উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশে বেশি বেশি বিনিয়োগ করতে মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আমেরিকান চেম্বার ও বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উদার বাণিজ্যনীতির সুবিধাকে কাজে লাগানোরও আহবান জানান।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বৈঠকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে আমেরিকান চেম্বার ও আমেরিকান বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সফরে থাকা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
২০১৩ সালে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন যুগের সুচনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য শুল্ক মুক্ত সুবিধা পেলে মার্কিন ও বাংলাদেশ দু’দেশের ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নতুন নতুন বাবসায়িক অংশিদারিত্ব তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই শান্তি, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবাদের মুল উতপাটনে একসাথে কাজ করবে দু’দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় তিনি ক্ষমতা নেয়ার সময় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় তা দাঁড়িয়েছিলো ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে। তিনি বলেন, যুক্তরাস্ট্রের এইএস এর মতো প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। হরিপুর ও মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করে এই কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, ২০০৯ সালে তার সরকার যখন ফের ক্ষমতায় ফেরে তখন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ৪০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র মোট বিনিয়োগ করে ৩৩১.৩৫ মিলিয়ন ডলার।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের সবশেষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। কিন্তু গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিনিয়োগ তার তুলনায় বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ অনেক কম। তবে তার প্রত্যাশা আগামী তিন বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগের হিসাব বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সমুদ্র তলদেশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ আহোরনে অন্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেরও দুটি কোম্পানি কাজ পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই এ সম্পদ আরোহনে আরো কোম্পানী নিয়োগ করা হবে। সেখানেও যুক্তরাষ্টের বিনিয়োগের আহবান জানান।
২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বিশেষ করে তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাস্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে বাংলাদেশ এ খাতে ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ৮৩২ মিলিয়ন ডলারের শুল্ক পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বন্দরগুলো শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলে এখানকার খুচরা বিক্রেতাদের অনেক অর্থ বেঁচে যেতো। আর তাতে পোশাক শ্রমিকদেও মজুরি ও সুবিধা আরো বাড়ানো সম্ভব হতো।
তিনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে আরও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। এতে ৪০ লাখ শ্রমিকের এই শিল্প খাতটি এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাক খাতের শ্রমিকদের ৯০ শতাংশই নারী। কজেই দুই দেশের এ ব্যবসায়িক সহযোগিতায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নও নিশ্চিত হতো।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কারখানাগুলোর কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। একাজে নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য তার সরকার এক হাজার পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েছে। আইএলও-আইএফসির সহায়তায় উন্নত কর্ম-পরিবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নে সংখ্যা ১০০টি থেকে ২৩০টিতে উন্নীত করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করছে, গত এক দশকে দারিদ্রের হার ৫৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। ডাবল ডিজিট থেকে মুদ্রাস্ফিতি আবার ৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাছে। এই সময়ে রপ্তানি আয় তিন গুন বাড়িয়ে ১০.৫৩ বিলিয়ন থেকে ৩০.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমান ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কোটা ছুয়ে এখন ২২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এখন ৩৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে। তবে এটা সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম। প্রধানমন্ত্রী বলেন আমাদের আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। সাতটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব জোটে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো জমি লিজ নিয়ে শ্রমঘন শিল্প স্থাপন করতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন আমাদের ৮ কোটি যুব কর্মশক্তি রয়েছে। তাদেরকে এইসব শিল্পে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। আর উৎপাদিত যে কোনো পণ্যের জন্য রয়েছে ১৬ কোটি মানুষের বিশাল একটি বাজার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছাড়াও জাহাজ নির্মাণ, রিসাইক্লিং, রাসয়নিক সার, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, কৃষি- প্রক্রিয়াকরণ, ঔষধশিল্প, সিরামিক, পাটজাত পণ্য, তথ্য প্রযুক্তি, সমুদ্রসম্পদ আহোরন, পর্যটন, চিকিৎসা উপকরণ, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে শিল্পায়িত মধ্য আয়ের একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আর ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা। তার মতে এর মধ্য দিয়েই আমারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের ইম্পেরিয়াল হলে এই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সরকার কবির উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানের পর কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে তার বৈঠক করেন। এছাড়া কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের আলোচনা সভায় যোগ দেয়া ছাড়াও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ হাউজে নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
শনিবার সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর ফাঁকে তিনি আরো কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকও করবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ছেড়ে লন্ডনে যাত্রাবিরতি দিয়ে ২ অক্টোবর ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বৈঠকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে আমেরিকান চেম্বার ও আমেরিকান বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সফরে থাকা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
২০১৩ সালে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন যুগের সুচনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য শুল্ক মুক্ত সুবিধা পেলে মার্কিন ও বাংলাদেশ দু’দেশের ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নতুন নতুন বাবসায়িক অংশিদারিত্ব তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই শান্তি, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবাদের মুল উতপাটনে একসাথে কাজ করবে দু’দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় তিনি ক্ষমতা নেয়ার সময় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় তা দাঁড়িয়েছিলো ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে। তিনি বলেন, যুক্তরাস্ট্রের এইএস এর মতো প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। হরিপুর ও মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করে এই কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, ২০০৯ সালে তার সরকার যখন ফের ক্ষমতায় ফেরে তখন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ৪০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র মোট বিনিয়োগ করে ৩৩১.৩৫ মিলিয়ন ডলার।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের সবশেষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। কিন্তু গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিনিয়োগ তার তুলনায় বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ অনেক কম। তবে তার প্রত্যাশা আগামী তিন বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগের হিসাব বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সমুদ্র তলদেশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ আহোরনে অন্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেরও দুটি কোম্পানি কাজ পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই এ সম্পদ আরোহনে আরো কোম্পানী নিয়োগ করা হবে। সেখানেও যুক্তরাষ্টের বিনিয়োগের আহবান জানান।
২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বিশেষ করে তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাস্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে বাংলাদেশ এ খাতে ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ৮৩২ মিলিয়ন ডলারের শুল্ক পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বন্দরগুলো শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলে এখানকার খুচরা বিক্রেতাদের অনেক অর্থ বেঁচে যেতো। আর তাতে পোশাক শ্রমিকদেও মজুরি ও সুবিধা আরো বাড়ানো সম্ভব হতো।
তিনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে আরও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। এতে ৪০ লাখ শ্রমিকের এই শিল্প খাতটি এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাক খাতের শ্রমিকদের ৯০ শতাংশই নারী। কজেই দুই দেশের এ ব্যবসায়িক সহযোগিতায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নও নিশ্চিত হতো।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কারখানাগুলোর কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। একাজে নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য তার সরকার এক হাজার পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েছে। আইএলও-আইএফসির সহায়তায় উন্নত কর্ম-পরিবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নে সংখ্যা ১০০টি থেকে ২৩০টিতে উন্নীত করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করছে, গত এক দশকে দারিদ্রের হার ৫৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। ডাবল ডিজিট থেকে মুদ্রাস্ফিতি আবার ৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাছে। এই সময়ে রপ্তানি আয় তিন গুন বাড়িয়ে ১০.৫৩ বিলিয়ন থেকে ৩০.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমান ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কোটা ছুয়ে এখন ২২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এখন ৩৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে। তবে এটা সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম। প্রধানমন্ত্রী বলেন আমাদের আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। সাতটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব জোটে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো জমি লিজ নিয়ে শ্রমঘন শিল্প স্থাপন করতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন আমাদের ৮ কোটি যুব কর্মশক্তি রয়েছে। তাদেরকে এইসব শিল্পে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। আর উৎপাদিত যে কোনো পণ্যের জন্য রয়েছে ১৬ কোটি মানুষের বিশাল একটি বাজার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছাড়াও জাহাজ নির্মাণ, রিসাইক্লিং, রাসয়নিক সার, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, কৃষি- প্রক্রিয়াকরণ, ঔষধশিল্প, সিরামিক, পাটজাত পণ্য, তথ্য প্রযুক্তি, সমুদ্রসম্পদ আহোরন, পর্যটন, চিকিৎসা উপকরণ, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে শিল্পায়িত মধ্য আয়ের একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আর ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা। তার মতে এর মধ্য দিয়েই আমারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের ইম্পেরিয়াল হলে এই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সরকার কবির উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানের পর কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে তার বৈঠক করেন। এছাড়া কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের আলোচনা সভায় যোগ দেয়া ছাড়াও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ হাউজে নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
শনিবার সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর ফাঁকে তিনি আরো কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকও করবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ছেড়ে লন্ডনে যাত্রাবিরতি দিয়ে ২ অক্টোবর ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা।