শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বর্ধমান বিস্ফোরণ: সীমান্ত বন্ধেরও নির্দেশ- সতর্কতা এদেশেও

telegraph+photo_156701
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) নাম আসায় নড়েচড়ে বসেছে দুদেশ। এঘটনায় ভারত জুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলিতে নজরদারী আরও কঠোর করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারত সরকারের তরফে শেখ হাসিনা সরকারকে সতর্ক করার পর বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ সীমান্তবর্তী জেলা যথাক্রমে উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে অন্তত ৬৫টি জঙ্গি শিবির সক্রিয়। ভারতীয় গোয়েন্দা এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) ও সিআইডির (ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) দাবি, বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন ও পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এদের মদদ দিচ্ছে। ভারতের নানা জায়গায় নাশকতা চালানোই এই জঙ্গি শিবিরগুলোর উদ্দেশ্য। গত বৃহস্পতিবার বর্ধমানে বিস্ফোরণে ২ জন নিহতের ঘটনা তদন্ত নেমে গোয়েন্দারা এমন তথ্য পেয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে কড়া সতর্কতা জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ প্রশাসন।
বর্ধমান-কাণ্ডের তদন্ত নেমে গোয়েন্দারা সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি শিবিরগুলো সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশকে ফাঁকি দিতে খোলা জায়গায় নয়, জনবহুল জায়গায় গোপনে চলছে জঙ্গিদের কার্যকলাপ। জামাতুল মুজাহিদিন ও আইএসআইয়ের মদদে পশ্চিমবঙ্গে দেশবিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে সিমি বা স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া।গোয়েন্দাদের দাবি, পাঁচটি জেলায় সংখ্যালঘু গরিব পরিবারগুলোকে ‘টার্গেট’ করছে সিমি। তারপর ওই পরিবার থেকে কিশোর, বেকার যুবকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ভিড়িয়ে নিচ্ছে নিজেদের দলে। কীভাবে গুলি চালাতে হয়, বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশী শক্তিকে সাহায্য করতে হয়, এ সব শেখানো হচ্ছে।এই সব তথ্য পাওয়ার পর সোমবার রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) জি এম পি রেড্ডি পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে স্পেশাল আইজি (সিআইডি) দয়মন্তী সেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের ডিজি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা সিল (বন্ধ) করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাজ্য পুলিশকে কড়া সতর্ক অবস্থায় থাকারও নির্দেশ দেন তিনি। এ ছাড়া রাজ্যের প্রতিটি থানাকে নাশকতা প্রতিরোধে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি জি এম পি রেড্ডি।অন্যদিকে মঙ্গলবার বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত আমিনা বিবির কাছ থেকে নগদ ৪৪ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে গোয়েন্দারা৷ মৃত শাকিল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করছে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা৷
দুর্গা পুজোর অষ্টমীর দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়, তাতে মারা যায় শামিম আহমেদ ওরফে শাকিল ও শোভন মণ্ডল। তৃতীয় ব্যক্তি হাসান সাবাহ এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তদন্তে নেমে এদের ব্যাপারে সব তথ্য জোগাড় করেছেন গোয়েন্দারা।ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, শামিম আহমেদ ওরফে শাকিল ওরফে নঈম ওরফে আজফল গাজির বাড়ি বাংলাদেশের ঢাকায়। ৩২ বছর বয়সী শাকিল বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিনের ক্যাডার। এ ছাড়াও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী, জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা, আল জিহাদ, সিমি (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া) ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ২০০৯ সালে লুকিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে শাকিল। প্রথমে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে আস্তানা গাড়ে। সেখানে জেহাদের সমর্থনে প্রচার চালায়। লোকদেখানো কাপড়ের ব্যবসা করলেও আসল কাজ ছিল পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিঘাঁটি তৈরি করে জেহাদ ছড়ানো।
বিস্ফোরণে নিহত আর এক ব্যক্তি শোভন মণ্ডল ওরফে স্বপন ওরফে সুবহানের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উত্তরপাড়া গ্রামে। তার বয়স ২২ বছর। বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হাসান সাবাহ ওরফে হাসান সাহেব ওরফে আব্দুল হাকিমের বাড়ি বীরভূম জেলার মহম্মদ বাজার থানার অন্তর্গত দেউচা গ্রামে। ২০০৭ সালে সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়।