বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

প্রচার শেষ, কাল ভোট, প্রস্তুত ৩ সিটি

image_215307.nirbachon

 

আর শুধু আজকের রাতটা বাকি। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যাবে। চলবে বিরতিহীন বিকেল ৪টা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন যথাসময়ে হলেও ঢাকার দুই সিটিতে এ নির্বাচন হচ্ছে ১৩ বছর পর। সে সময় অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ফলে অনেকটা একতরফাভাবে তাতে বিএনপির প্রার্থীরাই বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তবে সেনাবাহিনীকে মাঠে না নামিয়ে সেনানিবাসের মধ্যেই রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রেখে দেওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কাগজে-কলমে নির্দলীয় বলা হলেও এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন সিটিতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রায় ৮২ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সবাইকে সব ধরনের ভয়ভীতিমুক্ত থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটদানের আহ্বান জানিয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে গতকাল রবিবার থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নেওয়া শুরু হয়েছে।নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ নির্বিঘ্নে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এবার অন্য যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন। তিনি বলেন, তিন সিটির জন্য তিন ব্যাটালিয়ন সেনা সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেনা সদস্যদের সঙ্গে থাকবেন। রিটার্নিং অফিসার ডাকা মাত্রই তাঁরা কাজে নেমে পড়বেন।তিন সিটির রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে আজ সোমবার সকালেই প্রিসাইডিং অফিসারের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে মালামাল পাঠানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। রাজধানীর দুই সিটির মোট ১৯৮২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৪২৯টি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ৭১৯টির মধ্যে ৫৯৫টি ভোটকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে।রিটার্নিং অফিসাররা আরো জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়েছে সব ধরনের সরব প্রচারণা। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালার বিধি ৭৪-এর উপবিধি (১) অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা সংগঠিত বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না।’ উপবিধি ২ অনুযায়ী কোনো আক্রমণাত্মক কাজ বা বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ কেউ করতে পারবেন না। ভোটার বা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। কোনো অস্ত্র বা শক্তি প্রদর্শন বা ব্যবহার করতে পারবেন না। উপবিধি (৩) অনুযায়ী উল্লিখিত আইন ভঙ্গ করলে তিনি ন্যূনতম ছয় মাস ও অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।সেনাসদস্যরা প্রস্তুত থাকবেন ১৬ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে : গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রতি সিটিতে এক ব্যাটালিয়ান (৭৪১ জন) সেনাসদস্য ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। সেনানিবাসের অভ্যন্তরে তাঁরা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবেন। রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তাঁরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।সেনাসদস্যরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করবেন। সেনাসদস্যদের সঙ্গে ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও মোতায়েন করা হয়েছে। মিরপুর সেনানিবাসে দুজন, পোস্তগোলা সেনানিবাসে দুজন, ঢাকা সেনানিবাসে ছয়জন, চট্টগ্রামের দামপাড়া সেনানিবাসে দুজন, হালিশহর সেনানিবাসে দুজন এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসে দুজনসহ মোট ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেনাসদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা : প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তিন সিটিতে ৩৪০০ জন (১০৫ প্লাটুন) বিজিবি, ২৩৮ জন (সাত প্লাটুন) কোস্ট গার্ড, র‌্যাবের ২৬৮টি টিম বা ২১৪৪ জন সদস্য এবং ১০৫৬ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। এ ছাড়া তিনি সিটিতে আটটি করে মোট ২৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্যকে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছে।ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ : তিন সিটিতে ৮৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে ৩৪১ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। একই সঙ্গে উত্তর সিটিতে ৯ জন, দক্ষিণ সিটিতে ১৪ জন এবং চট্টগ্রামে ১০ জন মোট ৩৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।যানচলাচল বন্ধ : নির্বাচন উপলক্ষে যানবাহন চলাচলের বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিআরটিএ সংস্থাপন অধিশাখা। ১৯৮৩ সালের মোটর ভেহিক্যালস অধ্যাদেশের ৮৮ ধারা অনুযায়ী আজ ২৭ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ২৮ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ২৯ এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসি সচিবালয় থেকে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে প্রার্থী ও তাঁদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক, দেশি/বিদেশি সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক, অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। তবে জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহের প্রয়োজনে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারবে।ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি নির্দেশনা : নির্বাচনী দায়িত্ব পাওয়া ম্যজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান বলেছেন, ‘আপনাদের হৃদয়ের পরিবর্তে মাথা খাটিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ অনুষ্ঠানে ইসি কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান সিইসির বরাত দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে সেনাসদস্যদের ডাকা হবে। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। গতকাল রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।তিন সিটির প্রার্থী ১১৮০ জন : তিনি সিটিতে ৪৮ জন মেয়র পদপ্রার্থী, ২৪৮ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও ৮৮৪ জন সাধারণ কাউন্সিলরসহ মোট এক হাজার ১৮০ জন পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৬ মেয়র, ৮৯ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, ২৮১ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর; ঢাকা দক্ষিণে ২০ জন মেয়র, ৯৭ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, ৩৯০ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর; চট্টগ্রামে ১২ মেয়র, ৬২ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, ২১৩ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।ভোটকেন্দ্র, কক্ষ ও ভোটার : তিন সিটিতে মোট ভোটকেন্দ্র দুই হাজার ৭০১টি, ভোটকক্ষ ১৫ হাজার ৫৪৪টি, মোট ভোটার ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ভোটকেন্দ্র এক হাজার ৯৩টি, ভোটকক্ষ পাঁচ হাজার ৮৯২টি, ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন; দক্ষিণে ভোটকেন্দ্র ৮৮৯টি, ভোটকক্ষ চার হাজার ৭৪৬টি, ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন এবং চট্টগ্রামে ভোটকেন্দ্র ৭১৯টি, ভোটকক্ষ চার হাজার ৯০৬টি, ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন।ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রায় ৫০ হাজার : নির্বাচনে তিন সিটিতে ৪৯ হাজার ৩৩৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে দুই হাজার ৭০১ জন প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ১৫ হাজার ৫৪৪ জন, পোলিং অফিসার ৩১ হাজার ৮৮ জন। প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি কক্ষে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি কক্ষে দুজন করে পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।

 

উৎস- কালেরকন্ঠ