পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে আমাদের কারও কাছে হাত পাততে হবে না। বাংলাদেশের মানুষ আর কারও কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরবে না, আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কেউ বৈদেশিক সাহায্য দিলে অবশ্যই নেবো, তবে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য কারও কাছে হাত পাতবো না। গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরপর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী চার বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৮ সালেই স্বপ্নের নির্মিত সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে সোয়া ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণকাজ এ মাসেই শুরু হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা করবো। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে পদ্মার মূল সেতু নির্মাণ কাজের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। চীনের এ কোম্পানি ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় সেতুটি নির্মাণের দরপত্র দাখিল করেছে। আধুনিক পদ্মা সেতুটি হবে দ্বিতল অর্থাৎ উপর দিয়ে যানবাহন এবং নিচ দিয়ে রেল চলাচল করবে। সংসদ নেতা জানান, ২০০১ সালেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে শুধু নির্মাণকাজই বন্ধ করে দেয়নি, স্থান পরিবর্তনেরও চেষ্টা করেছিল। ২০০৮ সালে পুনরায় আমরা ক্ষমতায় এসেই নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেই। অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই মিথ্যা অজুহাতে কোন কোন ব্যক্তিবিশেষের যোগসাজশে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ ও সরকারকে হেয় করতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। সততা ছিল বলেই কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন অবস্থায় আমি সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ওয়াদা করি, নিজস্ব অর্থায়নেই আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। এরপরও নানা ষড়যন্ত্র ও খেলা চলে। সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করেই আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করেছি। সেতুটি নির্মাণে আমাদের যথেষ্ট অর্থনৈতিক শক্তি রয়েছে, রিজার্ভও ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া, যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের রিজার্ভ রয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত ছিল। সেতুটি নির্মাণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুঃখ ঘুচে যাবে, অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নয়ন হবে। যেহেতু নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি, তাই অর্থ যোগানে শেয়ার মার্কেটের সহযোগিতা নেয়া হবে কিনা, তা পরবর্তীতে ভেবে দেখা যাবে। পদ্মা সেতু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, পদ্মা সেতুর কারিগরি ও আর্থিক দরপত্র মূল্যায়ন করে ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব গত ২২শে মে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর নির্মাণকাজ এ বছরের জুন-জুলাই মাসের মধ্যে শুরু হবে। তিনি জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণে নদী শাসন কাজের ঠিকাদার নিয়োগে কারিগরি মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। আর্থিক প্রস্তাবও চাওয়া হয়েছে, যা ২৯শে জুন দাখিল করবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ সেতু নির্মাণ করতে প্রায় ৪ বছর লেগে যাবে। ২০১৮ সালে এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আরিচায় ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণে এ সরকারের মেয়াদকালেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়ন এবং প্রাদেশিক অর্থ সংগ্রহ করে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে, বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রাংশ, কাঁচামালও সহজে এদেশে এনে উৎপাদন করতে পারবে। প্রবাসী বাঙালিদেরও বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নানারকম সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সাতটা বিভাগে সাতটি আধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।