জাতীয় দল থেকে নিষিদ্ধ আর বিতর্কিত হয়ে বের হয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ফিরলেন ওয়ানডে দলের সহ-অধিনায়ক হয়ে। তিনি দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে দর্শক পিটিয়ে ও ড্রেসিং রুম ছেড়ে বাইরে এসে হয়েছিলেন ৬ মাসের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ। এরপর তার আপিলের ভিত্তিতে শাস্তি সাড়ে তিন মাস কমানো হয়। ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন দেশের বিতর্কিত ও নিষিদ্ধ ক্রিকেটার। এরপর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন। দলের সঙ্গে আছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে। সেখানে বসেই পেলেন সু-সংবাদটি। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিনি ওয়ানডের নতুন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সঙ্গ দেবেন। অন্যদিকে মুশফিকুর রহীমকে ওয়ানডের দায়িত্ব কমিয়ে শুধু টেস্টের অধিনায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। আর সহ-অধিনায়ক হিসেবে আছেন আরেক তারকা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। গতককাল বিসিবি’র ৯ম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দুই ফরমেটে দুই অধিনায়কের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বিষয়ে গতকাল বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমাদের প্রধান বিষয় ছিল অধিনায়কত্ব। বোর্ড এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ঠিক করেছি জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ওয়ানডেতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন মাশরাফি, তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাকিব আল হাসান। টেস্টে মুশফিকের সঙ্গী হিসেবে থাকছে তামিম ইকবাল।’
মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘মাশরাফিকে দায়িত্ব দেয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ ছিল। সবচেয়ে বড় কারণ যেটা আমরা মনে করি যে, মুশফিক হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান। এবং আমরা মনে করি বাংলাদেশের অনেকের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান সে এবং তার আরও উন্নতি করা সম্ভব। একাধারে অধিনায়কত্ব, উইকেট কিপিং ও ব্যাটিং করা এটা অত্যন্ত কঠিন। এজন্য আমরা জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে তাকে বিবেচনা করেছি। তাকে আমরা চাপমুক্ত রাখতে চেয়েছি। দেখতে চাই সে কিভাবে খেলে। আমরা আশা করি এর প্রভাব আমরা জিম্বাবুয়ে সিরিজে পাবো।’
অন্যদিকে সাকিব আল হাসানকে সহ-অধিনায়ক হিসেবে দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তি তুলে নাজমুল হাসান বলেন, ‘এশিয়ান গেমসে যাওয়ার আগেও সাকিবের সঙ্গে আলাদা কথা বলেছি। তামিম ও মাশরাফির সঙ্গে বসেছি। ওদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওরা সবই জানে। কিন্তু ওদেরকে আরেকবার মনে করিয়ে দিলাম। ওদেরকে মনে করালাম ওরা সিনিয়র খেলোয়াড়, ওরা আমাদের সেরা ক্রিকেটার। তাদের নিজেদের সমস্ত কিছু, আচার-ব্যবহার, টিম স্পিরিট সবকিছু সিনিয়রদের উপর বেশি নির্ভরশীল। আমার ধারণা একটা ভুল বোঝাবুঝি মানুষের মধ্যে ছিল, যারা ক্রিকেটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না তাদেরকে জানাতে চাই, সাকিবের বিরুদ্ধে আমাদের বোর্ডের কোন অভিযোগ ছিল না। শুধুমাত্র তার ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ ছিল। আমরা মনে করছি সাকিবের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত মাঠে ওর আচরণ না দেখতে পাবো ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছু জানাতে পারছি না। ওকে সাধারণ খেলোয়াড় হোক অথবা সহ-অধিনায়ক করা হোক সে আমাদের নজরে থাকবে। কাজেই ওকে এই জিনিসটা মাথায় রাখতে হবে। আমাদের যেই আস্থা ও বিশ্বাস তার উপর আছে আশা করছি সে সেটা রাখবে।’
গতকালের বোর্ড মিটিংয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সফলতা আর ব্যর্থতার রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা। বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘আজকের সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে পারফরমেন্স রিপোর্ট আলোচনা করতে। আমাদের সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটার ক্রিকেট পরিচালনা কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খান আমাদের রিপোর্ট দিয়েছেন; আরেক পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয় গিয়েছিলেন, তার অবজারভেশন ছিল। আমরা আমাদের হেড কোচের রিপোর্টও পেয়েছি। যে সমস্যাগুলো পেয়েছি সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেই ব্যাপারে আলোচনা করেছি আমরা। কিন্তু সেগুলো আমরা প্রকাশ করতে পারবো না। কারণ আমাদের এই রিপোর্টগুলো হচ্ছে অভ্যন্তরীণ গোপন বিষয়।’
মাশরাফি আনন্দিত
‘আবার অধিনায়ক নির্বাচিত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সেই সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার উপর আস্থা রাখার জন্য। তবে এই মুহূর্তে আমার সব মনোযোগ এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটে। একই সঙ্গে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার সব সতীর্থকে সব সময় আমার পাশে থাকার জন্য। এবং সেই সঙ্গে আমি দেশবাসীর কাছে আমাদের সাফল্যের জন্য শুভকামনা প্রার্থনা করছি।’
মাশরাফি-সাকিবের অধিনায়কত্ব একই সুত্রে বাঁধা
মাশরাফি বিন মতুর্জা ও সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্ব যেন একই সুত্রে বাঁধা। মাশরাফি অধিনায়ক হিসেবে বিদায় নেয়ার পর থেকে দলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফি বিন মতুর্জার টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০১ সালে। তবে অধিনায়ক হিসেবে দলে মাশরাফির অভিষেক হয় ২০০৯ সালে। মাত্র ১টি ম্যাচেই প্রথম ইনিংসেই ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে তার টেস্ট অধিনায়কত্ব শেষ হয়ে যায়। এরপর সেই সিরিজেই দলের সহ- অধিনায়ক সাকিব দ্বিতীয় টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। এরপর দলের হয়ে ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে ২০১০ সালে তার যাত্রা শুরু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাশরাফি। মাত্র ৭টি ওয়ানডে ম্যাচেই দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। শেষ ওয়ানডে নেতৃত্বে দেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এরপর ইনজুরিতে তার আর মাঠে নামা হয়নি অধিনায়ক হিসেবে। এরপর থেকেই ওয়ানডে দলেরও নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন সাকিব আল হাসান। গতকাল তিনি বিসিবি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবারও অধিনায়ক হিসেবে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিবেন মাশরাফি বিন মতুর্জা। তবে এবার তিনি নেতৃত্ব দেবেন শুধু ওয়ানডে দলের। আর তার সঙ্গে সহ-অধিনায়ক হিসেবে দলে থাকবেন সাকিব আল হাসান। মাশরাফি অবশ্য ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর টি- টোয়েন্টি বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছে এই বছরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দু’টি ম্যাচে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ২০০৭ সালে টেস্ট ও ২০০৬ সালে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। এই পর্যন্ত ৪৭টি ওয়ানডে ৯টি টেস্ট ও ৪টি টি- টোয়েন্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব।