বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আওতাধীন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) সেলে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চলতি মাসেই পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করার কথা। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাতসহ চারটি স্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাঠানো এই প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এরপরই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ পিপিপি, কনসোর্টিয়াম নাকি বিদেশি কোনো রাষ্ট্রে অনুদান নিয়ে করা হবে। আর বিমানবন্দরটি নির্মাণে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে। বিমান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় পিপিপি সেলে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে পাঠানো ওই প্রস্তাবে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, ঢাকার দোহারের চর বিলাসপুর, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন এবং লতব্দিকে। এই চারটি স্থানের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে চরজানাজাত। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই চারটি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থান কোনটি, ওই স্থানের মাটির গুণাগুণ কি রকম, ওই মাটি বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য উপযোগী কি না, সরকার যে আয়তনের বিমানবন্দর নির্মাণ করতে চাচ্ছে সে পরিমাণ জমি ওই স্থানগুলোতে আছে কি না, রাজধানী ঢাকা থেকে প্রস্তাবিত এলাকার দূরত্ব কতটুকু, যাতায়াতে কতটুকু সময় লাগবে, ন্যূনতম ৩০ মিনিটের মধ্যে ঢাকা থেকে প্রস্তাবিত বিমানবন্দর এলাকায় পৌঁছা যাবে কি না, বিমানবন্দর নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হতে পারে, আন্তর্জাতিক রুট, সড়ক, রেল, ও নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা, পুনর্বাসন, যাতায়াত খরচ এসব তথ্যসহ ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পিপিপি সেলকে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আলোকেই পিপিপি সেল চলতি মাসের মধ্যেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করতে দরপত্র আহ্বান করবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আওতাধীন ওই সেল ইতিমধ্যে তাদের কাজ অনেক দূর পর্যন্ত সম্পন্ন করেছে। প্রসঙ্গত, গত ৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ’ প্রকল্পটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম-সচিব আবুল হাসনাত জিয়াউল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আওতাধীন পিপিপি সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, চলতি মাসের শেষ দিকে পিপিপি সেল পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করবে। এরপর তাদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়া পর সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি আরও জানান, প্রথমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও এটি এখন ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকায় যেতে পারে। এ কারণেই এত বড় এই প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নির্ভর করবে পিপিপি সেলে কাছ থেকে সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। সে সময় বিমানবন্দরের জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এবং মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের বিরোধিতার কারণে এসব স্থানের কোথাও প্রকল্পের কাজ এগোয়নি।