সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বাংলাদেশে ভুল করে ধ্বংস করা হয়েছে ৬০ হাজার টন ফল ও মাছ

image_134225.aamm
বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের অভিযোগ বেশ পুরনো। খাদ্যে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগও রয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। তাই বলে কী ‘ভুল করে’ ৬০ হাজার টন ফল ও মাছ ধ্বংস করতে হবে!
পুলিশ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ফরমালিনযুক্ত সন্দেহে বিপুল পরিমান খাদ্যদ্রব্য ধ্বংস করা হয়। বিশেষ করে অতি সম্প্রতি দেশীয় ফলের মৌসুমে ফরমালিন থাকায় বিপুল পরিমাণ আম, জাম, লিচু, আনারস, লেবু, আপেল, নাশপাতি, পেঁপে, করমচা ও লটকন ধ্বংস করেন ভ্রাম্যামাণ আদালত।
তবে যে যন্ত্র দিয়ে এই ফরমালিন পরীক্ষা করা হয়, সেই যন্ত্র নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের পক্ষে উচ্চ আদালতে একটি রিটও করা হয়।
ব্যবসায়ীদের রিটের প্রেক্ষিতে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দেন আদালত। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে আদালতে রিপোর্ট দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভুল যন্ত্র দিয়ে এতদিন ফরমালিন পরীক্ষা করা হয়েছে। বাতাসে ফরমালিন মাপার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে ফল। এখন ক্ষতিপূরণ চান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
‘আমরা কৃষকের সন্তান’
‘আমরা কৃষকের সন্তান’ নামের একজোট হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। শনিবার তারা রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মানববন্ধন করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এই সংগঠনের নেতা সাঈদ শাহীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশি ফলের মৌসুমে ভুল যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষার মাধ্যমে অন্তত ৫০ হাজার টন ফল ও ১০ হাজার টন মাছ ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ভুল মেশিন বাজারে ছেড়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার সাথে জড়িতদের শাস্তি ও সঠিক মেশিনে ফরমালিন পরীক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িদের ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।”
সংগঠনের আরেক নেতা শেখ শাফায়াত হোসেন জানান, সরকারি সংস্থা ছাড়াও বেসরকারিভাবে এফবিসিসিআই ঢাকাসহ সারা দেশে ২২টি বাজারের সমিতিকে ওই যন্ত্র দিয়ে অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট বাজারগুলো ফরমালিন মুক্ত ঘোষণা করেছে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যন্ত্রটির ব্যবহার ভুল ছিল।
ফরমালিন মাপার ভুল যন্ত্র
প্রসঙ্গত, খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে কি-না তা নিশ্চিত হতে ভ্রাম্যমাণ আদালত ‘ফরমালডিহাইড মিটার জেড-৩০০’ নামক যন্ত্র ব্যবহার করে। প্রকৃতপক্ষে এই যন্ত্রটি ফরমালিন পরীক্ষায় ব্যবহূত হয় কিনা তা নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন বাংলাদেশ ‘ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স’ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাধন চন্দ্র দাশ ও সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম। এই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২১ জুলাই আদালত যন্ত্রটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির পরিচালককে নির্দেশ দেয়।
বিসিএসআইআর গত মঙ্গলবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ফরমালডিহাইড মিটার জেড-৩০০’ নামক যন্ত্রটি ফল, মাছসহ বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যে ফরমালিনের উপস্থিতি নিশ্চিতকরনে জন্য তৈরি করা হয়নি। তবে এটি বাতাসে ক্ষতিকর কেমিক্যাল (রাসায়নিক) আছে কি-না তা পরীক্ষা করতে পারে।
প্রতিবেদনে যন্ত্রটির প্রস্তুতকারক কোম্পানির ব্যবহারবিধি ও ওয়েবসাইটের তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর’ নামের এক কোম্পানির তৈরি করা ‘জেড ৩০০’ মডেলের ‘ফরমালডিহাইড ভ্যাপর মিটার’ যন্ত্রটি পরিবেশ ও বাতাসে ফরমালিন মাপার সংবেদনশীল যন্ত্র। এই যন্ত্র ব্যবহার করে খাদ্যে ফরমালডিহাইডের পরিমাণ জানার কোনো ‘অ্যাপ্লিকেশন নোট’ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দেয়নি।
রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন আমরা এই রিপোর্ট সংযুক্ত করে আদালতের অবকাশের পরে আবেদন করবো। আবেদনে ত্রুটিযুক্ত যন্ত্র বাতিল এবং এই ফরমাইল হাইড -৩০০ দিয়ে কত হাজার মন ফল নষ্ট করা হয়েছে তারও হিসেব জানার জন্য প্রার্থনা করা হবে।”
এরপর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে বলে জানান তিনি।