রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনে দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন এবং তিনি দৃঢ়ভাবে অসাম্প্রদায়িত্ব চেতনা ও গণতন্ত্রের বিকাশে বিশ্বাস করতেন। আমরা তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারব, যখনই আমরা সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।’
ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বক্তব্যের শুরুতে রাষ্ট্রপতি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আবদুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধুর মতোই দুঃস্থ ও গরিব মানুষের কল্যাণে ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সকল লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আসুন, আমরা ১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে মেধা, কর্ম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলি।’ তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা, বঞ্চনা ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষে কাজ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিতে এবং বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শকে চিরতরে এদেশের মাটি থেকে মুছে ফেলতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির জনককে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আজও এ দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যারা কাজ করছেন।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী চক্রান্তকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাকর অধ্যায়। তিনি বলেন, এমনকি বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু রাসেলকেও খুনি চক্র ছাড় দেয়নি।
‘এটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। খুনি চক্র শুধু বঙ্গবন্ধুকেই খুন করেনি, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।’
গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. ফারুক খান এমপি, বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।