হাবিবুর রহমান খান ও মাহফুজ আলম মুনী, নাটোর থেকে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নব্য হিটলার আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘অনেকে বলেন, এ সরকার স্বৈরাচার। কিন্তু না। আমি বলতে চাই, দেশে নব্য হিটলারের জন্ম হয়েছে। হিটলারি কায়দায় দেশে মানুষ গুম-খুন করছে, যা মর্জি তা-ই করছে।’
শনিবার নাটোরে এনএস সরকারি কলেজ মাঠে বিশাল জনসভায় বিএনপি প্রধান এসব কথা বলেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবং ‘গুম-খুন-গুপ্তহত্যা-দুর্নীতিসহ সরকারের অপশাসনের’ প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোট এই জনসভার আয়োজন করে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার শুধু জনগণ থেকেই নয়, পৃথিবীর সব দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ নেই। আমাদের এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা। এ শয়তান ও হিটলার সরকারকে বিদায় করা হবে। তাহলেই দেশে আবার সুশাসন ও শান্তি ফিরে আসবে।’
এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আর কত নির্র্যাতন সহ্য করবেন? মায়ের চোখে পানি দেখবেন? গর্জে উঠুন। এখন গর্জে ওঠার সময়। আমি এখনই কিছু বলতে চাই না, তবে যখন সময় হবে, ডাক দেব। জীবনের শেষ সময়ে বলতে চাই, আরও একবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করি। আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। যে কর্মসূচি দেব, প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তা পালন করতে হবে।’
দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, গ্যাস-পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশী-বিদেশী কেউ বিনিয়োগ করতে আসছে না। এর সঙ্গে রয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের চাঁদাবাজি। মানুষ সেজন্য বিনিয়োগ করতে চায় না। এছাড়া ব্যাংকের সুদের হার বেশি।
এ সময় তিনি দৈনিক যুগান্তরের একটি খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিনিয়োগের ১১ বাধা। গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের পথে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কোথাও বিদ্যুৎ নেই। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। বিদ্যুৎ যায় আর আসে। বিদ্যুতের কারণে নাটোরের জনসভা সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব হয়নি। সরকার ইচ্ছা করে নাটোরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের এসব ব্যর্থতার কারণে তারা মিছিল মিটিং করেন। কিন্তু আমাদের তাও করতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ জনগণকে জানাতে দিতে চায় না। সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। পুরো দেশকে তারা এখন কারাগারে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায়। কারণ তারা ভাবে, ক্ষমতা ছাড়লে কী না কী হয়! আন্দোলনের কথা শুনলেই সরকার ভয় পায়। সরকার বোমাবাজি, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে আমাদের শরিকদের নাম দেয়। হাসিনা গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ২৮ অক্টোবর মানুষ হত্যা করে তার ওপর নৃত্য করেছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাদের অধীনে ভোট হলে শেষ রাতে ভোটের বাক্স ভরে রাখবে। বিগত উপজেলা ও উপনির্বাচনেও তারা নানা কারচুপি করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দেখেন কী হয়। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ঢাকার বাইরে এটি খালেদা জিয়ার সপ্তম জনসভা। সর্বশেষ ২৩ অক্টোবর নীলফামারী জনসভায় বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। বিকাল সোয়া ৩টায় নাটোর সার্কিট হাউস থেকে সরাসরি জনসভাস্থলে যান খালেদা জিয়া। মঞ্চে দু’হাত নেড়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। উপস্থিত জনতা খালেদা জিয়ার অভিবাধন গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে দেন। বিকাল চারটা ২৩ মিনিটে জনসভায় বক্তব্য শুরু করেন। প্রায় ৫০ মিনিট বক্তব্যে দুর্নীতি, দলীয়করণ, বিনিয়োগে মন্দা, ব্যাংকে সুদের উচ্চ হার, আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ সরকারের নানা সমালোচনা করেন।
জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকে নাটোর সদর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, লালপুর, সিংড়া ও নলডাঙ্গা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। নাটোর ছাড়াও বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগ দেন। দুপুরের আগেই পুরো মাঠ ভরে উত্তর দিকে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক, পূর্বদিকে দক্ষিণ বরগাদা সড়ক পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসভা উপলক্ষে শতাধিক মাইক স্থাপন ও নানা রঙে তোরণ নির্মাণ করা হয়।
নাটোরের প্রবেশপথ গুরুদাসপুরের কাছিকাটা টোলপ্লাজা থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের পথে পথে ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। রাস্তার পাশে দলীয় পতাকা টানানো হয়। জনসভা উপলক্ষে মঞ্চসহ চারপাশে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বক্তব্যের শুরুতেই সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুসহ বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী ক্যাডারদের গুম-খুনের সঙ্গে এখন ডিবি কনট্রাক্ট কিলিং করছে। তারা মানুষ খুন করে আর টাকা নেয়। র্যাব ও পুলিশ দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে। তাদের আবার জেলখানায় জামাই আদরে রাখা হচ্ছে।
র্যাব বন্ধের পাশাপাশি ওই সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের গ্রেফতার দাবি করেন তিনি।
এ অবস্থা চলতে পারে জনতার কাছে জানতে চাইলে তারা জবাব দেন, ‘না’। এ সময় তিনি বলেন, আরও জোরে বলেন। প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, তিনি কানে কম শোনেন, চোখে কম দেখেন। আবার আদালত তাকে ‘রংহেডেড’ বলেছেন। কানে কম শুনলে, চোখে কম দেখলে এবং মাথায় গণ্ডগোল থাকলে কি দেশ চালানো যায়?
প্রধানমন্ত্রীর আরব আমিরাত সফর ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য জয় করে আসবেন। কিন্তু জয় করতে পারেননি। অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এবার ঢাকায় আন্দোলন ব্যর্থ হলে নাটোর থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকা ঘেরাও করা হবে।
লাগাতার হরতালের হুমকি : জামায়াতের নায়েবে আমীর মজিবুর রহমান সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেন, তারা জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতে নেতাদের হত্যা করছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে।
আজ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, হরতাল চলছে। চলবে। যদি নিজামীর মতো আর একটা রায় দেয়া হয় তবে লাগাতার হরতাল চলবে। জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান পটল, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে জেলা সহসভাপতি সাবিনা ইয়াসমীন ছবি, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী গোলাম মোর্শেদ, সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুর স্ত্রী মহুয়া নূর বক্তব্য রাখেন।
জোট নেতাদের মধ্য জামায়াতে ইসলামীর ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জনসভা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন কিছুক্ষণ সার্কিট হাউসে অবস্থান করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে নাটোরের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নব্য হিটলার আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘অনেকে বলেন, এ সরকার স্বৈরাচার। কিন্তু না। আমি বলতে চাই, দেশে নব্য হিটলারের জন্ম হয়েছে। হিটলারি কায়দায় দেশে মানুষ গুম-খুন করছে, যা মর্জি তা-ই করছে।’
শনিবার নাটোরে এনএস সরকারি কলেজ মাঠে বিশাল জনসভায় বিএনপি প্রধান এসব কথা বলেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবং ‘গুম-খুন-গুপ্তহত্যা-দুর্নীতিসহ সরকারের অপশাসনের’ প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোট এই জনসভার আয়োজন করে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার শুধু জনগণ থেকেই নয়, পৃথিবীর সব দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ নেই। আমাদের এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা। এ শয়তান ও হিটলার সরকারকে বিদায় করা হবে। তাহলেই দেশে আবার সুশাসন ও শান্তি ফিরে আসবে।’
এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আর কত নির্র্যাতন সহ্য করবেন? মায়ের চোখে পানি দেখবেন? গর্জে উঠুন। এখন গর্জে ওঠার সময়। আমি এখনই কিছু বলতে চাই না, তবে যখন সময় হবে, ডাক দেব। জীবনের শেষ সময়ে বলতে চাই, আরও একবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করি। আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। যে কর্মসূচি দেব, প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তা পালন করতে হবে।’
দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, গ্যাস-পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশী-বিদেশী কেউ বিনিয়োগ করতে আসছে না। এর সঙ্গে রয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের চাঁদাবাজি। মানুষ সেজন্য বিনিয়োগ করতে চায় না। এছাড়া ব্যাংকের সুদের হার বেশি।
এ সময় তিনি দৈনিক যুগান্তরের একটি খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিনিয়োগের ১১ বাধা। গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের পথে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কোথাও বিদ্যুৎ নেই। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। বিদ্যুৎ যায় আর আসে। বিদ্যুতের কারণে নাটোরের জনসভা সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব হয়নি। সরকার ইচ্ছা করে নাটোরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের এসব ব্যর্থতার কারণে তারা মিছিল মিটিং করেন। কিন্তু আমাদের তাও করতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ জনগণকে জানাতে দিতে চায় না। সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। পুরো দেশকে তারা এখন কারাগারে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায়। কারণ তারা ভাবে, ক্ষমতা ছাড়লে কী না কী হয়! আন্দোলনের কথা শুনলেই সরকার ভয় পায়। সরকার বোমাবাজি, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে আমাদের শরিকদের নাম দেয়। হাসিনা গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ২৮ অক্টোবর মানুষ হত্যা করে তার ওপর নৃত্য করেছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাদের অধীনে ভোট হলে শেষ রাতে ভোটের বাক্স ভরে রাখবে। বিগত উপজেলা ও উপনির্বাচনেও তারা নানা কারচুপি করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দেখেন কী হয়। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ঢাকার বাইরে এটি খালেদা জিয়ার সপ্তম জনসভা। সর্বশেষ ২৩ অক্টোবর নীলফামারী জনসভায় বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। বিকাল সোয়া ৩টায় নাটোর সার্কিট হাউস থেকে সরাসরি জনসভাস্থলে যান খালেদা জিয়া। মঞ্চে দু’হাত নেড়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। উপস্থিত জনতা খালেদা জিয়ার অভিবাধন গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে দেন। বিকাল চারটা ২৩ মিনিটে জনসভায় বক্তব্য শুরু করেন। প্রায় ৫০ মিনিট বক্তব্যে দুর্নীতি, দলীয়করণ, বিনিয়োগে মন্দা, ব্যাংকে সুদের উচ্চ হার, আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ সরকারের নানা সমালোচনা করেন।
জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকে নাটোর সদর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, লালপুর, সিংড়া ও নলডাঙ্গা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। নাটোর ছাড়াও বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগ দেন। দুপুরের আগেই পুরো মাঠ ভরে উত্তর দিকে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক, পূর্বদিকে দক্ষিণ বরগাদা সড়ক পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসভা উপলক্ষে শতাধিক মাইক স্থাপন ও নানা রঙে তোরণ নির্মাণ করা হয়।
নাটোরের প্রবেশপথ গুরুদাসপুরের কাছিকাটা টোলপ্লাজা থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের পথে পথে ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। রাস্তার পাশে দলীয় পতাকা টানানো হয়। জনসভা উপলক্ষে মঞ্চসহ চারপাশে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বক্তব্যের শুরুতেই সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুসহ বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী ক্যাডারদের গুম-খুনের সঙ্গে এখন ডিবি কনট্রাক্ট কিলিং করছে। তারা মানুষ খুন করে আর টাকা নেয়। র্যাব ও পুলিশ দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে। তাদের আবার জেলখানায় জামাই আদরে রাখা হচ্ছে।
র্যাব বন্ধের পাশাপাশি ওই সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের গ্রেফতার দাবি করেন তিনি।
এ অবস্থা চলতে পারে জনতার কাছে জানতে চাইলে তারা জবাব দেন, ‘না’। এ সময় তিনি বলেন, আরও জোরে বলেন। প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, তিনি কানে কম শোনেন, চোখে কম দেখেন। আবার আদালত তাকে ‘রংহেডেড’ বলেছেন। কানে কম শুনলে, চোখে কম দেখলে এবং মাথায় গণ্ডগোল থাকলে কি দেশ চালানো যায়?
প্রধানমন্ত্রীর আরব আমিরাত সফর ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য জয় করে আসবেন। কিন্তু জয় করতে পারেননি। অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এবার ঢাকায় আন্দোলন ব্যর্থ হলে নাটোর থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকা ঘেরাও করা হবে।
লাগাতার হরতালের হুমকি : জামায়াতের নায়েবে আমীর মজিবুর রহমান সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেন, তারা জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতে নেতাদের হত্যা করছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে।
আজ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, হরতাল চলছে। চলবে। যদি নিজামীর মতো আর একটা রায় দেয়া হয় তবে লাগাতার হরতাল চলবে। জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান পটল, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে জেলা সহসভাপতি সাবিনা ইয়াসমীন ছবি, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী গোলাম মোর্শেদ, সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুর স্ত্রী মহুয়া নূর বক্তব্য রাখেন।
জোট নেতাদের মধ্য জামায়াতে ইসলামীর ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জনসভা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন কিছুক্ষণ সার্কিট হাউসে অবস্থান করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে নাটোরের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া।