পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষ আরো দু’তিন আগে থেকেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে।ঈদের ৩ দিনের সরকারী ছুটি আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হবে জেনেও নগরবাসী আগেভাগেই শত ভোগান্তি মাথায় নিয়ে রাজধানী ছাড়ছেন।আগামীকাল সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে শনিবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে এবং রোববার সরকারী ছুটি শেষ করে সোমবার আবার তাদের কর্মদিবসে যোগ দিতে হবে।তবে শুক্রবার চাঁদ না উঠলে সিয়াম সাধনার মাস রমজান ৩০ রোজা বা ৩০ দিন পূর্ণ করবে। সে ক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল ফিতর শনিবারের পরিবর্তে আগামী রোববার উদযাপিত হবে। সরকারী ছুটিও এ ক্ষেত্রে একদিন বেড়ে যাবে। তখন সোমবারও সরকারী ছুটি থাকবে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে কর্মদিবস।এবার ঈদের ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পরে যাওয়ায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২দিন ছুটি কমে গেছে। তবে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের উৎসবকে বর্ণিল করতে ঈদের ছুটির সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে বেসরকারী কোম্পানিগুলো তাদের নিজ নিজ পলিসি অনুযায়ী ছুটির ঘোষণা দিয়েছে।রাজধানীবাসী মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ধর্মীয় এ উৎসবে সামিল হতে টিকেটযুদ্ধ শেষে এখন বাড়ি ফেরার যুদ্ধে সামিল হয়েছে। যাত্রাপথে শত ভোগান্তির কথা জেনেও প্রিয়জনের সান্নিধ্যের প্রত্যাশায় তা আমলে নিচ্ছেন না ঘরমুখো মানুষগুলো।রাজধানীর বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশন, এমনকি লঞ্চ টার্মিনালে গিয়েও দেখো গেছে ঘরমুখো বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢল। সবাই গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছেন। তাদের চলে যাওয়ায় ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা।ট্রেনে বাড়ি ফিরতে যাওয়া মানুষদের ভিড়ে সকাল থেকেই মুখরিত কমলাপুর রেলস্টেশন। ট্রেন স্টেশনে পৌঁছতে না পৌঁছতেই উঠার প্রতিযোগিতা শুরু হয় যাত্রীদের। ভিড়ের কারণে ট্রেনে উঠতেও ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে যাত্রীদেরা। বাড়িফেরা বলে কথা, তাই কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারির পরও ট্রেনের ছাদে উঠছে মানুষ।পরিবার-পরিজন নিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে। মুহূর্তেই ভরে যাচ্ছে প্রত্যেকটি গাড়ি। সরকারী ছুটি আগামীকাল থেকে শুরু হলেও ঈদকে সামনে রেখে কয়েক দিন আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের জন্য কাউন্টারের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুণতে দেখা গেছে হাজারও মানুষকে। নগরীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ঈদযাত্রীদের ভিড় ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আগামীকাল চাঁদ রাত হলে যাত্রীদের এ ভিড় আরো বাড়বে বলে বাস কাউন্টারগুলো থেকে জানা গেছে।আজ দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, আগের যেকোন বারের চেয়ে এবারকার ঘরমুখো যাত্রীদের ভ্রমণ অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক এবং মহাসড়কগুলোর অবস্থা ভালো বলে যাতায়াত অনেক বেশি সুবিধাজনক হচ্ছে। যাত্রীদের গাড়ি পেতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে বিবেচনায় এ ঈদে ৫০৬টি বিআরটিসি বাস চালু আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এছাড়া বিআরটিসি’র আরও ৫৫টি বাস রিজার্ভ আছে, প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে সেগুলো কাজে লাগানো হবে।টিকিট কাটার জন্য কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ানো যাত্রী ও কাউন্টারের টিকেট বিক্রয় কর্মীদের সাথেও মন্ত্রী আলাপ করেন। বাসের সিডিউল সময়ে ছাড়ার বিষয়টি যাত্রীদের কাছ থেকে জানার পাশাপাশি টিকেট কালোবাজারীর বিষয়েও তিনি যাত্রী ও টার্মিনালের আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে খোঁজ-খবর করেন।সদরঘাট টার্মিনালও এখন লোকে লোকারণ্য। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে তারা নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে সমন্বিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালন, নৌবন্দরগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং পকেটমার, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।বিআইডব্লিউটিএ সূত্র আরো জানায়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করতে এবং বিশেষ করে ছাদে যাতে লোকজন না নেয়া হয়, সে ব্যাপারে লঞ্চ মালিকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে যেন প্রত্যেক যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট রাখা হয়, সেজন্য মালিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।