শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ফের বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম

36723_f1

আবারও বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটাই প্রথম জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ। এর আগের মেয়াদে ৫ বার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। আগামী মাসেই দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে। এবার প্রথমবারের মতো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দাম বাড়ানো নয়, সমন্বয়ের চিন্তা করা হচ্ছে। আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা এবং আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর কারণ দেখিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চলছে অস্থিরতা। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে তেলের দামও অস্থির হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির জন্য ডিজেল এবং কেরোসিনে লিটার প্রতি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রায় সাত টাকা। গত বছরে এ ভর্তুকি ছিল ৫ টাকার কম। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত জুলাই থেকে তেলের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। এতে বিপিসিকে বছরে আরও ১০০০ কোটি টাকা বেশি লোকসান দিতে হবে। গত বছর
২৪০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিপিসি। সর্বশেষ গত বছরের ৩রা জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। এর মধ্যে প্রতি লিটার অকটেন পাঁচ টাকা বেড়ে হয় ৯৯ টাকা। পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ টাকা। আর ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে সাত টাকা করে বেড়ে হয় ৬৮ টাকা। বর্তমানে এই দাম কার্যকর রয়েছে। অকটেন ও পেট্রলে ভর্তুকি না দিলেও গতবার এই দুই প্রকার তেলের দাম বাড়ানো হয়। তবে ফার্নেস অয়েল ও জেট ফুয়েলের দাম অপরিবর্তিত ছিল। এর আগেও ২০১১ সালের ৩০শে ডিসেম্বর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান জানান, বিপিসি প্রতি মাসে ঘাটতির একটা হিসাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সরকার ভর্তুকির খরচ বহন করে। কিন্তু বিপিসি কখনওই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নিলে এবং বিপিসির কাছে চাওয়া হলে তখন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু মানবজমিনকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে না। এটা সমন্বয় করা হচ্ছে। ফলে কোনটার দাম বাড়তে পারে, আবার কোনটার দাম পারে কমতে। যেমন, পেট্রলের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, সমন্বয়ের বিষয়টি বাংলাদেশের এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে দেয়া হতে পারে। তবে এখনও বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকে সমন্বয় কার্যক্রম শুরু হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি খাত নিয়ে সরকারের পরিকল্পনায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সরকার বিকল্প চিন্তা না করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কুইক রেন্টাল পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে তেলের ব্যবহার বাড়ছে। হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়। সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগকে অযৌক্তিক মনে করছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সরকার বাজেটেই তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর যৌক্তিক কোন কারণ নেই। মূলত দু’টি উদ্দেশ্যে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি হচ্ছে তারা বিনা কারণে আইএমএফের পরামর্শে ঋণ নিয়েছে। সেটা সামাল দিতে দাম বাড়াতে হচ্ছে। আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে- একটি গোষ্ঠীকে দ্রুত মুনাফা দেয়ার চেষ্টা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, জ্বালানি সমস্যা সমাধানে সরকারের পরিকল্পনায় ভুল রয়েছে। সস্তা প্রক্রিয়ায় সরকার সমস্যার সমাধান করতে চায় না। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সূর্যের আলো, বাতাস, পানির ঢেউ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আমাদের গ্যাস ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সরকার সেদিকে নজর না দিয়ে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে। ‘দুর্নীতি ও লুটপাট করতে সরকার এ চিন্তা করছে’ দাবি করে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, জ্বালানি তেলে প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভর্তুকি দিতে পারছে না সরকার। আর এ খাতে প্রচুর দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। তাই জনগণের ওপর দামের বোঝা চাপানোর এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে।