শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

দেশে ফিরতে না পারলে ভারতেই থাকব

pic-21_139152
এখন পানি ঘোলা। একটু পরিষ্কার হলেই সব খুলে বলতে চান সদ্য অপসারিত বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় আরাম-আয়েশে জীবন কাটাতে পারতাম। তার পরও আমি কলকাতায় চলে এলাম। আমি বাংলাদেশেও যাব। পরিস্থিতিটা একটু স্বাভাবিক হোক।’ তবে এই রাজনীতিবিদ এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন, যদি একান্তই দেশে ফিরতে না পারেন তাহলে আপাতত ভারতেই থাকতে চান তিনি।
বাঘা সিদ্দিকী বা কাদের সিদ্দিকীর পরিবারের সদস্য হয়েও কেন এমন বেফাঁস কথা বললেন, এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য- কয়েকজনকে নিয়ে নিতান্তই বৈঠকি মেজাজে অনেক কথার মধ্যে একটি কথা ছিল, যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এখানে মূত্রত্যাগ করিবে না। করিলে জরিমানা- কথাটি দুইভাবেই ব্যবহার করা যায়, এই কথা বলে লতিফ সিদ্দিকী দাবি করেন, তিনি যা বলেছেন, তার আগে-পিছের কথাগুলো পত্রপত্রিকায় আসেনি। বরং ভুল ব্যাখা করা হয়েছে। গতকাল কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে প্রায় ২২ মিনিটের টেলিফোন সংলাপে লতিফ সিদ্দিকী এসব কথাবার্তা বলেন।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কলকাতায় কোথায় আছেন, ঠিকানা বললে আপনার সঙ্গে দেখা করব। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি আছি কলকাতায়, তবে এখন কথা বলব না।’
কিন্তু আপনাকে নিয়ে বাংলাদেশে বিস্তর জল ঘোলা হয়েছে। আপনার নিজের নিশ্চয় কোনো বক্তব্য আছে। এভাবে আপনি পবিত্র হজ নিয়ে, প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন কি- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কী বলেছি, না বলেছি সেটি কেন বলব। যা বলেছি তার সবটা আসেনি, সেটি আপনাকে বলতে পারি।’
তাহলে কী বলেছেন বলুন, জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কয়েকজন পরিচিতকে নিয়ে একটি ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনায় কিছু কথা বলেছিলাম। সেই কথাগুলোর মাঝখান থেকে বিতর্কিত অংশটাই প্রচার করা হয়েছে।’ এ সময় তিনি বাংলাদেশের দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার নাম উল্লেখ করে সেগুলোকে ইতর জাতীয় প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্পর্কেও তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
আপনি বঙ্গবীর পরিবারের সদস্য হয়েও কিভাবে মিডিয়াকে আক্রমণ করেছেন- এ প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমি কোনো বঙ্গবীর পরিবারের সদস্য নই। আমাকে কোনো দিনও কাদের সিদ্দিকীর পরিচয়ে চলতে হয়নি।’
মন্ত্রিত্ব ও দল থেকে অপসারণ এবং বহিষ্কার বিষয়ে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর জবাব, ‘সব কিছুই জানি, বুঝি। কিন্তু কিছুই বলার নেই। জানেন আমি এখন রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটাই আউড়াই- বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা…। কেউ আমাকে রক্ষা করুক, এটা আমি চাই না। আমার রক্ষাকর্তা আমার নিজের সততা। আমি জানি আমি কী বলেছি।’ লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার এই কথা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বেশ বিব্রত হয়েছেন। তাই তাঁর যেকোনো সিদ্ধান্ত আমার মাথা পেতে নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মুখ শেখ হাসিনা। ফলে তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তাঁকে বিব্রত করে এমন কাজ আমি করিনি। তবে এও জেনে রাখুন, সময় হলে সবটাই খুলে বলব। আপনি নিজেই বলছিলেন, বাংলাদেশে এখন বেশ জল ঘোলা রয়েছে। তাই জলটা একটু পরিষ্কার হোক- সবই জানতে পারবেন।’
এ ধরনের বক্তব্যের জন্য আপনি লজ্জিত বা ক্ষমাপ্রার্থী কি না- কালের কণ্ঠের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধই করিনি। কেন ক্ষমা চাইব।’ তবে দীর্ঘ এ ফোনালাপ নিয়ে কোনো খবর না করার অনুরোধ জানান লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বুধবার তিনি কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলবেন। কলকাতায় কোথায় আছেন সেই ঠিকানাও দেবেন সেদিন। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী নিজেই তাঁর দেওয়া এই ওয়াদা ভাঙেন সন্ধ্যায় বিবিসিতে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়ে। ফলে কালের কণ্ঠের নেওয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারটি শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে সকাল থেকেই কলকাতার বিভিন্ন হোটেলে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানী টিম। যাওয়া হয় তাজবেঙ্গল, আইটিসি সোনার, গ্র্যান্ড ওবেরয়সহ কলকাতার নামি সব হোটেলে। কিন্তু কোথাও তাঁর সন্ধান মেলেনি।
এরপর অপসারিত এ মন্ত্রীর খোঁজ বের করতে টাঙ্গাইলের স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের সাহায্য নেওয়া হয়। তাঁরাই প্রথমে লতিফ সিদ্দিকীর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নম্বর দেন কালের কণ্ঠকে। ওই বন্ধুকে পুরো ঘটনা বলার পর তিনিই কলকাতায় তাঁর গ্রামীণফোনের রোমিং নম্বরটি কালের কণ্ঠের প্রতিবেদককে দেন। ওই রোমিং নম্বরে দুই দফায় কল করার পর ফোন ধরেন লতিফ সিদ্দিকী। এরপর এ কথোপকথন হয়।
গতকাল ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় দেওয়া তাঁর একটি কথার ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন লতিফ সিদ্দিকী। বলেন, ‘আমি বলেছিলাম পা ছুঁয়ে সালাম করব। সেখানে লেখা হয়েছে আমি পা টিপে দেব। এটা কেমন সাংবাদিকতা?’
বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকার : সদ্য মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি দেশে ফিরতে চান, তবে এ ব্যাপারে দল এবং সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। তবে তিনি এও বলেন, যদি একান্তই দেশে ফিরতে না পারেন, তাহলে তিনি আপাতত ভারতেই থেকে যেতে চান।
হজ সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের পর বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর গত রবিবার মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়। লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন। গতকাল বিবিসিকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেছেন, দল ও সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য তিনি অনুতপ্ত; কিন্তু যে বক্তব্যের জের ধরে বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে এ বিতর্ক শুরু হয় সে বিষয়ে তাঁর কোনো অনুশোচনা নেই।
লতিফ সিদ্দিকী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘরোয়া আড্ডায় দেওয়া তাঁর বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিকভাবে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। এই নেতা আরো বলেন, তিনি বাংলাদেশেই ফিরে যেতে চান; কিন্তু দেশে ফিরে গেলে দল ও সরকারকে আরো বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা হবে কি না, তা নিয়েও তিনি চিন্তিত।