২৫ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরুর জোর প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। চীন ও জার্মানি থেকে এখন প্রয়োজনীয় মালামাল আনা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কম্পানি লিমিটেড। মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হবে পদ্মায় স্রোত কমে এলে। প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ আছে আট হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মূল সেতু ও নদীশাসনকাজে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। এ জন্য ব্যয় হবে ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের বাইরে থাকায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মূল সেতু ও নদীশাসনের পরামর্শক নিয়োগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ১০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের লুইস বার্জার গ্রুপ ইনকরপোরেশন, ফ্রান্সের ইগিস ইন্টারন্যাশনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন ও ভারতের ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্টস অ্যান্ড টেকনোক্রেটস প্রাইভেট লিমিটেড। গত জানুয়ারিতে চূড়ান্ত দরপত্রে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবনা মিলিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পায় কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে।৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে অত্যাধুনিক স্টিল দিয়ে। সেতুটি হবে দোতলা। ওপরে থাকবে সড়ক, নিচতলায় রেলপথ। সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পদ্মায় স্রোত কমে এলে আগামী মাসে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। এতে সহযোগিতা দেবে চীনের মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন কম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পেও কাজ করছে।
মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীন ও জার্মানি থেকে মালামাল প্রকল্পের মাওয়া প্রান্তে আনতে শুরু করেছে। নির্মাণকালীন প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের থাকার জন্য মাওয়া ও জাজিরায় ২০টি বাড়িভাড়া এবং অস্থায়ী ২৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পে এ যাবৎ ভৌত অগ্রগতি ১৫ শতাংশ। সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ সব প্রাথমিক কাজই চলছে।সেতু প্রকল্পের নদীশাসনের কাজ পেয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পেরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী মাসে এ বিষয়ে সিনোহাইড্রোর সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। মাওয়ায় দেড় কিলোমিটার ও জাজিরায় ১২ কিলোমিটার নদীশাসন করা হবে।এখন প্রকল্পের মাওয়া ও জাজিরায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। জাজিরায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি হবে চার লেনের। সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে শেষ হয়েছে মাটির কাজ। এ ছাড়া স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য ১২ কিলোমিটার সার্ভিস রোড ও তিন কিলোমিটার লোকাল রোডের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। মাওয়ায় ২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মাটির কাজ চলছে। জাজিরা ও মাওয়া সংযোগ সড়ক এবং সার্ভিস এলাকা-২-এর ঠিকাদার হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার এইচসিএম কনস্ট্রাকশন। এ অংশগুলোয় পরামর্শক হিসেবে রয়েছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট।