শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

পানির অভাবে মুরাদনগরে বোরো চাষ হুমকির মুখে

484776493_411825502f

 

মুরাদনগরে খাল খনন না হওয়ায় পানির অভাবে বোরো চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। এক সময় যে খালটি দিয়ে ঢাকা থেকে মুরাদনগর উপজেলার রাজাচাপিতলা গ্রামে সরাসরি লঞ্চযোগে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল, সে খালটি দেড় যুগেরও অধিক সময় ধরে খনন না হওয়ায় এটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ খালে পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল এখন হুমকির মুখে। এ খালটি খনন না করায় প্রয়োজনীয় পানির অভাবে কৃষকরা তাদের আশানুরূপ ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া খালে পানি না থাকায় কৃষকরা গভীর নলকূপ মালিকদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এতে গভীর নলকূপ মালিকদের চড়া মূল্য দিতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা। ফলে কৃষিনির্ভর এ এলাকার লোকজন হতাশাগ্রস্ত হয়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এদিকে ওই খালের বিভিন্ন অংশ দখলে মহোৎসবে মেতে উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে প্রবাহমান ওই খালটি ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, জেলার মুরাদনগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে উফশী ১৮ হাজার ২১০ হেক্টর ও হাইব্রিড ৯ হেক্টরসহ ১৮ হাজার ২১৯ হেক্টর জমিতে ধান রোপন করা হয়। কিন্তু উপজেলার রাজাচাপিতলা বড় খাল নামে পরিচিত নিমাইঝুড়ি খালটি খননের অভাবে পানিশূন্য হয়ে পড়ায় বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ খালটি দিয়ে স্বাধীনতার আগে রাজাচাপিতলা গ্রামে লঞ্চযোগে সরাসরি রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল, সে খালটি দীর্ঘদিন ধরে খননের অভাবে পানিশূন্য হয়ে বিস্তীর্ণ বালুচরে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সেচকার্য ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাবে এখানকার হাজার হাজার হেক্টর জমির ইরি ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কৃষকরা জানান, নিমাইঝুড়ি খালটিতে পানি না থাকায় গভীর নলকূপের পানির সাহায্য নিতে হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। গভীর নলকূপের মালিকরা সরকারি নীতিমালা অমান্য করে নির্ধারিত জমির অধিক পরিমাণে বেশি জমি সেচের আওতায় এনে সেচকার্য পরিচালনা করায় ফসলের ভালো ফলনের প্রয়োজনীয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ জমিগুলো। কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গভীর নলকূপ মালিকরা কৃষকদের থেকে জমিতে পানি সরবরাহের জন্য চড়া দাম নিচ্ছে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে তারা গভীর নলকূপের দ্বারস্থ হয়ে ফসল চাষ করছেন। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিরীহ কৃষকরা। সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালের দিকে বিএনপির শাসনামলে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলার রাজাচাপিতলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এ খালটির কিছু অংশে নামমাত্র খনন করে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে ভুয়া বিলের মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করে। দীর্ঘ এ সময়ে খনন কাজ না হওয়ায় খালটি এখন অনেকটা মৃত হয়ে পড়েছে।এদিকে খালটির বিভিন্নস্থানে দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা খালটির বিভিন্ন অংশ দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে রাজাচাপিতলা বাজার সংলগ্ন খালের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা অন্যতম। এছাড়াও পুষ্কুরনীপাড়, শ্রীরামপুরসহ আরও বিভিন্ন গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এ খাল ভরাট ও দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে দেশের ভৌগোলিক মানচিত্র থেকে পর্যায়ক্রমে খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন জানান, কে বা কারা খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে তা আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে অবৈধ দখলে থাকা ভূমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।