Saturday, November 2Welcome khabarica24 Online
Shadow

পদ্মা সেতু প্রকল্পে লোক নিয়োগ অভিযুক্ত হাদিউল সেনা হেফাজতে

26164_b2

পদ্মা সেতু প্রকল্পে লোক নিয়োগের নামে কটিয়াদীতে টাকা আদায়ের ঘটনায় সেনা সদস্য হাদিউল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। শনিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মানবজমিন-এর প্রথম পাতায় প্রকাশিত হওয়ার পর সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ সেনানিবাসের আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের মেজর শুভ ইসলাম কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া তাতারকান্দা গ্রামে এসে অভিযুক্ত সেনা সদস্য হাদিউলকে হেফাজতে নেন। পরে রাতে তাকে ময়মনসিংহ সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেনা সদস্য হাদিউল নিজেকে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত বলে জানালেও তিনি জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশনে সৈনিক হিসেবে কর্মরত বলে পুলিশ জানিয়েছে। তার সৈনিক নম্বর ১৬১৫৪৪১ (স্ট্যাটিক সিগন্যাল)। এ ব্যাপারে কটিয়াদী থানায় শনিবার পৃথক দু’টি জিডি (নম্বর ১২৯৬ ও ১৩০৩) করা হয়েছে। এসআই শাহ আলী জানান, সেনা সদস্য হাদিউল ইসলাম উপজেলার তাতারকান্দা গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি ২ মাসের ছুটিতে এসে তার চাচাতো ভগ্নিপতি জাকির মোল্লা সাগরকে নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৪ বছর মেয়াদি শ্রমিক নিয়োগের জন্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষদের প্ররোচিত করেন। এ সময় তারা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা দাবি করেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা নিরাপত্তা বীমা ও চিকিৎসার জন্য প্রথম ধাপে এবং চাকরির পর ২৫ হাজার টাকা দেয়ার কথা। সে অনুযায়ী কিছু যুবক ২০-২৫ হাজার টাকা করে হাদিউল ইসলামের কাছে জমা দেন। আদায়কৃত টাকা ও শ্রমিকদের কাগজপত্র জাকির মোল্লার কাছে হাদিউল পাঠিয়ে দেন। তবে টাকা গ্রহণের কোন রশিদ কাউকে দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান। এসআই শাহ আলী আরও জানান, জনগণ চাকরিপ্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে, তাদের কোন অভিযোগ নেই। এদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার মুুগদিয়া এলাকার মাসুদ (২১), তাতারকান্দার রতন মিয়া (৩২), চরবেতালের রুবেল (১৮), তাতারকান্দার আল আমিন (৩২), চর বেতালের হাবিবুর রহমান (২৫), তাতারকান্দার কামাল (২৫), চর বেতালের জালাল উদ্দিন (২৫) ও বেতালের মিজান (২৮)। এ ব্যাপারে কটিয়াদী থানায় শনিবার একটি জিডি (নম্বর-১৩০৩) করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে ভুক্তভোগী হগড়েকোনার আবুল কালাম, মতি মিয়া ও হাবু মিয়া জানান, তারা হাদিউলের কাছে চাকরির জন্য ৫০ হাজার করে টাকা দিয়েছেন।আলোচনায় জাকির মোল্লা সাগর: সেনা সদস্য হাদিউল ইসলামকে ময়মনসিংহ সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়ার পর এলাকায় ঘুরে-ফিরেই আসছে হাদিউলের চাচাতো ভগ্নিপতি জাকির মোল্লা সাগরের নাম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিটগড় পশ্চিমপাড়ার খুরশেদ আলমের ছেলে। বর্তমানে ঢাকার নাখালপাড়ায় বসবাস করেন। তার যোগসাজশ ও প্ররোচনায় হাদিউল ইসলাম এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের শ্রমিক নিয়োগের জন্য টাকা আদায় করেন। বর্তমানে তিনি ভারতে রয়েছেন বলে সেনা সদস্য হাদিউল শুক্রবার বিকালে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন। তবে স্থানীয়দের ধারণা, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।চাকরির প্রতীক্ষায় যুবকরা: সেনা সদস্য হাদিউল ইসলামের দেয়া চাকরির আশ্বাসে এখনও বুক বেঁধে রয়েছেন টাকা প্রদানকারী অনেক যুবক। তাদের বিশ্বাস, ওই প্রকল্পে তাদের চাকরি হবে। শনিবার সন্ধ্যায় হাদিউলকে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়ার খবরে তাদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। তবে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের পর অনেকেই চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে টাকা উদ্ধার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা জানান, তারা সরল বিশ্বাসে সেনা সদস্য হাদিউল ও তার ভগ্নিপতি জাকির মোল্লার পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। এখন তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারছেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে মাসে ২০ হাজার (ওভারটাইমসহ ৩০ হাজার) টাকা বেতনে শ্রমিক নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে সেনা সদস্য হাদিউল ইসলাম কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের যুবকের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে প্রায় কোটি টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে সেনা সদস্য হাদিউল ১৫০ জনের কাছে থেকে টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেছিলেন। এর আগে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত বলে নিজেকে পরিচয়দানকারী হাদিউল ইসলাম দুই মাসের ছুটিতে এসে এলাকায় মাইকিং করে এভাবে টাকা আদায়ের কাজে নিয়োজিত হন। বিভিন্ন অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার দৈনিক মানবজমিন-এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছাপার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় মেজর শুভ ইসলাম এসে গ্রামের বাড়ি থেকে সৈনিক হাদিউলকে ময়মনসিংহ সেনানিবাসে নিয়ে যান। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেস্ট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, একটি দুষ্টচক্র সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে লোক নিয়োগের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। লোক নিয়োগের নামে ফরম বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের হাতে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সেতু বিভাগ কোন লোক নিয়োগ করছে না বলেও যোগাযোগ মন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন।