপ্লব কুমার নামে গুলিবিদ্ধ এক বিজিবি সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে গোলাগুলি ও হাতাহাতির পর নায়েক আবদুর রাজ্জাক নামে এক বিজিবি সদস্যকে বিজিপি অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। গত রাত পর্যন্ত তাঁকে ফেরতদান ও গুলিবর্ষণ সম্পর্কে বিজিপি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য জানা যায়নি। তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। অপহৃত নায়েককে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভোরে নাফ নদীর বাংলাদেশ জলসীমানায় বিজিবির একটি টহলদল ছিল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মিয়ানমারের বিজিপি আকস্মিক এই দলের ওপর হামলা চালায়। বিজিপির গুলিতে বিজিবির এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। বিজিবির আরো এক সদস্যকে বিজিপি অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়। বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের জি-২ মেজর আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার নাফ নদীতে বিজিবি টহল দেওয়ার সময় অস্ত্রধারী বিজিপি সদস্যরা আকস্মিক টহলরত বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। টেকনাফের দমদমিয়া জইল্যারদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। বিজিপির গুলিতে আহত বিজিবি সদস্য বিপ্লব কুমারকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিজিপি নায়েক আবদুর রাজ্জাক নামে বিজিবি সদস্যকে এএমজিসহ নিয়ে গেছে। তাঁকে মিয়ানমারের আরাকানের সীমান্তরক্ষীদের ১২ সেক্টরের রোহিঙ্গাঢং ক্যাম্পে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য গতকাল বিজিবি মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপিকে একটি চিঠি দিয়েছে। বিকেল ৩টার সময় নাফ নদীর টেকনাফ স্থলবন্দরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনায় বসতে অনুরোধ জানানো হলেও প্রতিপক্ষ তার কোনো জবাব দেয়নি। রাতে বিজিবি সদর দপ্তর জানিয়েছে, বিজিপি গুলিবর্ষণ করলে বিজিবির এক সদস্য আহত হন। তখন পাল্টা গুলি করা হয়। একপর্যায়ে বিজিবি ও বিজিপি টহলদলের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে। এ সময় অপহৃত নায়েক রাজ্জাককে ফেরত আনতে বিজিপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মিয়ানমার পুলিশ সদর দপ্তরে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রাজ্জাক ভালো আছেন এবং কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর তাঁকে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। ভুল বোঝাবুঝি : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এর সমাধান হবে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নাফ নদীতে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছিল। ওপাশে বিজিপির সদস্যরাও টহল দেয়। আমাদের একটি টহল বোট জালে আটকা পড়ে পিছে পড়ে যায়। এ সময় ভুল বোঝাবুঝির কারণে উভয় পক্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বিজিবির নায়েক রাজ্জাক বিজিপির কাছে রয়েছে। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে।’ গত ১৪ জুন কক্সবাজারের একটি হোটেলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের এক বৈঠকে সীমান্তে শৃঙ্খলা রক্ষায় দুই দেশ সম্মত হয়। সেখানে মিয়ানমারের বিজিপি সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলিবর্ষণ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু দুই দিন অতিবাহিত হতে না হতেই ঘটেছে উল্টো ঘটনা।