রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে ফের সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে দেশে যখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সে সময়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতিসংঘ। খোদ মহাসচিব দুই নেত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন, তাদের সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে কথাও বলেছিলেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও তিনি তার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছিলেন। বিশেষ দূত হিসেবে সংস্থার সহকারী মহাসচিব (রাজনৈতিক) অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে মধ্যস্থতার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তার উপস্থিতিতে দু’দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দু’দফা সংলাপ হলেও শর্তের বেড়াজালে তৃতীয় রাউন্ডেই এটি আটকে যায়। সংলাপ-সমঝোতার পথ বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধান বিরোধী জোট ও দলগুলোর বর্জনের মুখে সরকারী দল এক তরফাভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে। ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বাকি আসনগুলোটে টোকেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট পুনরায় সরকার গঠন করেন। নির্বাচন ও সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব নতুন নির্বাচনের জন্য সংলাপ ও সমঝোতার তাগিদ দিয়ে চলেছে। নির্বাচনের পরপরই তাদের তরফে অত্যন্ত স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। গতকাল জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বার্তায়ও সেই আহ্বানই জানিয়েছেন বান কি-মুন। পররাষ্ট্র দপ্তরের পাঠানো এক পৃষ্ঠার ওই বার্তায় বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন তিনি। বার্তাটি ৩১শে আগষ্টের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হলেও এটি ১৬ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেছে এমন দাবি করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, বিলম্বে পৌঁছার কারণে দিবসটি উপলক্ষে প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে তা স্থান পায়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই শুভেচ্ছা বার্তায় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ বিশেষ করে সংলাপের তাগিদ থাকায় এটি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বার্তাটি প্রকাশের দাবি উঠেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রীর গতকালের সংবাদ সম্মেলনে। তিনি তা প্রকাশ না করে জাতিসংঘের ওয়েব সাইটে দেখে নেয়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু রাত পর্যন্ত সেখানে বার্তাটি প্রকাশ পায়নি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে ওই বার্তায় বান কি-মুন বলেছেন- বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তন ও নদী ভাঙন, বাল্য বিয়ে কমিয়ে আনা, যুবকদের কর্মস্থান সৃষ্টি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে মুন তার বার্তায় বলেন, রাজনীতিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই একটি প্রক্রিয়া প্রয়োজন, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানকার মতবিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি ও সব পক্ষের মধ্যে বৃহৎ আঙ্গীকে একটি সমঝোতায় রাজনৈতিক সংলাপ জরুরি মন্তব্য করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।